25.9 C
Dhaka
Friday, August 22, 2025

লিড নিউজ

মাসকান্দায় বাস কাউন্টারে দুর্বৃত্তদের হামলা: চার ঘণ্টা বন্ধ ছিল মহাসড়কের বাস চলাচল

আরও পড়ুন

পুলক শেখ, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্র মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড মঙ্গলবার দুপুরে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সাক্ষী হয়। ঢাকা ও ময়মনসিংহের মধ্যে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচলের মূল এই টার্মিনালে দুর্বৃত্তদের একদল আকস্মিক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এর ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের জেলাগামী বাস চলাচল প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ থাকে। হঠাৎ এ অচলাবস্থায় নাকাল হন যাত্রীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে মোটরসাইকেলে আসা শতাধিক দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইউনাইটেড পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে আক্রমণ চালায়। তারা কাউন্টারের কাচ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে, টাকা লুট করে এবং কর্মীদের আতঙ্কিত করে তোলে। একপর্যায়ে তারা স্লোগান দেয়—“আওয়ামী লীগ নেতা শামীমের কোনো বাস চলবে না।” হঠাৎ এমন সহিংসতায় টার্মিনালজুড়ে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে, অনেক যাত্রী ছুটোছুটি শুরু করে দেন।

ঘটনার পরপরই পরিবহন শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যেকোনো ধরনের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু রাজধানী নয়, ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট ও পূর্বধলা রুটেও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
অগ্রিম টিকিট থাকা অনেক যাত্রী নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে চিকিৎসা, ভর্তি পরীক্ষা ও জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা সর্বাধিক বিপাকে পড়েন।

একজন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সকাল থেকে অপেক্ষা করছি ঢাকা যাওয়ার জন্য। টিকিটও কেটে রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ সব বন্ধ হয়ে গেল। এখন কীভাবে যাবো বুঝতে পারছি না।”

শ্রমিকরা জানান, হামলার ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করায় বাস চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। মাসকান্দা কাউন্টারের এক কর্মী বলেন, “হঠাৎ দলবদ্ধ হয়ে আসা লোকজন সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল। সবাই ভয়ে পালিয়ে গেল।”

তবে পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে প্রথমদিকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পরে জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ আলম সাংবাদিকদের জানান, “আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। কে বা কারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তা এখনো নিশ্চিত নই। তবে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান খুঁজব।”

ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম জানান, “পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, তদন্ত শেষে দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ঘটনাটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে জেলা প্রশাসক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন।

এই ঘটনার কারণে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে স্থবিরতা নেমে আসে। যাত্রীদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহন খাতের স্বাভাবিক কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে যদি এমন হামলা হয়ে থাকে, তবে তা পরিবহন খাতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা শুধু গণপরিবহনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও বাড়ায়। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

বিকেলের দিকে পুলিশি হস্তক্ষেপ ও প্রশাসনিক আশ্বাসে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর থেকে সীমিত আকারে বাস চলাচল শুরু হলেও এখনো পূর্ণমাত্রায় স্বাভাবিক হয়নি। যাত্রীরা আশা করছেন, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান বের হবে এবং সড়কে আবারও স্বাভাবিক গতিশীলতা ফিরে আসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর