33 C
Dhaka
Sunday, May 19, 2024
More

    বাড়ছে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের ‘খাতিরের প্রকল্প’

    আরও পড়ুন

    রাহাত আহমেদ :::

    দেশের চলমান আর্থিক সংকটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাড়া নতুন কোন প্রকল্প হাতে না নেবার নির্দেশ থাকলেও, নেয়া হচ্ছে নানা প্রকল্প। ২০২২ সালের ৮ ই নভেম্বর  আয়েশি-বিলাসী ও বড় বড় প্রকল্প না নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অপেক্ষা করে সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প শুরু করতে চায়। প্রশিক্ষণ দিতে সংস্থাটি আরও সাতটি প্রকল্প নিয়েছে । এসব প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হবে ১৬০ কোটি টাকা।

    সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মসূচি আর প্রকল্পের ছড়াছড়ি নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেও। কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে বিশাল কর্মযজ্ঞের ফাইলের স্তুপ। কিন্তু মাঠের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। মাঠ পর্যায়ে দূর্নীতি বাসা বেঁধেছে। অযত্ন আর অবহেলায় ধুঁকছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অথচ চলছে নানা খাতিরের প্রকল্প হাতে নিয়ে সরকারী অর্থের লুটপাট। 

    ২০২২ সালের ৫ই জুলাই সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা থেকে পরিচলক প্রশাসন সৈয়দ নুরুল বাসির স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নতুন প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও অনুশাসন মেনে চলার কথা বলা হলেও শেষ  পর্যন্ত নির্দেশনা মানার কোন বালাই নেই। allocation of business অনুযায়ী   নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন সমাজসেবা অধিদপ্তরের না হলেও প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ‘ ৬ টি মহিলা ও শিশু কিশোর হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র (সেইফহোম)পুননির্মাণ ‘ প্রকল্পের  ডিপিপি ও নির্মাণ কাজ  সমাজসেবা অধিদপ্তর কনসালটেন্ট দিয়ে বাস্তবায়ন করার ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। নথি অনুযায়ী  সাত কোটি টাকা ক্রয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কনসালটেন্ট বাবত সরকারি অর্থ যেমন অপচয় হচ্ছে  তেমনি allocation of business এর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সরাসরি অমান্য করা হচ্ছে। 

     রুলস অফ বিজনেস অনুযায়ী বিজনেস অনুযায়ী সমাজ সেবা অধিদপ্তর  যেসব কাজ করার কথা সেসব বাদ দিয়ে তারা মনোযোগী হয়েছেন ঠিকাদারি এবং নির্মাণ  কাজের দিকে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ দেখা যাচ্ছে কাজের মান নির্ণয় এবং বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হলেও কূটকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বাধ্যবাধকতা। 

    সুত্রমতে,  যেখানে ১০০ কোটি টাকার কাজে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন  প্রয়োজন হয় সেখানে তারা ৮০ কোটি  ৫০ কোটি টাকার প্রজেক্ট তৈরি করছে, যেন তাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি নিতে না হয়।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিধবা ও স্বামীর হাতে নিগৃহীত নারী এবং অবহেলিত, দুস্থ ও বেকারদের জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিতে আরও সাতটি প্রকল্প নিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হবে ১৬০ কোটি টাকা।যদিও এ ধরনের প্রকল্পে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর আগে নেওয়া এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও সুফল না পাওয়ার চিত্র উঠে এসেছে  অনুসন্ধানে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘খাতিরের প্রকল্প’। কারণ ‘খাতিরের’ ভিত্তিতে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় এবং পরে ইচ্ছেমতো অনিয়ম করা হয়।

    এছাড়া৷ বিদ্যমান ছয়টি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রের পুনর্নির্মাণে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। নয় শত সাত কোটি টাকা ব্যয়ের এসব প্রকল্পে শুরু হয়েছে পুকুরচুরি। কনসালটেন্সি ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক  ফার্মের পেছনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাত কোটি টাকা ব্যয় হবে। গেল বছরের জুলাই মাসে প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। 

    সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের অনেক সংস্থা – অধিদপ্তর থাকলেও  সমাজসেবা অধিদপ্তরের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা মনোযোগী ভবন নির্মাণ নিয়ে। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী,  নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাজ নয়। 

    জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হাসিনা বেগম বলেন, ‘ রুলস অব বিজনেস মেনে চলার নির্দেশনা রয়েছে সব মন্ত্রণালয়ের প্রতি। বড় প্রকল্প বা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প কমানো হয়েছে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে অহেতুক ব্যয়বৃদ্ধির এমন অভিযোগ এলে, ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘

    মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানী অনুসন্ধানে জানা যায়  অধিদপ্তরের বড় প্রকল্পসমূহে এই দপ্তরের কতিপয় স্বার্থান্বেষী কর্মকর্তা কনসালটেন্ট দিয়ে নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।  এসব পরামর্শক বাদ দিয়ে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর দিয়ে প্রকল্পের কাজ করানো হলে সরকারী অর্থের সাশ্রয় হতো, তেমনিভাবে নির্মাণ কাজেন গুণগত মান নিশ্চিত হতো। 

    এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিপিপি হাতে নেবার সময় সমাজসেবা অধিদপ্তর সরকারি সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানোর কথা বললেও পরবর্তীতে নিজস্ব কনসালটেন্টের হাতে পৌঁছে এসব প্রকল্প। সরকারি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টকে দিয়ে নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করার উল্লেখ  কথা উল্লেখ করে একটি প্রকল্পের ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়। ডিপিপি অনুমোদন পাবার পর শুরু হয় কনসালটেন্ট ব্যবহার করে লুটপাটের খেলা। ‘

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর