25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

গরু বেড়েছে তবুও বাড়তি দামেই ‘গরুর মাংস’

আরও পড়ুন

::: নাদিরা শিমু :::

প্রতি দশ বছর পর কৃষিশুমারী হয়, সর্বশেষ ২০১৯ সালের সেই কৃষিশুমারী অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে গরু – ছাগল উৎপাদন বেড়েছে। শুমারী অনুযায়ী দেশে গত এক দশকে প্রায় ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার গরু বেড়েছে এবং ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে ৩১ লাখ ২৬ হাজার। সারাবিশ্বে গরু উৎপাদনে দ্বাদশ স্থানে আছে বাংলাদেশ। কিন্তু গরুর মাংসের দাম দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এই বাংলাদেশে।

রমজানকে পুঁজি করে আরেক দফা  বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। শবে বরাতের আগেই গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় ওঠে। রমজানের আগের দিনও বাজারে পুর্বের দামের আশপাশে বিক্রি হয়। প্রথম রমজান থেকে গরুর মাংস কেজিতে ১০০ টাকা  থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন মনে করেন , ‘ দেশে খামার বেড়েছে,একইভাবে মাংসের দামও বেড়েছে। অথচ দুবাইয়ে কোনো গরুর খামার নেই। সেখানে গরুর মাংস অন্য দেশ থেকে  আমদানি করে মাংস বিক্রি করা হয়। তারপরেও দুবাইয়ে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকা। ‘

কমডেটি এক্সচেঞ্জের তথ্য  অনুযায়ী, ভারতে প্রতি কেজি গরুর মাংস কেনা যায় ১৭৫ রুপিতে, টাকার হিসেবে ২১৪ টাকা। পাকিস্তানেও গরুর মাংসের দাম ৬০০ রুপিতে, টাকার হিসেবে দুইশ ত্রিশ টাকা৷ নেপালে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম . ৭৬ ডলার, প্রায় আশি টাকা। ভুটানে ২০৭ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস মিলে। মিয়ানমারে ৫.৬৬ ডলার প্রায় ৫৬৭ টাকায় প্রতি কেজি  গরুর মাংস বিক্রি হয়। দুবাইয়ে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকা।

গরু উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় সারাবিশ্বে  ভারতের অবস্থান অনেক দুরে হলেও, ভারত গরুর মাংস ভোগের তালিকায় পঞ্চম। ২০২২ সালে দেশটিতে ২৯ লাখ মে. টন গরুর মাংস খাওয়া হয়েছে। পাকিস্তান এই তালিকায় অষ্টম অবস্থানে আছে৷ ২০২০ সালে পাকিস্তান গরু মাংস খাওয়া হয়েছে ১৭.৫ লাখ মেট্রিকটন।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকাশিত তথ্য বলছে, সারা বিশ্বে ২০২০ সালে প্রায় ১৪৬ কোটি ৮০ লাখ গরু পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ২১ কোটি ১৭ লাখ পালনের মাধ্যমে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারত ১৮ কোটি ৯০ লাখ, তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীন ১১ কোটি ৩৫ লাখ, চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ৮ কোটি ৯২ লাখ এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা ইথিওপিয়ায় ৫ কোটি ৪০ লাখ গুরু পালন হয়েছে এ বছর।

সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী  গরুর সংখ্যায় শীর্ষ ১৫-তে থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা ৫ কোটি ১০ লাখ, সুদান ৪ কোটি ১৯ লাখ, পাকিস্তান ৩ কোটি ৮২ লাখ, মেক্সিকো ৩ কোটি ২৪ লাখ, অস্ট্রেলিয়া ২ কোটি ৯২ লাখ, তানজানিয়া ২ কোটি ৪৫ লাখ, বাংলাদেশ ২ কোটি ৪০ লাখ, কলম্বিয়া ২ কোটি ৩১ লাখ, নাইজেরিয়া ২ কোটি ও রাশিয়া ১ কোটি ৯৯ লাখ গরু পালন হচ্ছে চলতি বছর।

২০১৯ সালের কৃষিশুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার, যা ২০০৮ সালের শুমারিতে ছিল ২ কোটি ৫৬ লাখ ৭৮ হাজার। অর্থাৎ এক দশকে দেশে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার। কিন্তু এক দশকে গরুর মাংসের দামের আশ্চর্যজনক বৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৯ সালের সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারত থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধ হওয়ার পর দেশে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বেড়েছে। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে,  গেল চার বছরে খামারে গরুর উৎপাদন অন্তত দশ লাখ বেড়েছে। অথচ ১৯৯০ সালের দিকে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৫০ টাকা ; সেটি ২০১০ সালে ২৪০ টাকায় দাঁড়ায়। একই গরুর মাংসের দাম এখন নয়শ টাকা  অতিক্রম করেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাংস ভোক্তা দেশ হচ্ছে লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে। সারা বিশ্বে গরুর মাংস উৎপাদন ও রপ্তানিতে শীর্ষ এ দুই দেশে মাংসের দাম বাংলাদেশের চার ভাগের একভাগ। যদিও আর্জেন্টিনা-উরুগুয়ের খাদ্য তালিকায়ও গরুর মাংসের বিভিন্ন খাবারের উপস্থিতি থাকে। দুই দেশে মাংসের বারবিকিউ ও বিশেষভাবে তৈরি ‘আসাদো’ নামের একটি খাবার ব্যাপক জনপ্রিয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশে গরুর মাংসের দাম কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় নি আমদানিরোধ নীতির কারণে। ব্রাজিল থেকে  গরুর মাংস আমদানি  তাহলে প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়বে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। তাহলে আমাদের বাংলাদেশে গরুর মাংস কেজিপ্রতি কেন ৯০০ টাকায় কিনতে হবে -এমন প্রশ্নের উত্তর নেই ব্যবসায়ীদের কাছে।

এইবাংলা/তুহিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর