23 C
Dhaka
Monday, May 6, 2024
More

    বঙ্গবন্ধুর বই নিয়ে আদালতে তথ্য গোপন করেছেন অমিতাভ দেউরী

    আরও পড়ুন

    নিজস্ব প্রতিবেদক ||

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বই নিয়ে আদালতের কাছে গোপন তথ্য দেওয়ার কারণে অমিতাভ দেউরী নামে এক লেখককে ভৎর্সনা করেছেন আদালত।

    ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ গ্রন্থের কপিরাইট ইস্যুতে আর্থিক লেনদেন নিয়ে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিচারকের জেরার মুখে অমিতাভ এবং তার আইনজীবী দোষ স্বীকার করেছেন। চুক্তির শর্ত পূরণ না করেই গোপন করে মামলা দায়ের উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই নিয়ে আদালতের দারস্থ হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক।

    ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ গ্রন্থের কপিরাইট এবং বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা অভিযোগ এনে গত ২৫ জুলাই সিএমএম কোর্টে মামলা দায়ের করেন বইটির সম্পাদক অমিতাভ দেউরী (সিআর মামলা নং ৩৪৮/২০২৩)। পেনাল কোর্টে ৪০৬, ৪২০ ও ১০৯ ধারায় মামলায় বিচারক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ আসামি নাজমুল হোসেন এবং শারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। ৩ অক্টোবর জামিনের জন্য আসামিরা আত্মসমর্পন করলে আদালত তাদের জামিন দেন।

    মামলার আরজিতে বাদী অমিতাভ দেউরী অভিযোগ করেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার’ প্রকল্পে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি করে মোট ৬৫,৭০০ কপি বই ক্রয়ের নিমিত্তে বইটি নির্বাচন করেন। বইগুলোর মূল্য ১১,০২,৯৩,৮৭৫ টাকা নির্ধারিত হয়। আসামিরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগসাজশে বইটি বিক্রি করে বইটির রচয়িতাকে বঞ্চিত করে।

    পরবর্তীতে বিষয়টি বাদীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি প্রতিবাদ করায় আসামি এবং তার মধ্যকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মোতাবেক আসামিরা বাদীকে দুইটি চেকের মাধ্যমে ৬৬,১৭,৬৩২ টাকা প্রদান করলে তিনি লিভ টু আপিল তুলে নেবেন। কিন্তু আসামিরা সেই টাকা পরিশোধ না করায় মামলা দায়ের করা হয়।

    ইতোমধ্যে মামলার বাদী অমিতাভ দেউরী ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করলেও সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল তুলে নেননি। চুক্তির শর্ত পূরণ ছাড়া বাকি টাকা নগদায়ন করতে চাইলে নাজমুল হোসেন আপত্তি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অমিতাভ দেউরী দুইটি পৃথক মামলা করেন। দুই মামলায় নাজমুল হোসেন এবং তার সহধর্মিণী শারমিন সুলতানাকে আসামি করা হয়েছে। তারা এখন জামিনে রয়েছেন।

    আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ওমর ফারুক আসিফ জানান, অমিতাভ দেউরী কপিরাইট অফিসে এবং মহামান্য হাইকোর্টে রিটে হেরে যাওয়ার পর অসৎ উদ্দেশ্যে লিভ টু আপিল করেন। নতুন মামলার শুনানিতে আদালত বাদীপক্ষের আইনজীবী এবং অমিতাভ দেউরীকে ইতোপূর্বে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে দুইজনেই টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু মামলার অভিযোগে সেই বিষয়টি গোপন করা হয়েছে। এসময় বিজ্ঞ আদালত উষ্মা প্রকাশ করে অমিতাভ দেউরীকে বলেন, ‘আপনার ক্লিনহ্যান্ডে আসা উচিত ছিল। আপনি প্রকৃত তথ্যটি গোপন করেছেন তা উচিত হয়নি। সঠিক তথ্য আদালতের সামনে উপস্থাপন করা উচিত ছিল।

    বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. লতিফুর রহমান স্বীকার করেছেন, ৩০ লাখ টাকা উত্তোলনের বিষয়টি পূর্বে আদালতকে জানানো হয়নি। বঙ্গবন্ধুর বই নিয়ে আদালতের দারস্থ হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক বলেছেন আদালত।

    এবিষয়ে অমিতাভ দেউরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি সার্টিফাইড কপি হাতে পেলেই গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

    এই বিষয়ে নাজমুল হোসেন জানান, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিজ্ঞ আদালতের অমিতাভ দেউরী তথ্য গোপনের বিষয়টি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে আমি মনে করি। তিনি বরাবরই মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমি এবং পরিবারের বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল করে এসেছেন। আমার বিশ্বাস আমি ন্যায়বিচার পাবো।’

    মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ৮ নভেম্বর। দুইটি মামলায় আসামিরা স্থায়ী জামিনে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইয়ের জটিলতা নিরসনে বিচারক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ চুক্তি অনুযায়ী অমিতাভ দেউরী সকল মামলা এবং অভিযোগ তুলে নিলে বাকি ৩৬ লাখ টাকা নগদায়ন করতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ওমর ফারুক আসিফকে দায়িত্ব দিয়েছেন। যদিও আদালতের এই সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন মামলার বাদী অমিতাভ দেউরী।

    ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। নিয়ম মেনেই এবং কপিরাইট যাচাই করে ৬৫ হাজার বই ক্রয় করা হয়েছে।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর