33 C
Dhaka
Sunday, May 19, 2024
More

    চারঘাট উপজেলায় শিক্ষকদের প্রাইভেট বাণিজ্য

    আরও পড়ুন

    জামি রহমান, রাজশাহী

    রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও চারঘাট সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ অবস্থিত। এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে স্কুল ও কলেজের নাম। অধ্যায়নরত শিক্ষকদেরও আলাদা কদর। আর এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে স্কুলের কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তাদের কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করছেন। এমনকি শ্রেণী শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারণে ফেল করানোর মতো ঘটনাও ঘটছে। এমনটাই অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

    বাংলাদেশ গেজেট এর ২৪ জানুয়ারী-২০১৯ সালের ৫৫ পাতার ৩ নং কলামে শিক্ষা আইনে বলা হয়েছে, কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। এমন বিধান থাকলেও স্কুলটির শিক্ষকরা তা মানছেন না। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক স্কুল শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও চারঘাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে বিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোতে ভালো নম্বর দেয়া হয়না। প্রশ্ন কমন আসে না। ফেল করানোর হুমকি ও দেয়া হয়। ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এমনকি সরদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেনীতে ৯ টি বিষয়ে ফেল করার মত ঘটনাও ঘটেছে।

    ঝিকরা গ্রামের মো. কুদরত আলী বলেন, ‘আমার ২ মেয়ে একজন ৩য় শ্রেনীতে আরেকজন ৮ম শ্রেনীতে পড়ে। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় আমার ছোট মেয়ে ৩ বিষয়ে ফলাফল ৮০ মার্কের নিচে পায়। আমি বিদ্যালয়ে সরকারি ফি ৩০০ টাকা দিয়ে খাতাগুলো দেখি, যেন মেয়ের ভুলগুলো পরবর্তী পরীক্ষায় আর না করে ভাল ফলাফল করে। এই বিষয়টি নিয়ে অনেক শিক্ষক রাগারাগি করেন।

    তারই ধারাবাহিকতায় আমার বড় মেয়ে ৮ম শ্রেনীতে পড়ে তাকে বার্ষিক পরীক্ষায় ৩ বিষয়ে ফেল দেখানো হয়। ২ বিষয়ে ফেলদের বিবেচনায় পাশ করানো হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের সাথে কথা বলি। ৯ম শ্রেনীতে ৩ বিষয়ে ফেল দের পাশ করানো হয়েছে। তাই ৮ম শ্রেনীতে ৩ বিষয়ে বিবেচনা করলে সমস্যা কোথায়, এটা শিক্ষকদের নিজস্ব এখতিয়ার। মন্ত্রণালয়ের কোন বিধি নিষেধ নেই। আমি ৩ বিষয়ে খাতা গুলো দেখেছি, অংক ৪ মার্ক এর জন্য ফেল। ইংরেজিতে ই-মেইল সহ অনেক লিখা থাকলেও ০০ মার্ক দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞানেও একইভাবে ০০ দেয়া হয়েছে।

    উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে ছাত্রী ফেল করাচ্ছেন তা আদৌ কাম্য নয়। এবং একই ক্লাসে আটকে রেখে মানসিক চাপ সৃষ্টি করছেন। এমনকি টিসি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়। আর এভাবে শিক্ষার্থীদের বের করে আসন ফাকা করে চলে নতুন ছাত্র/ ছাত্রীদের বদলি বাণিজ্য। এমনকি প্রধানশিক্ষক আমাকেও বলেন, আপনার মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করান, আমি পাশ লিখে টিসি দিয়ে দিচ্ছি । অন্য স্কুলে গেলে পাস, আর সেই স্কুলে থাকলে ফেল।’

    কুদরত আলী আরো বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ১ মাস অনুনয় বিনয় করার পরেও বিবেচনা না করায় বাধ্য হয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের নিকট অভিযোগ দাখিল করলে উপজেলা প্রশাসনের কাছে তদন্ত চাই জেলা প্রশাসক,উপজেলা প্রশাসক শিক্ষা অফিসারের ওপর সঠিক তদন্ত করার নির্দেশ দেন,কিন্তু তা না করে, সেই খাতা গুলো কোন শিক্ষক প্রতিনিধি বা বোর্ড গঠন না করে, সঠিকভাবে খাতা পূনঃমূল্যায়ন না করে, অভিযুক্ত শিক্ষক দের প্রকৃত অপরাধ আড়াল করে মিথ্যা, মনগড়া, প্রতিবেদন দাখিল করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।বিষয়টি নিয়ে আমি আদালত এর সরনাপন্ন হবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

    বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর আরেক ছাত্রী মারিয়ামের অবিভাবক জিনাতুন বলেন, আমার মেয়েকে ইংরেজিতে ১ মার্ক কম থাকায় ফেল করিয়ে দিয়েছে শিক্ষক সুরাইয়া। তার কাছে মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতে বলেছিল, প্রাইভেট না পড়ানোর কারনে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছে। এমনকি টিসি নিতে বাধ্য করেছে।

    সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা তাদের নিজ ছাত্র ছাত্রীদের প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্যের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এসব নিয়মনীতি কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রাইভেট কোচিং পরিচালনা করছেন চারঘাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের গনিত বিষয়ের ইন্সটাক্টর মুন্জুরুল হাসান আরো দুই শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম কিরন ও সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সরেজমিনে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়,ছাত্র-ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে এসেছে। এসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামিল, রাজু, রাশেদ, সাইফুল, মোজাফ্ফর, হাসিবুল, সাত্তার, রয়েল, মামুন, শামীমরা স্কুলের শ্রেনীকক্ষেই প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন। প্রতি মাসে শিক্ষার্থী প্রতি আদায় করা হয় ৬০০ টাকা। সম্প্রতি প্রতিবেদক এর ক্যামেরায় এমন তথ্য ধরা পড়ে।

    পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বলেন, ‘ছাত্রী ফেলের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত হলেই বোঝা যাবে। আর শিক্ষকরা ইতিপূর্বে প্রাইভেট পড়াতেন। তবে এখন আর পড়াবেন না।’

    এই বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষ অফিসার সোহেল হোসেন বলেন, স্কুল এন্ড কলেজে প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়টি আমি জানতাম না,এখন আমরা তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেব। আরো বলেন সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়টি তদন্ত করে জেলা প্রশাসক মহাদয়ের কাছে পাঠিয়েছি।

    এ বিষয়ে জানতে অত্র স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ জনাব শামসুল হক বলেন,শুনেছি কয়েক জন শিক্ষক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাইভেট পড়াচ্ছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে এইসব শিক্ষকের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর