25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

দুদকের ছাড় দেবার প্রত্যাশায় গুঁড়েবালি

আরও পড়ুন

::: অপু ইব্রাহিম ::

কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির অবৈধ গ্যাস সংযোগ স্থানান্তরের মামলায় আসামীদের ছাড় দেবার প্রত্যাশা শেষ পর্যন্ত গুঁড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানসহ পাঁচ আসামির বিষয়ে এফআরটি আদালত গ্রহন না করার কারণে বিচার কার্যক্রম শুরুর কোন বিকল্প নেই। সাবেক উপ সহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিনের করা  দুর্নীতির মামলায়  কমিশনের নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুল আলম আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হবার যুক্তি দেখিয়ে  চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন। এফআরটির অনুমোদন আমলে না নিয়ে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ-স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ দেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জেবুননেসা।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে সরাসরি আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেবার কারণে দুদকের পক্ষ থেকে  উচ্চ আদালতে রিভিউর সুযোগ বন্ধ হয়েছে।

২০২১ সালের ১০ জুন দুদকের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক (বর্তমানে চাকরিচ্যুত) শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা এম এ সালামের (বর্তমানে মৃত) নামে বরাদ্দ করা ১৮টি অব্যবহৃত দ্বৈত চুলার গ্যাস–সংযোগ ছিল। এর মধ্যে ১২টি নগরের চান্দগাঁও সানোয়ারা আবাসিক এলাকার গ্রাহক মুজিবুর রহমানের নামে স্থানান্তর করা হয়। এ কাজে সালামের স্ত্রীর নামে ভুয়া চুক্তিনামাও করা হয়।

পুর্নাঙ্গ রায়ের নথিতে আদালত উল্লেখ করেছে এই মামলার বাদি ও তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকেরই কর্মকর্তা। তিনি উপযুক্ত প্রমাণ বাদি এফআইআরে সংযুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে একই সংস্থার অন্য কর্মকর্তা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হবার যুক্তি দেখিয়েছেন ; যা দুই ধরনের তদন্তের সাংঘর্ষিক তথ্য। ২২টি অবৈধ সংযোগ বিপণন বিভাগের ভিজিল্যান্স টিম অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্নও করেছে ; যার মাধ্যমে  অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

আদালত রায়ের নথিতে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে করা অন্য একটি দুর্নীতি  মামলাকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণের কথা উল্লেখ করেছেন। তাই চুড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচ যুক্তিতে আসামিদের অব্যাহতি দেবার কথা বলা হলেও  আইনের চোখে অভিযুক্তদের  প্রাথমিক অপরাধ প্রমাণিত।

রায়ের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এক গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ   অবৈধভাবে অন্যজনের নামে স্থানান্তর করার কারনে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের অদক্ষতা প্রমাণিত হয়। আদালত একইসাথে ৯ই মে’র মধ্যে অভিযুক্তদের অনুকুলে ওয়ারেন্ট জারির নির্দেশনা দিয়েছেন। যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অপরাধীদের অপরাধ প্রমাণিত, একইসাথে সংযোগ স্থানান্তরের বিষয়ে গ্রাহক নুরজাহান সালামের অভিযোগ না থাকা, নির্ধারিত বিল পরিশোধ করা, আর্থিক লেনদেন প্রমাণিত না হওয়াসহ পাঁচটি যুক্তি উপস্থাপন করেছেন – যা মামলা দায়েরের মেরিটকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘  দুদক কোনো মামলার এজাহার দায়ের করার আগে ঘটনার অনুসন্ধান করে থাকে। প্রাথমিক সত্যতা পেলে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে তারপরই এজাহার দায়ের করে।তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে সরাসরি আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়েছেন। আদালতের এ পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। ‘

এরআগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি  দুদক প্রধান কার্যালয়ের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হকের সই করা একটি চিঠিতে তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা সাক্ষ্য-স্মারক ও অন্য কাগজপত্র পর্যালোচনায় উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় দুদক আইন–২০০৪–এর ৩২ ধারা এবং দুদক কমিশন বিধিমালা ২০০৭–এর বিধি ১৫ উপবিধি ১–এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দিয়েছিল সংস্থাটি৷গত ৩০ মার্চ মন্ত্রীপুত্রসহ পাঁচজনকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল দুদক।

পাঁচ ব্যক্তি হলেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন, তৎকালীন দক্ষিণ জোনের টেকনিশিয়ান (সার্ভেয়ার) মো. দিদারুল আলম, ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও গ্রাহক মন্ত্রীর ছেলে মুজিবুর রহমান।

এইবাংলা / তুহিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর