26 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

সিএনজি জসিমের সাম্রাজ্যে ফজলে করিম ও হাসান মাহমুদের হাজার কোটি

আরও পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

চট্টগ্রামের  রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার জোরে তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ফজলে করিম চৌধুরী ও ড. হাসান মাহমুদ। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল ; পুরো সময় জুড়ে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রামরাজত্ব কায়েম করেন ফজলে করিম চৌধুরী ও হাসান মাহমুদ। 

দীর্ঘ ষোল বছর ধরে ফজলে করিম চৌধুরী ও ড. হাসান মাহমুদের অবৈধ উপার্জনের বিপুল অর্থ মধ্যপ্রাচ্যের আজমাইনে লগ্নি করেছেন নোয়াপাড়ার প্রবাসী জসিম উদ্দিন ( প্রকাশ সিএনজি জসিম)।

সুত্রমতে, শুধু ফজলে করিম চৌধুরীর পনের শত কোটি টাকা দুবাইয়ের বিভিন্ন শহরে আবাসন ও ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ করেছেন সিএনজি জসিম। এরমধ্যে আজমাইন শহরের সৌদি জার্মান হসপিটালের পেছনে চল্লিশ বিঘা ক্রয় করেছেন সিএনজি জসিম। বিনিয়োগকৃত অর্থের  পুরোটাই রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর৷

দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যের  দুবাই শহরে ব্যবসা করছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির প্রবাসী রফিক আহমেদ। জানতে চাইলে রফিক আহমেদ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে আবাসনখাতে বিনিয়োগ করেছেন ফজলে করিম চৌধুরী ও ডঃ হাসান মাহমুদ। রাউজানের সিএনজি জসিম এই দুই আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ টাকা দুবাইয়ের আজমাইনে বিনিয়োগ করেছেন। ‘

এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন ওমান-বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের  কয়েকজন নেতা ফজলে করিম চৌধুরীর অর্থ বিনিয়োগ সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। তারা জানান, ড. হাসান মাহমুদ ও ফজলে করিম চৌধুরী বিদেশে অর্থ পাচার করে বিনিয়োগের জন্য কয়েকজন চিহিৃত প্রবাসী ব্যবসায়ীর সাহায্য নিয়েছেন। তাদের সবাই প্রবাসে একসময় শ্রমিকের কাজ করলেও অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ করে বনেছেন ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ ‘ ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  অবৈধ অর্থ বিদেশে সরিয়ে নিতে সাহায্য করার প্রতিদান হিসেবে সিএনজি জসিমের ছেলে যোবায়ের সিআইপি (কমার্শিয়াল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে তদবির করেন ড.হাসান মাহমুদ।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা জানান,  ‘ শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে  সোনা চোরাচালনের বড় অংশই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন ফজলে করিম ও ড. হাসান মাহমুদ চৌধুরী। হাসান মাহমুদের ভাই খালেদ মাহমুদ ও এরশাদ মাহমুদ চট্টগ্রামের  স্বর্ণ চোরা চালান ও হুন্ডি ব্যবসার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতেন – এমন তথ্য গোয়েন্দা শাখায় রয়েছে। আর ফজলে করিম চৌধুরীর হয়ে সোনা চোরাচালানের বিষয়টি দেখভাল করতেন তার ব্যক্তিগত সহকারী সুমন। সোনা চোরাচালানের রূট নিয়ন্ত্রণে  এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক জিএস, নগর আওয়ামী লীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু ও পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য, হুইপ শামসুল আলমের ছেলে শারুনকে ব্যবহার করেছেন ড. হাসান মাহমুদ। ‘

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন ফজলে করিম চৌধুরী। ফজলে করিম চৌধুরীর প্রত্যক্ষ মদদে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়।

রেলওয়ে  পূর্বাঞ্চলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম  প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানান, ‘ গত ১৬ বছরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান কার্যালয়ের সব টেন্ডার এবং ইজারা নিয়ন্ত্রণ করতেন শাহআলম, নগর আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর,আইয়ুব আলী। এই তিনজনের সিন্ডিকেটকে মূলত শেল্টার দিতেন ফজলে করিম চৌধুরী। ‘

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ ২০০৮ সালের পর চট্টগ্রামের রাজনীতিতে শীর্ষ প্রভাবশালী হিসেবে আবির্ভূত হন। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে জলবায়ু তহবিলের অর্থ লোপাট করে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন ২০১৫ সালে৷ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র, শীপ বিল্ডিং ও ব্রেকিং শিল্পের ছাড়পত্রের নামে শতকোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন তিনি।

দেশ ছেড়ে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া চট্টগ্রামের এক শীর্ষ শিল্পপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানান, ‘ ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল; সরকারের প্রথম মেয়াদে সীতাকুণ্ডের অধিকাংশ শিপব্রিকিং ইয়ার্ড নামে বেনামে দখলে নেন হাসান মাহমুদ ও তার সহযোগীরা৷ সীতাকুণ্ডের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ( পরবর্তীতে সংসদ সদস্য)  মামুনের দখলবাজির গডফাদার হিসেবে কাজ করেছেন ড. হাসান মাহমুদ। ‘

নিজের স্ত্রীর নামে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা খুলে জলবায়ু তহবিলের অর্থ আত্মসাত করেন ড.হাসান মাহমুদ। মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ‘সুখী বাংলা ফাউন্ডেশন  ‘ নামের একটি এনজিও খুলে সেটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজে ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজের স্ত্রীর নাম দেন৷ কাগুজে  প্রতিষ্ঠান খুলে জলবায়ু  তহবিলের চব্বিশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন ডঃ হাসান মাহমুদ। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সেই প্রতিবেদনও ক্ষমতার জোরে সরিয়ে  নেওয়া হয় । চট্টগ্রামের আদালতে  মামলা করা হয় সেই টেলিভিশনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।

প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারের প্রথম মেয়াদে  পরিবেশ ফান্ডে (জলবায়ু) বাংলাদেশ প্রচুর টাকা পেয়েছিলো । নয়টা এনজিও’র মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায়  বিন ব্যাগ সরবরাহ, রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পে জলবায়ু তহবিলের  টাকা বিতরণ করা হয়েছিলো , যার প্রত্যেকটির সাথে জড়িত ছিলেন হাছান মাহমুদ নিজেই।”

জয়েন্ট স্টকের নথি অনুযায়ী, জলবায়ু ফান্ডের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা ‘সুখী বাংলা ফাউন্ডেশন’এর চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড.হাসান মাহমুদ। নথিতে সাত নং ক্রমে ড.হাসান মাহমুদের স্ত্রী নুরান ফাতেমা এই ফাউন্ডেশনের সদস্য। হাসান মাহমুদের ভাই মোরশেদ মাহমুদ ও খালেদ মাহমুদও ফাউন্ডেশনের সদস্য ছিলেন। এভাবে কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে জলবায়ু তহবিলের অর্থ লুটপাট করেন ড.হাসান মাহমুদ ও তার পরিবার।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর