::: চাঁদপুর প্রতিনিধি :::
ঘূর্নিঝড় মোখা’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায়
চাঁদপুরে লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার রাত সোয়া ১০টা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুর।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন। মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় মোখা ক্রমশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় এবং এর তীব্রতা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ৮ নম্বর মহা বিপৎসংকেত জারি করেছে। ৮ নম্বর মহা বিপৎসংকেতের মানে হচ্ছে বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বামদিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
তিনি আরও বলেন, বিআইডব্লিউটিএ পরিচালকের (নৌ-নিট্রা) নির্দেশে শুক্রবার রাত সোয়া ১০টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা-চাঁদপুর, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা চাঁদপুর ভায়া শরিয়তপুর, মজু চৌধুরীর হাট (লক্ষ্মীপুর)-ইলিশা ঘাট (ভোলা) নৌপথের সকল ধরনের লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৫৩টি সাইক্লোন শেল্টার। সেইসঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর সর্বসাধারণকে সতর্ক করতে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। জেলায় ৩৫৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে মানুষজন আশ্রয় নিতে পারেন। খাবার, মেডিক্যাল টিম ও নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
ঘূর্ণিঝড় মোখা ক্রমশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জসহ সব রুটের লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামরুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে নৌ পুলিশের প্রত্যেক থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা সক্রিয়ভাবে লঞ্চঘাট ও উপকূলীয় এলাকায় প্রস্তুত রয়েছে। একই সঙ্গে লঞ্চ ও ছোট নৌযান নিরাপদে থাকার জন্য সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড়ের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি নম্বর ১২-এ বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস শুক্রবার রাত ৯টার বুলেটিনে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৮ নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দরও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সিভিল এভিয়েশনের সদস্য (অপারেশন ও প্ল্যানিং) এয়ার কমডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরী।
তিনি বলেন, “বিমানবন্দরগুলোতে আপৎকালীন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।”
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে আট নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর মোংলা বন্দরকে দেখাতে বলা হয়েছে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত।অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলের সাড়ে আটশ কিলোমিটারের মধ্যে হাজির হওয়ায় জারি করা হয়েছে মহা বিপদ সংকেত।
এইবাংলা/ হিমেল