নিজস্ব প্রতিবেদক :::
‘সন্দেহের’ জেরে দুই সহোদর কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক উষ্কানির শংকা হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। গেল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীর উপাসনালয়ে আগুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নির্মাণশ্রমিক দুই সহোদর কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ফরিদপুরের মধুখালীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ‘সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মধুখালী ঈদগাহের সামনে মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা ফরিদপুর–খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন ধরিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে বেলা দেড়টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামে মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে মধুখালী থানায় এ মামলা তিনটি নথিভুক্ত করা হয়।
একটি মামলার বাদী পঞ্চপল্লি সর্বজনীন কালীমন্দিরের পূজারী কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষ চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী তপতী রানী মণ্ডল (৪৭)। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে কে বা কারা ওই মন্দিরে কালীপ্রতীমার পরনের শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় তিনি ওই মামলা করেন।
দ্বিতীয় মামলার বাদী পিটুনিতে নিহত দুই সহোদর আশরাফুল খান (২০) ও আসাদুল খানের (১৮) বাবা মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের মো. শাহজাহান খান (৪৬)। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
তৃতীয় মামলাটির বাদী মধুখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শংকর বালা। এ মামলায় ওই থানার ওসিসহ ১০ জন পুলিশ সদস্যকে আহত করা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় আসামি হিসেবে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি মধুখালী ও বালিয়াকান্দির অজ্ঞাতনামা ‘আরও অনেক’কে আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি মন্দিরে আগুন দেওয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত হয়। কতিপয় লোকের ‘সন্দেহ’ হয়, এখানে একটি নির্মাণাধীন স্কুলের নির্মাণ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন।তারা তখন ওই স্কুলের নির্মাণশ্রমিকদের বেদম পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। এদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ডুমাইন ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান তপন জানান, পাঁচ গ্রাম নিয়ে সেখানে পঞ্চপল্লী অবস্থিত। এলাকাটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। এর মাঝে কৃষ্ণনগর নামে এক গ্রামে একটি বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের জন্য সেখানে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছিলেন। পঞ্চপল্লীর একদল মানুষ ওই নির্মাণ শ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে নির্মাণাধীন স্কুল ঘরে আটকে রাখেন। এর মধ্যে নির্মাণশ্রমিক আপন দুই ভাই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।