নিজস্ব প্রতিবেদক :::
জুলাই বিপ্লবে গোটা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবর্তন আসলেও সিভাসু যেন ব্যাতিক্রম। এখনো ফ্যাসিবাদের দোসর প্রাক্তন ভিসি ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথই যেন প্রশাসনের প্রাণ ভোমরা। অথচ উপাচার্য থাকাকালীন চট্টগ্রামের ভেটেইনারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট জন্ম দেওয়া, লালন পালন করা, পরিচর্যা সব করে গেছেন ড. নীতিশ।
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিতের বিরোধিতা করে ২০২৩ সালে বিবৃতি দেয়াদের একজন ডক্টর নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ। চট্টগ্রামের ভেটেইনারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ( সিভাসু) সাবেক এই বিতর্কিত ভিসি গত ৭ই আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে মুখ্য আলোচক হিসেবে যোগ দেন।
৭ই আগস্ট সিভাসু’র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম দোসর ডক্টর নীতিশ চন্দ্র দেবনাথের অংশগ্রহণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি হয় ক্যাম্পাসে। প্রতিবাদে কোন শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন নি। সিভাসুর প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাইদ আল নোমানও অনুষ্ঠানে যোগ দেন নি। সিভাসুর ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মচারী, কর্মকর্তা ছাড়া কোন শিক্ষার্থীকেও এই অনুষ্ঠানে দেখা যায় নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় , জোট সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত সিভাসু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কোন দিন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করতে পারেনি। ২০০৬ সালের আগস্টে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুপকার ছিলেন বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য থাকাকালীন ড.নীতিশ চন্দ্র সবখানে আওয়ামীইজম চালু করেছিলেন। ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নই যেন ছিলো তার ধ্যান।
ড. নিতীশ চন্দ্র দেবনাথ বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিতের বিরোধিতা করে ২০২৩ সালে বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়া ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র আন্দোলন দমন নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিভাসুর এক শিক্ষক বলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই উপাচার্যের অংশগ্রহণ পুরো অনুষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে পারে। বর্তমান উপাচার্য মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানের সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ‘
সাফওয়ান আহমেদ একজন ছাত্র বলেন, ‘ ড. নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ আপাদমস্তক ফ্যাসিস্ট। সিভাসু ক্যাম্পাসে তিনি ইন্ডিয়ান সব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিলেন । অনুষ্ঠান তিনি আসলে ক্যাম্পাস কলঙ্কিত হবে । জুলাইয়ের চেতনা বিরোধী এমন চক্রান্ত আমরা মানব না । ‘
সুত্রমতে, শিক্ষক হওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ড. নিতীশ চন্দ্র দেবনাথ ময়মনসিংহের লোক হওয়ার কারণে অনৈতিকভাবে ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানকে সিভাসুতে এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগে নিয়োগ দেন। অথচ তার প্রথম শ্রেণী যেমন ছিলো না তেমনিভাবে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৮ মার্কস গ্রেস পাওয়া। ৪৮ তম পজিশানে থাকা ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো অনৈতিকভাবে। ড. আহসানুল হক রোকন নামের আরেক ভাব শিষ্যকে নতুন ফ্যাকাল্টিতে অনৈতিক নিয়োগের চেষ্টা করছেন নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ।
সংশ্লিষ্টদেন মতে, নিয়ম ভেঙে নিয়োগ দেয়ার সেই কৃতজ্ঞতা থেকে অধ্যাপক মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানও ড. নীতিশের চন্দ্র দেবনাথের প্রচার ও পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।
তাছাড়া, ড. আহসানুল হক রোকন ড. নীতিশের ভাব শিষ্য হিসেবে নতুন ফ্যাকাল্টিতে অনৈতিক নিয়োগ নিয়ে চেষ্টারত বলে জানা যায় এবং তাঁর সহযোগিতায় উপাচার্য পদের জন্য তদবির চালু রেখেছে মর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রী অবগত আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ ক্যাম্পাসে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এমন তথ্য জানানোর পরও উপাচার্য তাতে কর্ণপাত করেন নি। নিজের গুরু বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সাবেক সভাপতি নিতীশ চন্দ্র দেবনাথকে মুল আলোচক করে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ সালেও বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ। নীতিশ- প্রিন্স পরিষদের প্রচারণার বিভিন্ন পোষ্টার পর্যালোচনা করে দেখা যায় বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। নির্বাচনে ৩৬০৫ ব্যালেট ছিলো সাবেক উপাচার্য নীতিশ চন্দ্র দেবনাথের। আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দীন নাসিমের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল তাকে।