33 C
Dhaka
Sunday, May 19, 2024
More

    বরগুনার রাজনীতির বেহাল দশা

    আরও পড়ুন

    বরগুনা প্রতিনিধিঃ

    বছর পার হলেও সম্মেলনে ঘোষিত তিন সদস্যে কমিটিতেই চলছে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় সংগঠনটির কার্যক্রম পিছয়ে পরেছে বলে মনে করছেন সংগঠনটির সাবেক ও পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। এদিকে মুখ থুবরে পরে আছে অবিভাবকহীন জেলা বিএনপির কার্যক্রম। অপরদিকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে জেলা জাতীয় পার্টির কার্যক্রম।

    জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর বরগুনা সার্কিট হাউজ মাঠে বরগুনার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ (শম্ভু)কে সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরকে সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু কে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পূর্নাঙ্গ কমিটির তালিকা করে কেন্দ্রে জমা দিতে নির্দেশ হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১বছর ৫ মাসেও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো ঘোষনা করা হয়নি। দীর্ঘ ১ বছর ৫ মাসেও কমিটি ঘোষনা না হওয়ায় বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ক্রার্যক্রম স্থবির হয়ে পরেছে বলে মনে করছেন সাবেক ও পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। জেলা কমিটি গঠন না করায় গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় গোলালগঞ্জ খ্যাত আওয়ামী লীগের এ ঘাটিতে বরগুনা-১ আসনে নৌকা প্রতিকের পরাজয়ের অন্যতম কারন হিসেবে মনে করছেন দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা।

    বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব মৃধা বলেন, বরগুনার জেলার আওয়ামী পরিবারের রাজনীতিতে চলছে দুর্বিষহ সংকট, সমন্বয় হীনতা ও শৃঙ্খলার অভাব। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিগুলো মেয়াদ উত্তির্ণের পথে, এখনও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। শ্রমিক লীগ কৃষক লীগ সহ প্রায় সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদ উত্তীর্ণ। অচিরেই জেলা আওয়ামী লীগ সহ সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও সম্মেলন জরুরী বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা। এভাবে চলতে থাকলে বরগুনা আওয়ামী পরিবার চরম অস্তিত্ত্ব সংকটে নিমজ্জিত হবে।

    বরগুনা জেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবিরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, কিছুদিন আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। হয়তো তাদের হাতে কাগজ পৌছে গেছে।

    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, জেলা কমিটি কেন পূর্ণাঙ্গ করছেন না সে বিষয়ে আমার জানা নেই। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য কেন্দ্র দুবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে পাঠিয়েছে কি না? সে বিষয়ে আমার জানা নেই।

    এদিকে ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লাকে আহ্বায়ক এবং তারিকুজ্জামান টিটুকে সদস্য সচিব করে বিএনপি বরগুনা জেলা শাখার ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কার্যকরী কমিটি ঘোষনা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০২৩ সালের ৮ই জানুয়ারী সদস্য সচিব তারিকুজ্জামান টিটু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক, অসাংগঠনিক ও অরাজনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ২০২৩ সালের ১৭ই এপ্রিল রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে বিএনপির বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হককে জেলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ স্বাক্ষরিত চিঠি গনমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন।

    দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের তদন্ত করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ায় কেন্দ্রীয় বিএনপি বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করেছে।

    জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা জানান, কমিটি না থাকায় বিগত কয়েকমাস যাবত জাতীয় প্রোগ্রামগুলোও দলের পক্ষ থেকে করা হয় না। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরাও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে কোন তালিকাও জমা দিচ্ছেন না। কোন অদৃশ্য কারনে কেন্দ্র থেকেও কমিটি দেওয়ার বিষয়ে কেন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বরগুনা জেলা কমিটি ঘোষনা করা অতিব জরুরী হয়ে পরেছে।

    অপরদিকে বরগুনা জেলা জাতীয় পার্টি এক প্রকার নিষ্ক্রিয় অবস্থায় তাদের কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির একাধিক নেতাকর্মীরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জেলার ৬টি উপজেলায় নিয়ে গঠিত দুটি আসনে মনোনায়ন দেওয়ার পরে দলটির নেতাকর্মীরা কিছুটা সক্রিয় হলেও বর্তমান জেলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের অবস্থান তলানীতে।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর