নিজস্ব প্রতিবেদক :::
চট্টগ্রামের আলোচিত ঋণ খেলাপি জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের পক্ষে গ্রেফতারী পরওয়ানা ‘ রিকল’ চেয়ে চট্টগ্রামের অর্থ ঋণ আদালতে আবেদন করেন বিবাদী পদ্মা ব্যাংক। আসামি জসিম উদ্দিনের পক্ষে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া এমন আবেদনের পর আদালত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক’কে শোকজ করেছে।
আদালত সুত্র জানায়, জেসিকা গ্রুপের নেয়া ৮৮ কোটি টাকা ঋনের ২৫ শতাংশ হিসেবে ২২ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় এবং তারিখবিহীন চেক প্রত্যাখ্যান হওয়ায় ডিক্রিদার পদ্মা ব্যাংকের করা মামলায় জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী করেছিলো আদালত। কিন্তু আরেকটি আবেদনে বিবাদীর বিরুদ্ধে ইস্যু করা ওয়ারেন্ট রিকল এবং সম্পত্তি জব্দের আদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায় পদ্মা ব্যাংক। তবে আসামি জসিম উদ্দিনের ওয়ারেন্ট রি কল চেয়ে ব্যাংককের পক্ষে যৌথ দরখাস্তটি না মঞ্জুর করেছে আদালত।’
আদালতে আদেশে আগামী ৯ মে এর মধ্যে পদ্মা ব্যাংক এমডিকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, ‘অর্থঋণ আদালত আইনের ৩৪ (৬) ধারা অনুযায়ী, ৮৮ কোটি টাকার ২৫ শতাংশ হিসেবে ২২ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় এবং তারিখবিহীন চেক গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় ডিক্রিদার পদ্মা ব্যাংকের যৌথ দরখাস্ত না মঞ্জুর করেন আদালত।’
আদালতের নথি সূত্রে জানা গেছে, ‘পদ্মা ব্যাংকের ৮৮ কোটি টাকার ঋণ খেলাপীর দায়ে চট্টগ্রামের জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট এবং সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেয়া হয়েছিলো। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কোনো লিখিত মঞ্জুরিপত্র ছাড়া বিবাদীর পক্ষে দরখাস্ত করায় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে আবেদন না মন্জুর করে আদালত।
জানা যায় পদ্মা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে নেওয়া ৮৬ কোটি ৭২ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ না করায় গত ২৯ শে এপ্রিল চট্টগ্রামের জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমেদের সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছিলো অর্থঋণ আদালত।চট্টগ্রামের অর্থ ঋণ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।এর আগে গত ৪ এপ্রিল একই আদালত জসিম উদ্দিন আহমদকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো।
এবিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, ‘আসামি তৎকালীন ফার্মাস ব্যাংক (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) থেকে প্রায় ৬০ কোটি ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণ পরিশোধ না করায় ২০২০ সালে মামলাটি দায়ের করা হয়।’
তবে ব্যাংকের তরফ থেকে আসামি জসিমের ওয়ারেন্ট রি কলের আবেদনের বিষয়টিকে ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই প্রবাদের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন ‘ সুশীল সমাজ। জসিম উদ্দিন কক্সবাজারে হোটেল রামাদা ইন্টারন্যাশনালেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চট্টগ্রামের চন্দনাইশের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবার ঘোষণা দেবার পর অর্থঋণ আদালতের এমন আদেশ বিপত্তি তৈরি করলে, পদ্মা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে আভ্যন্তরীণ সমঝোতার মাধ্যমে ওয়ারেন্ট রি কলের চেষ্টা করেন জসিম উদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় একশো মসজিদ নির্মাণ, অবিবাহিত যুবক যুবতীর বিনা খরচে বিয়ের ঘোষণা দেন জসিম উদ্দিন। এলাকায় দানদক্ষিণা ঘোষণা দেবার পর তার ব্যাংক লুটপাটের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷
সুত্রমতে, শুধু পদ্মা ব্যাংক নয় নির্বাচনে জিতে আসতে এলডিপির সাথে দফারফা করেছেন ঋন খেলাপি জসিম উদ্দিন। নির্বাচনী সমাবেশে কর্ণেল অলি আহমদের গুণগান গেয়ে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে তাকে। এছাড়া জসিম উদ্দিনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে প্রচারণায় দেখা মিলছে চন্দনাইশ এলডিপির সভাপতি আইনুল কবিরের। আইনুল কবিরও চেক প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জামিনে বের হয়েছেন।