::: বিশেষ প্রতিনিধি ::
বৃটিশ বাংলাদেশী রাজা মিয়া। ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করছেন দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে। শিক্ষকতা জীবনেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে মরণব্যাধি ক্যানসার। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য রাজা মিয়া ক্যান্সারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিয়মিত রচডেলে সক্রিয় সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম। তার জনপ্রিয়তার জন্য কনজারভেটিভ পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন রাজা মিয়া। আসছে মাসে অনুষ্ঠিত হবে রচডেল সিটি কাউন্সিলের নির্বাচন। গেল ১৫ ই এপ্রিল রচডেল মেট্রোপলিটন কাউন্সিল নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে যোগ দিয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋসি সুনাক। প্রধানমন্ত্রী হবার পর রচডেলে দ্বিতীয় সফর ঋষি সুনাকের।
বিরোধী দল লেবার পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রচডেল এলাকায় ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির জন্য ভোট টানতে ক্যাম্পেইন অংশ নিয়েছেন খোদ দলটির লিডার ও বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। কনজারভেটিভ পার্টি থেকে এবারের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন একই পরিবারের দুই বৃটিশ বাংলাদেশী। রাজা মিয়া ও সালেহা বেগম – সম্পর্কে দুজন ভাইবোন। বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়। সামাজিক কার্যক্রমে ইতিমধ্যে দুইজনই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ঋসি সুনাক সফরে এসে যোগ দিয়েছেন দলের চার বৃটিশ বাংলাদেশি কাউন্সিলর প্রার্থী পক্ষে।

২০ টি ওয়ার্ডে ৭২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবারের নির্বাচনে। ৪ ঠা মে সকাল থেকে শুরু হবে সিটি কাউন্সিলের ভোট গ্রহন। এবার চার বৃটিশ বাংলাদেশী কনজারভেটিভ পার্টি থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে লেবারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে রচডেল মেট্রোপলিটন কাউন্সিলে৷ সর্বশেষ লেবার পার্টির আলী আহমেদ নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। আলী আহমেদও একজন বৃটিশ বাংলাদেশী।

রাজা মিয়ার বোন সালিয়া বেগম পেশায় একজন নার্স। ম্যানচেস্টার হাসপাতালে চাকরির পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতিতে। এবারের নির্বাচনে এই দুই ভাইবোন কাউন্সিলে নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিতে চান। রাজা মিয়া নির্বাচন করছেন মিল্কস্টোন এন্ড ডিপলিস ওয়ার্ড থেকে। স্মলব্রিজ এন্ড পিরগ্রুভ ওয়ার্ড থেকে লড়ছেন সালিয়া বেগম। আর সেন্ট্রাল ওয়ার্ডে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরেক বৃটিশ বাংলাদেশী সাজান আলী । সাজান আলী পেশায় এনএইচএস’র ম্যানেজার।
আরও একজন বৃটিশ বাংলাদেশী প্রার্থী ‘ইব্রাহিম খলিল’ সমানতালে আছেন ভোটের মাঠে। গ্রেটার ম্যানচেস্টারের রচডেল বারা কাউন্সিলের কিংসওয়ে ওয়ার্ডে এবার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল।

এই চার বৃটিশ বাংলাদেশি লেবারের দুর্গে হানা দিতে চান এবার। সমানতালে ভোটারদের মন জয় করার লড়াইয়ে মাঠে আছেন এই চার বাংলাদেশী।

জানা যায়, বাংলাদেশী ছয় হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা বসবাস করছেন এই কাউন্সিলে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নাগরিক বসবাস করেন রচডেলে। এই কাউন্সিলটি দীর্ঘদিন বিরোধী দল লেবারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে কাউন্সিলররা নাগরিকদের সেবা দিতে পারেন নি। সোশাল হাউজিংএর সংকটের ভোগান্তির চরমে পৌঁছেছে৷ ড্রাগ ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাও দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার নজরদারির অভাবে প্রায়ই ড্রেন ব্লক হয়ে সৃষ্টি করে জলজট। একারণে এবারের নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল চান অধিকাংশ নাগরিক। একারণে লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ভোটে মাঠে।
মিল্কস্টোন এন্ড ডিপলিস ওয়ার্ডে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী রাজা মিয়া দলের মনোনয়ন পাবার পর থেকে প্রশংসায় ভাসছেন। ক্যান্সারের ( লিউকেমিয়া) সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া রাজা মিয়া এবার জয় করতেন চান কাউন্সিলরের পদও৷ তিনি বলেন, ‘ দীর্ঘদিন লেবারের কাউন্সিলররা স্থানীয় বাসিন্দাদের সোসাল হাউজিং সংকটের সমাধান করতে পারেন নি। ড্রেন ব্লক হয়ে প্রায়ই পানি উঠে এলাকায়। ড্রাগের মতো সামাজিক ব্যাধি চরম আকার ধারন করেছে। ওয়ার্ডে এন্টি স্যোসাল কার্যক্রম, পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা কমাতে নেতৃত্বের পরিবর্তন হওয়া জরুরি। ‘
জানা যায়, রচডেল মেট্রোপলিটন কাউন্সিলের ৬০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৪৪ জন কাউন্সিলরই লেবারের। কনজারভেটিভ পার্টির কাউন্সিলের সংখ্যা মাত্র ৯ জন। বাকিরা লিবারেল ডেমোক্রেটস পার্টি ও গ্রিন পার্টি ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলর।আগামী ৪ মে ব্রিটেনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এদিন সারাদেশের মেট্রোপলিটন, ডিস্টিক্ট, ইউনিটারি ও বারা কাউন্সিলসহ মোট ২৩০টি অথরিটিতে ভোটগ্রহণ হবে। চারটি কাউন্সিলে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন মেয়র।
এইবাংলা / তুহিন