তানভীর আহমেদ :::
সড়ক ও জনপদ চট্টগ্রামের দোহাজারীতে ( চট্টগ্রাম দক্ষিণ) নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় নানা দূর্নীতি অনিয়মের শিরোনাম হন সুমন সিংহ । চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনরত নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) পিন্টু চাকমার বিরুদ্ধেও টোল প্লাজা এবং কালুরঘাট ফেরির এপ্রোচ সড়ক নিয়ে দূর্নীতি গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এই দুই প্রকৌশলীকে বান্দরবান ও পটিয়ায় বদলি করা হয়েছিলো গত ৭ই ফেব্রুয়ারী। তবে দুজনের কেউই চেয়ার ছাড়তে নারাজ। বুধবার (১৪ ই ফেব্রুয়ারি) সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর থেকে পূর্বের তাৎক্ষণিক বদলি আদেশে পরিবর্তন আনা হয়েছে সুকৌশলে ।
এদের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমাকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহের পদে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিলো। আর সুমন সিংহকে সওজের বান্দরবান বিভাগে বদলি করা হয়। সওজের বান্দরবান বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহউদ্দিন চৌধুরীকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিলো পিন্টু চাকমার স্থলে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পূর্বের বদলি আদেশ সুকৌশলে পরিবর্তন করে সুযোগ দেয়া হয়েছে দুই কর্মকর্তাকে । নতুন আদেশে বলা হয়েছে পূর্বের বদলি আদেশে ২,৩,৬ ক্রমের কর্মকর্তাদের ‘ তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত করা হবে ‘ স্থলে ‘ এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে ‘ মর্মে সংশোধন করা হলো।
প্রকৌশলী সুমন সিংহ ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট চট্টগ্রামের দোহাজারীতে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। বদলি আদেশ মোতাবেক বান্দরবানে ১৪ই এপ্রিলের মধ্যে যোগ দেবার কথা। সুত্রমতে, বদলি আদেশ স্থগিত করতে দুই প্রকৌশলীই বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছেন সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের টেবিলে।
বদলির প্রজ্ঞাপনে এ দুই কর্মকর্তাকে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্থানীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে দায়িত্বভার হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হলেও নতুন আদেশে আনা হয়েছে পরিবর্তন । বদলি আদেশ অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হলেও নতুন আদেশে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত করা হবে ‘ স্থলে ‘ এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে ‘ মর্মে সংশোধন করা হয়েছে।
সওজ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমার বিরুদ্ধে কালুরঘাট সেতুর এপ্রোপ সড়ক নির্মাণ ও কালুরঘাট ফেরি ইজারায় দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। একই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পোর্ট ও এক্সেস রোড়ের টোল আদায়ে অনিয়মের অভিযোগও উঠেছিল। যা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এছাড়া, দক্ষিণ চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ সওজের কর্মকর্তা সুমন সিংহের বিরুদ্ধে তার নিজ বাড়ি পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নে পটিয়া চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন ৩৫০ মিটারের দুটি গ্রামীণ ফুটপাথের মত রাস্তাকে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রায় ৪১ লাখ সরকারি টাকা ব্যয়ে বাড়িঘাটা রাস্তা দুইটি সেজেছে অত্যাধুনিক ইউনি ব্লকে। যেখানে এখনও সুমন সিংহের বাড়ির পরের অংশ সহ পটিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কাঁচা রয়েছে। সেখানে এই ৩৫০ মিটার সড়ক ব্যয় বহুল ইউনি ব্লক দ্বারা উন্নয়ন সরকারি অর্থের অপচয় বলে দাবি স্থানীয়দের।
এলজিইডি’র অধীনে ২০০ মিটার দূরত্বের যোগেন্দ্র-মাধুরী সিংহ সড়কের নামে ২৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৬ টাকা নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ওই সড়কের সাথে সংযুক্ত আরেকটি বাড়িঘাটা ১৫০ মিটার দূরত্বের প্রণব-সুহাসিনী সিংহ সড়কের নামে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৬ হাজার ৫৩৬ টাকা। তৎকালীন সংসদ সদস্যের সাথে সখ্যতা থাকার সুবাধে এই দুটি সড়কের জন্য ডিও লেটারও নেন সওজে’র নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ। এলজিইডি’র কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য দিয়ে ফুটপাথের মত গ্রামীণ সড়ক ও বাড়ীঘাটাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ দেখানো ও আত্মীয়দের নামে নামকরণ করিয়ে নেন এই কর্মকর্তা।
সড়কের আইডি নম্বর সৃষ্টি করে সরকারি বিপুল অর্থ খরচে একটি পরিবারের জন্য ইউনি ব্লক দ্বারা উন্নয়ন কাজের বিষয়টি এখন টক অব দ্যা পটিয়া। দৃশ্যমান এ্যারো মার্ক দিয়ে এলজিইডি’র আইডি নম্বর উল্লেখ করে সাড়ে তিনশ মিটারের দুটি সড়কে সাঁটানো হয়েছে সরকারি খরচে ৪টি সাইন বোর্ড। আলোচিত একটি সড়কের পূর্বের নাম ছিল তালতলা টু অলির হাট মফিজ খান সড়ক। যা বর্তমানে যোগেন্দ্র-মাধুরী সিংহ সড়ক নামে নাম করণ করে পটিয়া চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন গেইট স্থাপন করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) চট্টগ্রাম দক্ষিণের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়।সেখানে তিনি ৫ কোটি টাকায় নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। প্রভাব খাটিয়ে সেই বাড়িতে যেতে সরকারের ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন রাস্তা।চট্টগ্রাম নগরের অভিজাত এলাকা জামালখানে কিনেছেন আলিশান ফ্ল্যাটও। প্রভাব খাটিয়ে চার বছর ধরে নিজের এলাকায় চাকরির পাশাপাশি নিজের দপ্তরে চাকরি দিয়েছেন পরিবারের ১১ জনকে।
নতুন কর্মস্থলে যোগ না দেবার কৌশল হিসেবে দুই প্রকৌশলী সড়ক ও জনপদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তদবির করে নতুন আদেশ এনেছেন, এমন কানাঘুঁষা চলছে সড়ক ও জনপদ কার্যালয়ে। ফলে সহসাই নিজেদের চেয়ার ছাড়তে হচ্ছে না তাদের।
এইবাংলা/ তুহিন