23 C
Dhaka
Tuesday, May 7, 2024
More

    নির্বাচন ঘিরে ফকিরহাট উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত

    নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ঠেকাতে প্রভাব বিস্তার

    আরও পড়ুন

    নিজস্ব প্রতিবেদক :::

    আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের কোন প্রার্থী দলের কোন সংসদ সদস্য দলীয় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এমন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও হঠাৎ করেই ফকিরহাট উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। নির্বাচনে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক  ওয়াহিদুজ্জামান বাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে আকস্মিক এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ; অভিযোগ তৃণমূলের। 

    মঙ্গলবার ফকিরহাট উপজেলা যুবলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।  বাগেরহাট জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন ও সম্পাদক মীর জায়েসী আশরাফি জেমস স্বাক্ষরিত এক আদেশে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে । আদেশে বলা হয়, দলীয় বিধিমালা ২২(ঘ) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ফকিরহাট উপজেলা শাখার সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওয়াহিদুজ্জামান বাবু পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তার বড়ভাই প্রয়াত আব্দুল ওয়াদুদ খোকন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা আব্দুল ওয়াদুদ খোকনের ছোটভাই ওয়াহিদুজ্জামান বাবুর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে তৃণমূলে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন দাশ এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ; একারণে তাকে সুবিধা দিতে নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

    তৃনমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ,  উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমান যুবলীগের আহবায়ক  ওয়াহিদুজ্জামান বাবু’কে নির্বাচন থেকে সরাতে যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলো।

    নেতাকর্মীদের ধারণা, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন কুমার দাসের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান বাবু  প্রার্থী হওয়ায় এ কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।

    এ বিষয়ে শেখ ওয়াহিদুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে আমার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এরপরেও কেন কমিটি স্থগিত করা হলো জানি না। উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রভাবশালী প্রার্থী হয়তো জেলা কমিটিকে ভুল বুঝিয়ে এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। যা হোক, আমি সংগঠনের নির্দেশ মেনে চলব।’

    যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিতের আকস্মিক সিদ্ধান্তে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তাদের মতে,  উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির প্রভাব বিস্তারের যে কোনো পথ রুদ্ধ করিতে আওয়ামী লীগ  অবস্থান গ্রহণ করেছে , যুবলীগ নেতা উপজেলা  নির্বাচনে অংশ নেবার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার হঠকারী সিদ্ধান্ত দলের সভানেত্রীর নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

    যুবলীগের গঠনতন্ত্রের ২২ (ঘ) ধারায় বলা আছে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের অধঃস্তন কোনো শাখায় স্থবিরতা দেখা দিলে, সাংগঠনিক অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে অথবা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা অধিকাংশ নেতা–কর্মী সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে অথবা নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় অনিয়মসংক্রান্ত অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে জেলা শাখা কেন্দ্রের অনুমতিক্রমে থানা শাখার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে পারবে। তবে ফকিরহাট উপজেলা কমিটি স্থগিত করার ক্ষেত্রে ২২ (ঘ) ধারার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতা–কর্মীরা অবশ্য বলছেন, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্রে করেই এই সিদ্ধান্ত।

    আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও এ নির্বাচনকে ঘিরে বরাবরের মতো স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। শীর্ষ পর্যায়ের কঠোর নির্দেশনা ও হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাবমুক্ত রাখা যাচ্ছে না।দলের এমপি মন্ত্রীদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের কথা বলা হলেও এই আসনের ( ফকিরহাট বাগেরহাট) স্থানীয় সংসদ সদস্যকে গেল রমজানে একটি সভায় প্রকাশ্যে বলতে শোনা যায়, ‘ আমি চাই সঠিক, সুযোগ্য,  অসাম্প্রদায়িক নেতাকে আপনারা নির্বাচিত করে ফকিরহাটবাসী আপনারা শান্তিতে থাকবেন। এবং আমার কান্ডিডেট আমি যাকে দেব তাকেই আপনারা,  আমি আপনাদের কাছে আশা করি আপনারা আমাকে যে ভোটে নির্বাচিত করছেন… আমি স্বপন দা’কে আমার প্রার্থী ডিগ্লার করছি।  ‘

    স্থানীয় সংসদ সদস্য বক্তব্য রাখার সময় চেয়ারম্যান  প্রার্থী স্বপন কুমার দাশকে তার পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। নির্বাচনের আগে কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করা সংসদ সদস্যের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

    প্রসঙ্গত, ৮ মে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী শুরু হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মাঠপর্যায়েও তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  মূলত দলীয় প্রতীক নৌকা না থাকায় এবং বিএনপি অংশ না নেওয়ায় এ নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের আধিক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা নিজ বলয়ের নেতা, নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের প্রার্থী করছেন। আবার সংসদ নির্বাচনে যারা অংশ নেননি কিংবা চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছিলেন, তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর বাইরেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন।

    আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, নির্বাচনে  এমপি-মন্ত্রী বা দলীয় প্রভাবশালী নেতারা হস্তক্ষেপ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের আগে ফকিরহাট উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিতের মতো সিদ্ধান্তে নির্বাচনী মাঠে বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে । নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অনেক এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতা ইতোমধ্যেই নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি মাঠ গরম করছেন।

    সম্প্রতি নাটোরের সিংড়ায় এক প্রতিমন্ত্রীর স্বজনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রথমে প্রহার, পরে অপহরণের অভিযোগ উঠে। ফলে দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচনে স্থানীয় রাজনৈতিক-সামাজিক প্রভাবধারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছিলো , তা দুরাশায় পরিণত হতে চলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন  শাসক দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় শাখার অভ্যন্তরে নূতন করে সংঘাত-সংঘর্ষ বেঁধে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলাও ভেঙে  পড়তে পারে।বিশেষত প্রধান দলগুলোর নিছক ক্ষমতাকেন্দ্রিক অসুস্থ রাজনীতিচর্চার ফলস্বরূপ দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংসের মুখে।  বিগত সংসদ নির্বাচনসহ একাধিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের মিত্রদলগুলোর বর্জনের কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় জনসাধারণের মধ্যে ভোটদানের আগ্রহ ইতোমধ্যে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর