30 C
Dhaka
Sunday, May 19, 2024
More

    পানি শূন্য ৮৫টি নদ-নদী, নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর

    তীব্র পানির সংকটে নাটোরবাসী

    আরও পড়ুন

    আল আমিন,নাটোর প্রতিনিধি:-

    নাটোরে চলনবিল অঞ্চলে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। প্রমত্তা পদ্মা শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। নদীর বুকে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। সেই সঙ্গে পদ্মা সংযুক্ত প্রধান প্রধান শাখা প্রশাখা নদী বড়াল, আত্রাই ও গড়াইসহ অন্তত ৮৫টি নদী পানি শূন্য হয়ে পড়েছে।

    শুকনো নদ-নদীতে চাষ করা হচ্ছে বোরো ধান। এসব নদীগুলোতে পানি না থাকায় মৎস্যজীবীরা বেকার হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে তাপদাহ । চৈত্রের পর, বৈশাখের প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে দেশ। টানা প্রায় এক মাস যাবত তীব্র গরম, খরা-অনাবৃষ্টি, শুষ্ক বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। দুঃসহ হয়ে উঠেছে জীবনধারণ। পানির সন্ধানে মানুষ ছুটছে দূর-দূরান্তে।

    আবহাওয়া অফিস ও পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস বলছে, এ বছর উচ্চতাপ ও খরা পরিস্থিতি দীর্ঘয়িত হতে পারে। অপরদিকে এ অঞ্চলে দ্রুত নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর। আগামী দিনে এ নিয়ে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
    অনুসন্ধানে জানা যায়,চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনার মধ্যে অবস্থিত ২০নদীর মধ্যে সবগুলো নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে সরকার থেকে তেমন কোন প্রনদনা দেয়া হচ্ছে না। তবে যেসব এলাকায় ইলিশের প্রজনন মৌসমে মাছধরা নিশিদ্ধ সেই এলাকাতে সরকারি ভাবে ৩০ হাজার টাকার মূল্যেও বকনা বাছুর প্রদান করা হচ্ছে।

    এছাড়া যমুনা, পদ্মা, আত্রাই, গুমানী, বারনই, গোদাই,নন্দকুজা,হোজা,নাগর,ভদ্রাবতী,কাঁসাখালসহ সব নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার নদী পাড়ের হাজার হাজার মৎস্যজীবী বেকার হয়ে পড়েছেন।
    ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে নদীর পানি কমে গেলেও নদীর কোলের পানি তেমন একটা কমে না। কিন্তু এ বছর জানুয়ারির শুরুতেই পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই সব পানি প্রায় শুকিয়ে গেছে। এছারা টানা প্রায় এক মাস যাবত তীব্র গরম, খরা-অনাবৃষ্টি, শুষ্ক বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে আরও বেশী সমস্যা হচ্ছে। তারা এসব নদী গুলো পুঃখনন করার দাবি জানান।
    চলনবিলের পুঠিমারী গ্রামের কৃষক মোক্তার আলী জানান,এদিকে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি জমিতে সেচ কার্যক্রম। গত বছর তার সেচ বোরিং-এ পানির স্তর ছিল ২৬ ফুট। এবছর সেখানে পাইপে মধ্যে সুতা নামিয়ে পানির দেখেন লেয়ার ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। চৈত্র মাস আসতে না আসতেই শ্যালো এবং মোটরগুলোতে পানি পাওয়া যায় না। দু-দফায় ১০ থেকে ১২ ফুট মাটির গর্ত করে পানির পাম্প নিচে দিয়ে বোরো জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ ও তেল খরচ বেশি হচ্ছে।
    নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে জানা যায়, নারদ নদসহ আত্রাই, বারনই, নন্দকুজা, বড়াল মুসাখাঁন, খলিশাডাঙ্গা, পঁচাবড়াল, গদাই, নাগর, এবং পদ্মা নদী (কিছু অংশ) এই ১১টি নদীর মধ্যে ৮টি নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পানীয় জলের সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। শুধুমাত্র নাগর ও আত্রাই এবং পদ্মার কিছু অংশে পানি রয়েছে।
    নাটোর শহরের বাসিন্দা লেখক ও গবেষক খালিদ-বিন বাচ্চু বলেন, এটা আমাদের জন্য অশনি সংকেত। এখনই প্রস্তুতি না নিলে আগামীতে সুপেয় পানির সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে খোলা জায়গা ও জলাধার কমে যাওয়া এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরে অতিরিক্ত চাপের কারণে এই সংকট বলে মনে করেন তিনি।
    নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি পানির সংকটে কথা স্বীকার করে বলেন, খরা মৌসুম এলেই আমরা নিরাপদ পানির সংকটে পড়তে হয়। এসময় পৌর এলাকায় অনেক টিউবওয়েল অকেজো হয়ে গেছে। সরকার যদি পানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নদী থেকে দূষণমুক্ত পানি উত্তোলন ও প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলো সংরক্ষণে এখনই উদ্যোগ না নেয়, তাহলে সামনে কঠিন বিপদ অপেক্ষা করছে।’

    নাটোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নুরুল কবীর ভুইয়া জানান, সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে আওতায় নাটোরেও কাজ করছেন তারা।

    এর আগে জেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ, পল্লী পানি সরবরাহ, অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহের কাজ করছেন। এগুলোর মধ্যে ছিল ২ হাজার ৯০৪ টি সাবমার্সেবল পাম্পযুক্ত টিউবওয়েল, ৭৯টি সাধারণ টিউবওয়েল। জেলার ৫২টি ইউনিয়নে ৫২টি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

    সূত্র জানায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। দৃশ্যত মরুকরণ প্রক্রিয়ার দিকে এগুচ্ছে এ অঞ্চলের সার্বিক আবহাওয়া। যা এ অঞ্চলের কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তবে রাজশাহীর তুলনায় নাটোর জেলায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর তুলনামূলকভাবে ভালো। খরা মৌসুমে রাজশাহীর নিকটবর্তী পবা উপজেলায় ১৯৮৫ সালে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ছিল গড়ে ২০ ফুট ৬ ইঞ্চি। ১৯৯৫ সালে ৩০ ফুটের নিচে ও ২০১০ সালে পানির স্তর নেমে দাঁড়ায় প্রায় ৬৬ ফুটে।
    বরেন্দ্র নাটোর জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন জানান, জেলার হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের আচলকোট মৌজায় এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ২০১৩ সালের জুলাই মাসে স্থিতিশীল পানির গভীরতা ছিল ১২ ফুট ২ ইঞ্চি, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে পানির গভীরতা নেমে দাঁড়ায় ১৩ ফুট ১ ইঞ্চিতে। অর্থাৎ প্রতিবছর প্রায় এক ফুট করে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।
    বিএডিসি নাটোর জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জেলায় ২০০টি গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের জন্য পানি উত্তোলন করা হয়। এসব নলকূপের প্রতিটার পেছনে ব্যয় হয়েছে ৩০-৩৫ লাখ টাকা করে। গত অর্থবছরে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নাটোর জেলায় ৮০ কিলোমিটার ইউপিভিসি পাইপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানির দিয়ে সেচ দেওয়া হবে।
    তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি সময় জেলার বাগাতিপাড়ার কালিকাপুর এলাকায় পানির স্তর ৩৩ ফিট নীচে নেমে গেছে। শ্যালো মেশিন মাটির ওপর থেকে ২৬ ফুট নিচ পর্যন্ত পানি তুলতে পারে। পানির স্তর অব্যাহত নিচে নামতে থাকলে এক সময় শ্যালো টিউবওয়েলে পানি উঠবে না। সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করে বিকল্প উৎস ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে সেচ কমিটির নীতিমালা মানার তাগিদ দেন তিনি ।
    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূ-গর্ভস্থ পানির বিকল্প ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরণের আর কোনো পথ নেই। ভূ-গর্ভস্থ পানির বিকল্প হিসেবে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে, পুকুর, লেক বা নদী বৃদ্ধি করে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে হবে। অতিমাত্রায় পানি তুললে এই উৎসটি আর নবায়ণযোগ্য থাকে না। তাই অতিমাত্রায় পানি তোলা বন্ধ করতে হবে।

    এইবাংলা /নাদিরা শিমু/Ns

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর