তানভীর আহমেদ :::
আইনুল কবির, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে পৌর মেয়র নির্বাচন করে হেরে যাবার পর নিজেই নিজের অনুসারীদের মাধ্যমে জনতার মেয়র টাইটেল ফলাও করে প্রচার করেন। ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারনা, ঋন খেলাপি চক্রের সাথে সম্পর্ক, এলডিপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক মন্ত্রী কর্ণেল (অব) অলি আহমদের নাম বিক্রি- নানা অভিযোগের সাথে আইনুল কবিরের ঝুলিতে নতুন পালক যুক্ত হলো যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঁশখালীর তৈলার দ্বীপ সেতুর ইজারা নিয়েছেন সাতকানিয়ার জহির উদ্দিন ও আইনুল কবির। টোল আদায় নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান সিআইপিকে নিয়ে কটুক্তি করেছেন আইনুল কবির। এমপিকে উদ্দেশ্য করে তাকে আঞ্চলিক ভাষায় বলতে শোনা যায়, সে নতুন এমপি হয়েছে, কাবিলতি করছে ‘। ( ‘ ইতে নতুন এমপি হইয়ে, কাইতন গিরি গরেজ্জে। ‘)
বাঁশখালীর মানুষদের ‘বাঁশখ্যাইলা বলদ’ ‘ হ্যাইল্যা ‘(গেঁয়ো) হিসেবে সম্মোধন করেন আইনুল কবির। বাঁশখালীবাসীকে নিয়ে আইনুল কবিরের কটুক্তির পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে হাঁটুগাঁড়া আইনুল কবিরের বিশেষ ছবি।
ছড়িয়ে পড়া ছবিতে হাঁটু গেঁড়ে ওয়েস্টার্ন রীতিতে নিজের স্ত্রীকে ফুল দিতে দেখা যাচ্ছে। তবে ছবির সেই ঢং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ট্রল’ হয়ে ফিরেছে। ফেসবুক ওয়ালে দৈনিক যায় যায় দিনের সাংবাদিক রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ লিখেছেন, ‘ ছবির মানুষটি চন্দনাইশবাসীর গর্ব। ওনি সাঙ্গু নদীর উপর নির্মিত তৈলারদ্বীপ সেতুর একমাত্র মালিক! তার মুখের ভাষাটাও অনেক সুন্দর। বিউটিফুল ব…দ! ‘
একই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ব্যঙ্গ করতে দেখা গেছে নেটিজেনদের। তবে কি কারণে কথিত জনতার মেয়রকে নিয়ে এমন ব্যঙ্গ সেই রহস্য থেকে যাচ্ছে। আরিফুর ইসলাম খান নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী একই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চন্দনাইশের উপজেলা নির্বাচনে জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান ঋন খেলাপি জসিম উদ্দিনকে নিয়ে সভা সমাবেশ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবির নিজের পেশিশক্তি নিয়ে নানা দম্ভোক্তি করছেন। ভোট ব্যাংকের গাল গল্পে বিরক্ত সাধারণ ভোটাররা। সেকারণে পারিবারিক ছবিতে নানা ক্যাপশন যুক্ত করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ঝাল মেটাচ্ছেন নেটিজেনরা।
ফেসবুকের আরেক পোস্টে নুর মোহাম্মদ নামের একজন লিখেছেন আইনুল কবির ইয়াবা ব্যবসায়ী। ( ‘ ইতে ইয়াবা ব্যবসায়ী ‘)। এছাড়া আইনুল কবিরকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করতে দেখা গেছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর দুপুরে উপজেলার গাছবাড়িয়া কলঘর এলাকায় নৌকা প্রতীক ভাংচুর, বিষ্ফোরণ ও ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলার এক নং আসামি এম. আইনুল কবির। সেই মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। মাদকসহ বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলেও এলডিপির ছাতা মাথায় নিয়ে সামাল দেন সবকিছু।
জানা গেছে, নিজের ব্যবসা থেকে শুরু করে সামাজিক জীবন সবখানে নিজেকে কর্ণেল অলি আহমদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগও কম নয়। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তার যোগাযোগ আছে, এমন দম্ভোক্তি করে মানুষকে হয়রানি করেন। পান থেকে চুন খসলেই বিক্রি করেন এলডিপির চেয়ারম্যান কর্ণেল অলি আহমদের নাম।
সুত্রমতে, কথিত জনতার মেয়র আইনুল কবির চেকের মামলায় সম্প্রতি জেল থেকে বের হয়েছেন। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনকে নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন এলডিপির সভাপতি আইনুল কবির। সভা সমাবেশে আইনুল কবিরকে সাথে নিয়ে কর্ণেল অলি আহমদের গুণগান করছেন ঋন খেলাপি জসিম। তবে এরই পদ্মা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার কারণে জসিম উদ্দিনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
একশো যুবক যুবতীর বিনা খরচে বিয়ে ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসেন জসিম উদ্দিন। এলাকার সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পেতে পাঁচ পদের ফার্নিচার সমেত দুই দম্পতির বিয়ের অনুষ্ঠানের নাটক মঞ্চস্থ করেন জসিম ও আইনুল কবির। জানা যায়, এলাকার একশো মসজিদে পাঁচ লাখ টাকা করে দানের ঘোষণা দিয়ে চেক হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর সেসব চেক নিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। তবে এর পরপরই ফাঁস হয় ব্যাংকের টাকা মেরে দাতা সাজার কাহিনি। গণমাধ্যমের শিরোনাম হন জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। সুত্রমতে, এই জসিম উদ্দিনের প্রতারণার গল্পের উল্লেখযোগ্য রহস্যময় চরিত্র কথিত জনতার মেয়র ‘আইনুল কবির’ ।