33 C
Dhaka
Sunday, May 19, 2024
More

    মনের কোণে মেঘ শরীরে এনজাইটি

    আরও পড়ুন

    ডাঃ রাকিবুল আহসান ফয়সাল ||

    আজকালকার কর্মব্যস্ত জীবনে অ্যাংজাইটি ( Anxiety) খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। উদ্বেগ, হতাশা, ভয় এসব কিন্তু আমাদের নিত্যসঙ্গী। প্রাত্যহিক জীবনের নানা কারণে মানসিক যন্ত্রণা এড়াতে অনেকেই অ্যালকোহল বা মদজাতীয় নেশাদ্রব্য ব্যবহার করে  সাময়িক প্রশান্তি ও উৎকর্ষতা পেতে চান ; কিন্তু হয় উল্টো। প্রশান্তির জন্য এলকোহল  গ্রহণ করা হলেও,  এই অ্যালকোহল বা মদই উলটো আমাদের এনজাইটি তৈরি করে।

    অ্যাংজাইটি তে যে সমস্যাগুলি হয় তা হলো

    -যে কোন বিষয়ে  অত্যাধিক দুশ্চিন্তা হওয়া,হার্টবিট বেড়ে যাওয়া,ঘাম হওয়া,বুকে ব্যাথা হওয়া,সারা শরীর,  হাত কাঁপা,মৃত্যুভয় হওয়া, ভীড় কিংবা সামাজিক জটলায় যেতে ভয় লাগা,  ঘুমের সমস্যা হওয়া ইত্যাদি।

    এমন সমস্যার সম্মুখীন হলে আপনি চিকিৎসার মাধ্যমে (ওষুধ ও কাউন্সেলিং) অ্যাংজাইটির সমস্যা আপনি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেন।

    অ্যাংজাইটি হলে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। পরবর্তীতে নানা স্নায়বিক সমস্যাও ( Nervous Problem) কিন্তু আসে এই অ্যাংসাইটি থেকেই। অনেকেই কিন্তু মাঝে মধ্যে এই উদ্বেগ অনুভব করেন। আর তা যদি দীর্ঘদিন ফেলে রাখেন তাহলে কিন্তু সেখান থেকে আসতে পারে হার্টের সমস্যা।

    উদ্বিগ্নতা যখন মানসিক বিকৃতিতে পরিণত হয়, তখন বেশ কিছু মানসিক লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণ সমূহ হলো (১) কোন তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে পূন:পূন: উদ্বিগ্নতা বোধ করা। (২) যে কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে দুশ্চিন্তা অনুভব করা এবং ব্যক্তি ইচ্ছা করলে ও তা দূর করতে পারে না। (৩) ব্যক্তি কোন কিছুতে সহজে চমকে উঠে। (৪) ব্যক্তির মধ্যে চলা ফেরায় অস্থিরতা দেখা দেয় এবং প্রায় ছট ফট করে। (৫) ব্যক্তির মধ্যে নিত্য দিনের কাজ কর্মে অস্থিরতা দেখা দেয় (৬) কেউ কেউ মনে করে সহসা তার মৃত্যু ঘটতে পারে (৭) ব্যক্তির সহজে মনোযোগ বিচ্যুতি ঘটে। (৮) ব্যক্তি বিভিন্ন কাজে প্রায় সময় উৎকন্ঠিত ও অতিসতর্ক থাকে। (৮) ব্যক্তি প্রায় সময় ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। (৯) ব্যক্তি মনে করে ,সহসা সে কোন দূর্ঘটনায় পতিত হতে যাচ্ছে এবং শীঘ্র সে তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে।

    একজন রোগী জানালেন তার ভয়াবহ ধরনের অ্যাপ্রোচ এনজাইটি আছে। এটার জন্য কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  কোন নারীকে  ইনবক্সে হাই-হ্যালো বলার আগেও ১০০ বার ভাবেন, যদি কেউ স্ক্রিনশট ফাঁস করে দেয় তাহলে মান সম্মানের কি হবে। এই আচরণ নিয়ে ভাই ব্রাদার, বন্ধুবান্ধব এবং কাজিনরা বেশ ঠাট্টা মশকরা করে। 

    আবার এনজাইটির কারণে ঘুমের সমস্যা তৈরি হবার বিষয়টি খুবই কমন। তবে একেক জনের ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যার প্রতিকার একেক ধরনের। ঘুমের সমস্যার কারনটি প্রথমেই একজন রোগীকে বুঝতে হবে, তার কেন ঘুম হচ্ছে না। কারন শরীরে আলাদা আলাদা সমস্যার কারনে আমাদের ঘুমের সমস্যাগুলো বিভিন্ন  ধরনের হয়ে থাকে। তার মধ্যে কয়েকটি হলো –

    ১. এনজাইটি ডিসঅর্ডার

    ২. প্যানিক ডিসঅর্ডার

    ৩. সিজোফ্রেনিয়া

    ৪. বাইপোলার ডিসঅর্ডার ইত্যাদি।

    তবে প্রায়ই যদি হতাশা ( Anxiety Disorder), উদ্বেগে- ভুগতে থাকেন সেক্ষেত্রে কিন্তু আগে থেকেই সচেতন হওয়া দরকার। কারণ তখন রোজকার জীবনযাত্রাতেও তার প্রভাব পড়ে। এবং সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা রীতিমতো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে ভয়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া কিংবা হাতে-পায়ে ঘাম, হাত-পা কাঁপা এসব কিন্তু অ্যাংসাইটিরই লক্ষণ।

    অ্যানজাইটির কারণে ঘুমের সমস্যা হচ্ছে এমন কথা রোগীদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়। তবে ঠিক কোন কারনে রোগীর ঘুম আসছে না, মূল কারনটি জেনে লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা করতে হয়। একমাত্র লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা করালেই রোগীদের ঘুমের সমস্যা একদম স্থায়ী ভাবে ভালো হয়।যদি কোন রোগী রোগের লক্ষন ভিত্তিক সঠিক চিকিৎসা না করে, তাহলে সে যতদিন ঔষধ খাবে ঠিক ততদিনই ভালো থাকবে। ঔষধ ছেড়ে দিলে ঘুমের সমস্যাটি আবারো ফিরে আসবে।

    সোশ্যাল ফোবিয়া 

    লজ্জা একধরনের অস্বস্তি যা আমাদের অনেকের হয়ে থাকে। অল্প স্বল্প হলে এতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। আমাদের অনেকের অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে লজ্জা করে, কিন্তু প্রাথমিক আড়ষ্টতা কেটে গেলে আমরা স্বাচ্ছন্দ বোধ করি, এমনকি উপভোগও করতে পারি তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা।

    ফোবিয়া একধরনের ভয়। আমাদের অনেকের মাকড়সা দেখলে ভয় হয় বা উঁচু জায়গায় দাঁড়ালে মাথা ঘুরে যায়।তবে সাধারণতঃ এতে আমাদের দৈনন্দিন কাজের ব্যাঘাত হয় না। ভয় তখনি ফোবিয়া হয়ে দাঁড়ায় যখন এর ফলে আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়।

    আপনার সোশ্যাল ফোবিয়া থাকলে আপনি অচেনা লোকের সামনে খুব অস্বস্তিবোধ করবেন। আপনার মনে হবেঃ

    সবাই আপনাকে অপছন্দ করছে
    আপনি এখনি কী করতে কী করে বসবেন
    এই অনুভূতি এতই কষ্টকর হতে পারে যে আপনি হয়ত লোকের সঙ্গে মেলামেশাই করতে পারবেন না। সব সামাজিক অনুষ্ঠান আপনি এড়িয়ে যাবেন।

    সোশ্যাল ফোবিয়া হলে কী ধরনের উপসর্গ হয়, আপনি নিজে কীভাবে এই কষ্ট কমাতে পারেন এবং কোথায় যেতে হবে সেটি সম্পর্কে জানার আগে জেনে রাখুন –

    প্রধানতঃ দুধরনের সোশ্যাল ফোবিয়া দেখা যায়- সাধারণ (বা জেনেরালাইজেড) এবং স্পেসিফিক।

    (চলবে)

     

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর