:::রাহাত আহমেদ :::
ক্রমাগত বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিলে নতুন হতাশা যোগ হচ্ছে মধ্যেবিত্ত ও নিম্ম মধ্যবিত্তের। আয় না বাড়লেও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ, গ্যাস সাধারণ মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। বিশ্ববাজারে নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি না হলেও সরকার বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়িয়েছে ।
বলা হচ্ছে আইএমএফের শর্ত প্রতিপালনের জন্য আবারও খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ৮ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিমাসে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বাধ্য সাধারণ হতাশ । ফলে ঘরের ‘বাতি ‘ এখন বিলাসবহুল পন্যের মতোই হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নতুন বছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে একই মাসে দ্বিতীয় বারের মতো বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ এর দাম। এরআগে জানুয়ারি মাসেও দুইদফায় খুচরা ও পাইকারী পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ানো হয়েছিল। যদিও সরকার এর আগেই আভাস দিয়েছিল যে, এখন থেকে প্রতিমাসেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা হতে পারে । পাশাপাশি বিশ্ববাজারের সাথে মিল রেখে জ্বালানি তেলের দামও সমন্বয়ের পথেই হাঁটছে সরকার।
সাধারণত গণশুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু ১লা ডিসেম্বর থেকে সেই আইনেও আনা হয়েছে সংশোধন । এরমধ্যে গত চৌদ্দ বছরে পনের বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ এর দাম।
সরকারের নির্বাহী আদেশে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) রাতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ বিভাগ। ১ লা মার্চ থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে। এমন সিদ্ধান্ত সংসার চালানোর খরচ যেমন পড়েছে তেমনিভাবে বেড়েছে প্রান্তিক কৃষকদের কৃষিজ উৎপাদনের খরচও। আবাসিক গ্রাহকদের অনেকেই বাতি জ্বালানো এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্য ব্যবহার কমিয়ে আনা ছাড়া কোন উপায়ই দেখছে না।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৪ টাকা ১৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৫, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৩১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৯৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা করা হয়েছে।
আবাসিক গ্রাহক ছাড়াও বেড়েছে সব ধরনের বিদ্যুতের দাম। এরমধ্যে কৃষি, ধর্মীয়, দাতব্য, হাসপাতাল, রাস্তার বাতি, পানির পাম্প, ক্ষুদ্র শিল্প, শিল্প, বাণিজ্য, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। ক্যাবের এক জরিপে দেখা গেছে, ১০ বছরে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১২৫ শতাংশ, কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি।
পরিবার নিয়ে রাজধানীতে বসবাস করেন স্কুল শিক্ষিকা সাবরিনা জাফর বরেন, ‘ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। হিসাব করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, তাও মাসে বিল আসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। টিভি, ফ্রিজ তো বন্ধ করেও রাখতে পারি না। এখন সরকার বিল আরও বাড়িয়েছি, কারেন্টের বিল তো আমার বাজেট ছাড়িয়ে যাবে। ‘
জ্বালানি তেল, সার, শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাবার কারণে কৃষিকাজের খরচ বেড়েছে বহুগুণ। দেশের বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পারিবারিক খরচ বাড়াবে; কৃষিখাতে নতুন করে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি. ১৬ পয়সা বৃদ্ধি – চাষাবাদে অনীহার মাত্রা বাড়াবে। উৎপাদিত পণ্যের নায্য দাম না পাওয়াসহ নানা কারণে এমনিতেই প্রান্তিক কৃষকদের চাষাবাদে অনীহা তৈরি হয়েছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিলার মেশিন ও পানির পাম্প, সার, কীটনাশক, বীজ, শ্রমিকসহ সবকিছুর জন্য এখন প্রতি বিঘা জমির জন্য প্রায় ১৯ হাজার ৯০০ টাকা খরচ হচ্ছে। গত বছর সেই খরচ ছিল ১৪ হাজার ৯০০ টাকা।
যারা অন্যের জমিতে চাষ করেন, তাদের জন্য এবার বোরো চাষ করে লাভ করা আরও কঠিন হবে বলে মনে করেন নাটোরের কৃষক জলিল মিয়া।
তিনি বলেন, ‘ বিঘা প্রতি চাষাবাদের খরচ বেড়েছে। চাষ করে ক্ষতি মাত্রা বাড়ছে। ফলে কৃষিকাজ ছেড়েছে অনেকেই শহরমুখী হবে। ‘
এরআগে ৩০ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ও পাইকারি পর্যায়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম।বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাপ সামলাতে এ বছর প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করছে সরকার। আজ বাড়ানোর মাধ্যমে গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম।