26 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠছে জনতা ব্যাংক ।। নেপথ্যে দায়িত্বশীল ব্যাংকার মজিবুর রহমান

আরও পড়ুন

মোহাম্মদ মোশার্রাফ হোছাইন খান

ঋণের ভারে ভারাক্রান্ত জনতা ব্যাংক এখন অনেকটা ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে। তারল্য সংকট কাটিয়ে সচ্ছলতা ফিরে আসছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটিতে। ব্যাংকটির এমডি মো. মুজিবুর রহমানের বহুমুখী দক্ষতা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে ব্যাংকটি এ স্বচ্ছলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয় মো. মুজিবুর রহমানকে। ব্যাংক শিল্পে কেরিশমাটিক ব্যাংকার খ্যাত মো. মুজিবুর রহমান ব্যাংকটির ভঙ্গুর সবগুলো প্যারামিটার উন্নয়নে নানামুখী ইনোভেটিভ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এতে ব্যাংকটি ঘুড়ে দাড়াতে সহায়ক হচ্ছে এবং আমানতকারীদের ব্যাংকটির প্রতি আস্থা ফিরে আসছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা।

মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার সাড়ে পনেরো বছর ক্ষমতামলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে বিশ্বের সর্বাধুনিক কৌশলে, ব্যাংকের ভল্ট-লকার অক্ষত রেখে কয়েকটি বড় গ্রুপ লুটে নিয়েছে কয়েক লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশের ব্যাংক খাতের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান সোনালি, জনতা ও ইসলামি ব্যাংক এই তিন ব্যাংকের মধ্যে জনতা ও ইসলামি ব্যাংক সবচেয়ে বড় লুটপাটের শিকার হয়।

ইসলামি ব্যাংক ২০১৭ সাল থেকে হাসিনার পতন পর্যন্ত এককভাবে লুটপাট করে দেশের অর্থ খাতে আগ্নিগিরির মত উদিত হওয়া চট্টগ্রাম ভিত্তিক কঙ্লুমারেন্ট এস.আলম গ্রুপ। জনতা ব্যাংক লুটপাটে অংশ নেয় কয়েকটি গ্রুপ। এতে ছিল দেশের আর্থিক খাতের ক্যান্সার সালমান এফ রহমানদের পরিবারিক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপ, এস. আলম গ্রুপ, এ্যাননটেক্স গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপসহ আরো কয়েকটি গ্রুপ। জনতা ব্যাংকের এ গ্রুপগুলোতে বিতরণ করা লোনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালের আগস্টের ৫ তারিখে হাসিনার পালানোর পর পরই বৃহত্তর এই গ্রুপগুলোর পরিচালক, এমডি, মালিকদের অনেকে হয় বিদেশে পালিয়েছে অথবা তাদের আটক করে জেলে ঢুকিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহত্তর ব্যাংক দুইটিকে জাতীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা এনে ব্যাংক দুইটিতে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। এদিকে, একটানা সাড়ে পনেরো বছর লুটপাট ও অভিনব ব্যাংক ডাকাত চক্রের কবলে পরে দেশের বৃহত্তর আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক অস্তিত্ব সংকটের চুড়ান্ত পর্যায় পৌছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতার মেয়াদ সামনে আর তিন থেকে ছয় মাস টিকে থাকলে এই ব্যাংক দুটিকেও ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি, সোস্যাল ইসলামি ব্যাংক বা পদ্মা ব্যাংকের মতো পরিনতি বরন করতে হতো বলে জানিয়েছেন অনেকে।

এদিকে, সুদমুক্ত ব্যাংক হওয়ায় ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের জনসাধারণের মাঝে বিশেষ আস্থার জায়গা তৈরি করে নিয়েছে অনেক আগেই। এস. আলম দখলে নিয়ে ব্যাংকটির থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা ডাকাতি করলেও ব্যাংকটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মানুষের আস্থার জায়গাটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে অন্যান্য ব্যাংকগুলো ভয়াবহ আর্থিক সংকটের কবলে পড়লেও ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি নগদ তারল্যের প্রবাহ ঠিক রাখতে পেরেছে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতের অনেক বিশেষজ্ঞ।

অপরদিকে, দেশের ২য় সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক জনতা ব্যাংক গ্রুপ ডাকাতদের কবলে পড়লেও ব্যাংকটি হাসিনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণান্ত চেষ্টায় সফলতার কাছাকাছি পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানা যায়।

২০২৪ এর নভেম্বরে ব্যাংকটির এমডি পদে যোগদান করেন মো. মজবুর রহমান। মো. মুজিবুর রহমানকে ব্যাংক শিল্পে একজন কেরিশমাটিক ব্যাংকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যোগদানের মাত্র ৮ মাসের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছেন। এলসি পেমেন্টে যে বিশাল একটি গ্যাপ ছিল তার প্রায় পুরোটাই পরিশোধ করেছেন। এতে বৈদেশিক ব্যাংকগুলোতে জনতা ব্যাংকের প্রতি যে নেতিবাচক অবস্থান ছিল তা পূণরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বৈদেশিক ব্যাংকগুলোর পাওনা পরিশোধ করে বানিজ্যিক সম্পর্ক নিবিড় করা ছিল ব্যাংকটির একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। দ্রুততম সময়ে সফলতার সাথে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের এমডি মো. মুজিবুর রহমান।

এমডি মো. মুজিবুর রহমান আরো জানিয়েছেন, ব্যাংকের ভঙ্গুর সব গুলো প্যারামিটার উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইনোভেটিভ অনেকগুলো পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে যার যার কর্তব্য পালন করছে। এ কারণে ব্যাংকটি দ্রুত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছে।

এমডি আরো জানান, সবগুলো জোনে আমি সম্মেলন করেছি। কর্মকর্তারা অনেকে প্রমোশন বঞ্চিত থাকার কথাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, এখন থেকে প্রমোশন আপনাদের হাতে। আপনার পারফরম্যান্সই আপনাকে প্রমোশন দিতে পারে।

এদিকে, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জুলাই বিপ্লবে দেশ হাসিনামুক্ত হলে বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম অবস্থায় পড়লেও জনতা ব্যাংক গ্রাহকের যে কোন অঙ্কের চেকের বিপরীতে টাকা দিয়েছে এখনও দিতে পারছে। এ সম্পর্কে ব্যাংকটির এমডি মো. মুজিবুর রহমানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, দেশের সামগ্রিক আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সকলের জানা রয়েছে। আশা করছি আল্লাহর মেহেরবানি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা, জনগণের আস্থায় এ ব্যাংক আরো গতিশীলভাবে এগিয়ে যাবে।

এদিকে ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, সকল প্যারামিটারে ব্যাংকটি পূর্বের জায়গায় ফিরে আসছে। ব্যাংকটিতে কোন তারল্য সংকট নেই। যে কোন অঙ্কের চেকের বিপরীতে টাকা দিতে পারছে ইসলামী ব্যাংক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর