25.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

নবীগঞ্জে হেফজখানার কক্ষে কিশোর ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

আরও পড়ুন

স্বপন রবি দাশ (হবিগঞ্জ)

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গোপলা বাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আল-আমিন হাসেমিয়া দাখিল মাদ্রাসার হেফজখানায় রাব্বি মিয়া (১৪) নামে এক আবাসিক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) সকাল ৯টার দিকে হেফজখানার একটি কক্ষে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও সহপাঠীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ তারা রাব্বির কক্ষ থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা খুলে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। দ্রুত নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত রাব্বি বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের ভুগলি গ্রামের কাউসার মিয়ার ছেলে। সে আল-আমিন হাসেমিয়া দাখিল মাদ্রাসার হেফজখানায় আবাসিক থেকে কোরআন হিফজ করছিল।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করলেও রাব্বির পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। পরিবারের দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

রাব্বির শোকার্ত মা বলেন, “আমার ছেলে কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। ও খুব শান্ত ও ভদ্র ছিল। গতকাল কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেয়নি। সকালে হঠাৎ বলল, ছেলে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে—এটা আমি মানতে পারছি না। ওকে হত্যা করা হয়েছে।”

নিহতের বাবা কাউসার মিয়া বলেন, “আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষই দায়ী। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চাই। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাই।”

পরিবারের অভিযোগ, মাদ্রাসার পরিচালক মো. আশিকুর রহমান, সভাপতি মো. সিকান্দার আলী, প্রিন্সিপাল মুফতি মাওলানা শামিম আহমেদ এবং সহকারী শিক্ষক হাফেজ মো. বাকির উল্লার ভূমিকা সন্দেহজনক। তারা অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের তথ্য না দিয়ে মরদেহ গোপনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে মিরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল বলেন, “এই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কাউকে কিছু না জানিয়ে শিশুটির পাগড়ি খোলা ঝুলন্ত দেহ নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়। পরে আমরা গেলে তারা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। এটি সন্দেহজনক।”

এদিকে, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, “খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে যায় এবং মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যা—এই প্রশ্নে দোলাচলে স্থানীয়রা। তারা ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। নিহত রাব্বির সহপাঠীরাও আতঙ্ক ও শোকগ্রস্ত।

এ ঘটনায় সারাদেশে সচেতন মহলেও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকরা নতুন করে ভাবনায় পড়েছেন। এখন সবাই চায়—রাব্বির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ দ্রুত প্রকাশ পেয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর