24.5 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

চসিক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দুরত্ব

আরও পড়ুন

নাদিরা শিমু ::

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালক ও এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানির উপর কার্যালয়ে ডুকে হামলার ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে চসিক ও মন্ত্রণালয়ের দুরত্ব। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে এই হামলার প্রতিকার চেয়ে এলজিইডির প্রকৌশলীরা। সোমবার প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে পনেরজন প্রকৌশলী মন্ত্রীর সাথে দেখা করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তাদের মধ্যে দুজন প্রকৌশলী জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ধারাবাহিক দূর্নীতির লাগাম টানতে ড. গোলাম ইয়াজদানিকে প্রকল্প পরিচালক ( আড়াই হাজার কোটি টাকার) হিসেবে নিয়োগ দেবার বিষয়টি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা ভালো ভাবে নেন নি। ১৪ আগস্ট আবু সাদাত তৈয়বকে একনেক অনুমোদিত প্রকল্পটির পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে। মাস না গড়াতেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ডঃ গোলাম ইয়াজদানিকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে টেন্ডার প্রক্রিয়াকে নানা জটিলতার মুখোমুখি করা হয়েছে। টেন্ডার বিক্রি আর চসিকের শীর্ষ কর্মকর্তাদেন কমিশন বাণিজ্যের বিষয়টি ঠিকাদারদের মুখে মুখে রটে যায়। অতীতের মতো কমিশনের মাধ্যমে কাজ দিতে রাজি না হবার কারণে লাঞ্চিত হতে হয়েছে ইয়াজদানীকে। হামলার ঘটনায় চসিকের একটি মহলের ইন্দনের অভিযোগ তুলে মন্ত্রীকে সব অভিযোগ জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।

যদিও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রফিকুল ইসলামের নাম প্রকল্প পরিচালক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিলো শুরুতে। সেই প্রস্তাবে সায় দেয় নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। উল্টো স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানিকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়। সুত্রমতে, এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ের একাধিকবার চিঠি দেয় চসিক,যার কোনটাই আমলে নেয়া হয় নি।

এছাড়া গত বছরের আগষ্ট মাসের শেষে ইজিপি পদ্ধতিতে আহবান করা একটি দরপত্রে অধিক মুল্যে (৯% অধিক মুল্য) বাকলিয়া সড়ক উন্নয়নের কাজ দেয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় চসিকের প্রকৌশলী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অধিক মুল্যে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চুড়ান্ত করার পরও সেই দরপত্রটি রিটেন্ডার করা হয় ১৯ শে সেপ্টেম্বর। গোলাম ইয়াজদানি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগ দেবার পর এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।

সুত্রমতে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় আভ্যন্তরীণ ইন্দনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অনুসন্ধান করছে দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। চসিকে ঠিকাদারি ব্যবসার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এরমধ্যে ১৭ টি প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি জামাত সংশ্লিষ্টতা এবং ১৪ টি প্রতিষ্ঠানের সাথে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীদের পার্টনারশিপের তথ্য মিলেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল ও বিদ্যুৎ উপ বিভাগের এসব প্রকৌশলীদের চিহ্নিত করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রকৌশলীদের সাথে পার্টনারশিপে জামাত ঘরনার ঠিকাদাররা একচেটিয়া ব্যবসা করে আসছে নাছির, রেজাউল দুই মেয়রের আমলেই৷ বিপ্লব উদ্যান ইজারা দেয়াসহ বিভিন্ন প্রকল্পে জামাত সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগও তদন্ত করছে সংস্থাটি। গোয়েন্দা সংস্থার একটি সুত্র মতে, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, বিদ্যুৎ উপ বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ, সরকারি প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সিটি এসবিকে। হামলার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের সাথে এসব প্রকৌশলীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ঠিকাদারী করার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুটি সংস্থাই৷

জানা যায়, চসিকে যোগ দেবার আগেই এলওসি (লাইন অব ক্রেডিট) ফান্ডের ২৬০ কোটি টাকার একটি এলইডি বাতি প্রকল্পের দরপত্রে অনিয়ম, একনেক অনুমোদিত ডিপিপি পরিবর্তনের মতো অসঙ্গতি পাবার পর প্রকল্পটি রি টেন্ডার করার মতামত দিয়েছিলেন হামলার শিকার হওয়া প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানি। হামলার সাথে বৃহৎ এই প্রকল্পটির রি টেন্ডার মতামতের সম্পর্কে আছে কিনা-সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত বলে জানিয়েছেন ঠিকাদাররা। এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ। সুত্রমতে, ঝুলুন কুমার দাশের সাথে হামলাকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কন্কন ও সুভাষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ইয়াজদানীকে মারধরের ঘটনায় আশীষ, কন্কন, সুভাষের সম্পৃক্ততাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অনেকেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর