সায়েক এম রহমান।।
কিছু দিন আগেও আমরা আমাদের জেনারেশন নিয়ে হাটে-মাঠে-ঘাটে নানা কথা শুনেছি। এখনকার জেনারেশন নাকি টিকটক জেনারেশন ! যারা দিনরাত স্মার্ট ফোন নিয়ে বসে থাকে! লেখাপড়া কখন করে সেই বিষয়েও অভিভাবকদের নানা প্রশ্ন ! ছাত্র ছাত্রীরা বিদেশমূখী! সব মিলে যে জেনারেশন নিয়ে গার্ডিয়ানরা হতাশায় ছিলো। কিন্তু না, আসলে না ! আমরা মোটেই হতাশায় না!
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। এইতো সেদিন ২০১৮ সালে আমাদের প্রজন্ম তরুন ছাত্র সমাজের কোটা বিরোধী আন্দোলনের কথা। সেই দিন ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের কলিজা কেঁপে উঠেছিলো। দাবি পূরণ করতে বাধ্য হয়েছিল। অতঃপর দুইজন কোমলমতি স্কুল ছাত্রের গাড়ির চাপায় মৃত্যুর পর কোমলমতি ছাত্রদের “নিরাপদ সড়ক চাই “ছাত্র আন্দোলন ২০১৮ । সেই ছাত্র আন্দোলনের কথা অবশ্যই আপনাদের মনে আছে। যাদের মনে নেই তাদের একটু স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। অনেকেই সেই আন্দোলনকে “কিশোর আন্দোলন” হিসাবে উল্লেখ করেছেন। সেই দিন কিন্তু সেই “কিশোর আন্দোলন” বাংলাদেশের একটি যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।
নিরাপদ সড়ক চাই দাবিতে টিন- এইজ ছাত্রদের নেতৃত্বে পুরো বাংলাদেশ এক হয়েছিল। তারা নিজেই ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে দেখিয়েছিলো। ট্রাফিক কীভাবে চালাতে হয়। সেই দিন তারা ৪৭ বৎসরের আবর্জনা দেখিয়ে দিয়েছিলো। সেই দিন ফ্যাসিষ্ট সরকারের দাপুটে মন্ত্রী, এমপি, সচিব, পুলিশ, ও মিডিয়া সহ অনেকেই বিভিন্ন ভাবে ট্রাফিকে কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের কাছে ধরা খেয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়! বিশ্ব মিডিয়ায় ও লজ্জিত হয়েছিলেন চরম ভাবে। যা কখনও কল্পনাও করা যায় নাই। তারা অসম্ভব কে করেছিলো সম্ভব।সেই দিনই আমরা বুঝেছি আমাদের প্রজন্ম তরুণ জাগ্রত রয়েছে।
অতঃপর ” কিশোর আন্দোলন” ২০১৮ এর ঠিক ছয় বৎসর পর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি যখন একে একে গভীর অন্ধকারে নিমর্জিত। দিকে দিকে গণ-মানুষের গগণবিদারী চিৎকার! সতের বৎসর যাবৎ নেই মানবাধিকার, নেই ভোটের অধিকার, নেই স্বাধীনতা। চলছে সংবিধান লুট, আদালত লুট, ব্যাংক লুট, সোনা লুট, কয়লা লুট এবং নির্বিচারে খুন-গুম ও ধর্ষণ ঠিক তখনই “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” ২০২৪, বিশ্বে- যুগান্তকারী এক ইতিহাস সৃষ্টি করলো। যে আন্দোলন টি ছাত্র – জনতার আন্দোলন নামে পরিচিত লাভ করেছে। অনেকে “আগষ্ট বিপ্লব” নামেও অবহিত করছেন।
আগষ্টের ৫ তারিখের পর মানুষ একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে। প্রজন্ম তরুন ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদ পরাজিত হয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম তরুণ ছাত্র – জনতা এই জাতির ভবিষ্যৎ, তারা-ই আগামীর বাংলাদেশ, তারা-ই দেশের মালিক। তাই তারা হয়েছিল উদ্যমী! ওরা-ই দেশের বীর, ওরা চঞ্চল, ওরা প্রতিবাদী, ওরা আমাদের গৌরব। ওরা দেখিয়ে দিয়েছে ছাত্র আন্দোলন কত সুশৃঙ্খল! তাদেরকে শত সহস্র বার স্যালুট এবং সহীদ বীর আবু সাঈদ সহ সকল শহীদের জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বাংলাদেশ একটা নিঃশ্বাস ফেলেছে! নতুন প্রজন্ম আমাদের কনফিডেন্স’কে অনেক উপরে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ আর ভুটান, সিকিম হবে না, জাতি এটা ভালো করে বুঝে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে সকল আন্দোলনের সূতিকাগার তা আবার প্রমান হলো। ওরা-ই পারবে বাংলাদেশ কে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে। বাংলাদেশ আর পথ হারাবে না। তারা দেখিয়ে দিয়েছে বায়ান্নর ছাত্র আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি, তারা দেখিয়ে দিয়েছে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। তারা দেখিয়ে দিয়েছে তিলোত্তমা ঢাকা নগরী কে জানজট মুক্ত করতে এবং সুন্দর্য্যমন্ডিত করতে কি করতে হয়? বাংলাদেশ এগিয়ে চলো।।
লেখকঃ
লেখক ও কলামিস্ট
সহ সভাপতি
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি