25.9 C
Dhaka
Friday, August 22, 2025

লিড নিউজ

বরিশালের উজিরপুরে শাপলার দিগন্তজোড়া সৌন্দর্য, সাতলা বিল

আরও পড়ুন

সানাউল্লাহ রেজা শাদ::

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিল এলাকা এ বছরও লাল শাপলার দিগন্তবিস্তৃত কার্পেটে একাকার হয়ে গেছে। প্রকৃতির অনন্য রূপে সেজে ওঠা এ বিলকে ঘিরে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো পর্যটক। তবে পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত নৌকা চালনা ও প্লাস্টিক দূষণে বিলের পরিবেশ-প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

বরিশাল মহানগরী থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও মধ্য সাতলা গ্রামের বিশাল বিলজুড়ে প্রতিবছরের মতো এবারও শাপলায় ভরে উঠেছে। বিশেষ করে মধ্য ও পশ্চিম সাতলার বিলগুলো যেন দিগন্ত বিস্তৃত লাল কার্পেট হয়ে গেছে। এখানে লাল শাপলারই প্রাধান্য বেশি। জুলাইয়ের শেষভাগ থেকে অক্টোবরের মধ্যভাগ পর্যন্ত সাতলার বিল ভরে থাকে শাপলায়। তবে শাপলার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ভোরেই পৌঁছাতে হয়, কারণ সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফুলগুলো মুছে যায়।

প্রতিদিন শত শত দেশি নৌকায় চড়ে ভোর থেকে হাজারো পর্যটক ভিড় করছেন শাপলার বিল এলাকায়। স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীদের আনাগোনায় জমে উঠেছে পর্যটন কার্যক্রম। শাপলা বিলকে ঘিরে কয়েক বছর ধরে স্থানীয়রা নৌকা ভাড়া, খাবার সরবরাহ ও বিভিন্ন সেবামূলক কাজে যুক্ত হয়ে বিকল্প আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। যুবক-তরুণ থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষের জন্য এ সময়টা হয়ে উঠছে কর্মসংস্থানের মৌসুম।

শাপলার সৌন্দর্যের পাশাপাশি এটি স্থানীয় মানুষের জীবিকারও অন্যতম উৎস। স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই শত বছর ধরে এ বিলে শাপলা জন্মাচ্ছে। বর্তমানে এ অঞ্চলের প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ বর্ষা মৌসুমে শাপলা আহরণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত। প্রতিদিন ভোরেই নৌকা নিয়ে নেমে পড়েন শাপলা তুলতে। বরিশালের বাজার ছাড়িয়ে শাপলা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা সরাসরি সাতলা থেকে শাপলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এ বিল এখন স্থানীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে।

সৌন্দর্য উপভোগে আসা পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণে হুমকির মুখে পড়ছে শাপলার বিল। যথেচ্ছ নৌকা চালনায় শাপলার কান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, শুকনো খাবারের প্যাকেট ও পলিব্যাগ বিলে ফেলে দেওয়ায় পরিবেশ দ্রুত দূষিত হচ্ছে। পরিবেশবিদ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শাপলার বিলের জলজ উদ্ভিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

উজিরপুর উপজেলা প্রশাসন পূর্বে কালবিলা এলাকায় পর্যটকদের জন্য ছোট আকারে আবাসনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছিল। বরিশাল জেলা প্রশাসনও শাপলা বিল সংরক্ষণ ও পর্যটকদের জন্য নানা কর্মসূচির সুপারিশ পাঠিয়েছিল মন্ত্রণালয়ে। তবে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সাতলা এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করছেন, যথাযথ সংরক্ষণ ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে এ বিল দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। সচেতন মহল বলছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা ও শাপলার বংশবিস্তার নির্বিঘ্ন রাখতে হলে এখনই প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর