সানাউল্লাহ রেজা শাদ (বরিশাল)
বরিশাল বিভাগে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল গত জানুয়ারিতে। তিন মাসের মধ্যে বিভাগের আটটি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের লক্ষ্য নির্ধারিত হলেও পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো জেলায় হয়নি একটি সম্মেলনও। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা।
দলীয় সূত্র জানায়, এখনো অধিকাংশ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত না হওয়ায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। বরিশাল মহানগরসহ কয়েকটি জেলার নেতারা আশঙ্কা করছেন, ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। এমন আবহাওয়ায় সম্মেলন আয়োজন কঠিন হওয়ায় আগামী শুষ্ক মৌসুমের আগেই সম্মেলন শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
তদুপরি, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় সেখানেও সম্মেলনের পথ কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত ২৩ জানুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বরিশাল বিভাগের আটটি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কেন্দ্র থেকে পাঁচজন তরুণ কেন্দ্রীয় নেতাকে জেলার দায়িত্ব দিয়ে তিন মাসের মধ্যে পুনর্গঠন শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বরিশাল মহানগরে দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় সদস্য হাসান মামুন, দক্ষিণ বরিশাল ও ঝালকাঠিতে হায়দার আলী লেলিন, উত্তর বরিশালে দুলাল হোসেন, ভোলায় আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, পিরোজপুর ও বরগুনায় কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু। পটুয়াখালীতে দায়িত্বে আছেন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি।
তবে এসব নেতারা দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকটি সভা করলেও কোনো জেলাতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। তৃণমূল পর্যায়ে তেমন কোনো কার্যকর প্রস্তুতিও চোখে পড়ছে না। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় নেতারা।
তিনটি জেলার সাতজন সাবেক নেতা বলেন, দেড় দশকে বিএনপি দমন-পীড়নের কারণে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়েছে। রাজপথে দাঁড়ানোর সাহস হারিয়েছেন অনেকেই। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে আবারও সক্রিয় হলেও দুর্বল কাঠামোর কারণে অনেক জায়গায় নেতা–কর্মীরা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কাজ করছেন।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তরুণদের দিয়ে নেতৃত্ব গঠনের চেষ্টা করলেও অনেক কেন্দ্রীয় নেতা নিজেদের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তাঁদের ঘনিষ্ঠদের কমিটিতে আনতেই কাউন্সিল ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
ভোলা জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ বলেন, ‘ভোলায় কয়েক দফা সভা করেছি। জুলাইয়ের মধ্যেই জেলা কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।’ তিনি জানান, রমজান, ঈদ ও দলীয় কর্মসূচির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয়নি।
তৃণমূলের ভোটে কমিটি গঠনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করব। প্রয়োজনে ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হবে।’