জলিল রহমান জনি
সিরাজগঞ্জ বেলকুচির ছেলে মাহিন সরকারকে জাতীয় নাগরিক পার্টি গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে, ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দলের যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকারকে বহিষ্কার করেছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে আটটার দিকে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দফতরের দায়িত্বে) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কারণে মাহিন সরকারকে তার পদ ও সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলীয় আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নির্দেশক্রমে গৃহীত এই বহিষ্কারাদেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
দলীয় সূত্র জানায়, সোমবার দুপুরে মাহিন সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বিষয়টি দলের অনুমোদন ছাড়া এবং একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে হওয়ায় তা সরাসরি শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে গণ্য করেছে এনসিপি।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির দফতর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, “আমাদের দলের প্রত্যেক সদস্যকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হয়। অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। তাই সংগঠনকে সুশৃঙ্খল রাখতে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।” তবে বহিষ্কৃত নেতা মাহিন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
তরুণ রাজনীতিক মাহিন সরকার দীর্ঘদিন ধরে এনসিপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দায়িত্ব পান। সংগঠনভিত্তিক কর্মকাণ্ডে তার গতিশীল ভূমিকা ও তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তার কারণে তাকে দলের অন্যতম সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া তার রাজনৈতিক অবস্থানকে সংকটে ফেলে দিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি দেশের নতুন উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর একটি। তুলনামূলকভাবে নবীন এ রাজনৈতিক দলটি সংগঠনশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তোলায় গুরুত্ব দিয়ে আসছে। দলটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুশাসনের পক্ষে সোচ্চার থাকার অঙ্গীকার করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ফলে দলের ভেতরে শৃঙ্খলা ও ঐক্য ধরে রাখা নেতৃত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবসময়ই তাৎপর্যপূর্ণ। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তরুণ নেতাদের উত্থান ঘটে থাকে, যা জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলে। মাহিন সরকারের মতো কেন্দ্রীয় দলের তরুণ নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া দেখায় যে, নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে নিজস্ব অবস্থান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তবে দলীয় অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপ কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাহিন সরকারের বহিষ্কার কেবল একটি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা নয়, বরং জাতীয় রাজনীতিতে দল ও ব্যক্তির দ্বন্দ্বের প্রতিফলন। তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে প্রতিযোগিতা যত বাড়ছে, ততই রাজনৈতিক দলগুলোকে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।