নিজস্ব প্রতিবেদক :::
গতকাল মঙ্গলবার সারাদেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃস্টি হয়েছে ভিন্ন দৃশ্য । নিহতদের অধিকাংশই কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সাধারণ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাতভর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বের করে দেয়া হয়েছে।
গতকাল রাত ১২টা থেকে রোকেয়া হল থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। ছাত্রলীগের নেত্রীদের মারধর করে বের করে দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টকে দিয়ে হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করান। এরপর একের পর এক মেয়েদের শামসুন নাহার হল, বঙ্গমাতা হল, কুয়েত মৈত্রী হল এবং বেগম সুফিয়া কামাল হলও নিয়ন্ত্রণে নেয় সাধারণ ছাত্রীরা এবং নিষিদ্ধ করা হয় হয় ছাত্র রাজনীতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, অমর একুশে হল, রোকেয়া হল, মহসীন হল, কুয়েত মৈত্রী হল, জহুরুল হল, শামসুননাহার হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, সুফিয়া কামাল হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বের করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে একের পর এক হলে নিয়ন্ত্রণ হারায় ক্ষমতাসিন দলের ছাত্রসংগঠনটি। একে একে হল থেকে বেরিয়ে যান প্রতিটি হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলে শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতাদের রুমেও হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের পরই বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের তিনটি আবাসিক হল -অমর একুশে হল,শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হলের নিয়ন্ত্রণ নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেদিন থেকেই এই তিন হলে ছাত্রলীগের আর কোনো শীর্ষ নেতা প্রবেশ করতে পারেননি।
গতকাল রাতে রোকেয়া হলে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর কক্ষ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় তোপের মুখে হল ছাত্রলীগ সভাপতি সহ সংগঠনটির ১০ নেতাকর্মী হল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রোকেয়া হলকে রাজনীতি মুক্ত বলে বিজ্ঞপ্তি দেন হলের প্রভোষ্ট নিলুফার পারভিন। এর পর কুয়েত মৈত্রী হলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হলছাড়া করার ঘটনা ঘটে।
এরপর মধ্যরাতে লাঠিসোটা নিয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা বের হয়ে হলের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ সময় হল ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা হল ত্যাগ করেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে হলের প্রভোস্ট হলটিকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেন।
হলে অবস্থান করা রুহুল আমিন জানান, ‘রাতে গেট বন্ধ করে স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ এসে চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরাতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এ হলের প্রভোস্ট জহুরুল হক হলকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেন। ‘
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতরাতে ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাই হলে ফিরে আসেন নি। ফলে যারা হলে ছিলো তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়েন। রুমে রুমে গিয়ে হলগুলো ছাত্রলীগ মুক্ত ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন হলের গেটে ‘ ছাত্রলীগ মুক্ত ‘ পোস্টার লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির রুম ভাংচুর করা হয়।

বুধবার (১৭ জুলাই) সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রলীগ সর্বশেষ নিয়ন্ত্রণ হারায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে। এই হলের কোটা আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের রুম ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় নেতারা বের হয়ে যান।