নাসরিন আক্তার :
বিগত ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর এলজিইডিতে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের একটি শাখা কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটিতে ২০১৩ সালে নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে ১৮ জন সদস্য রয়েছেন। এই ১৮ জন প্রকৌশলীই এলজিইডিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়ছেন।
এলজিইডির মত এত বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংস্থাপনে কর্মকর্তাদের উপরের পদ-পদবীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ৩৩ বছর চাকুরী করেও পদোন্নতি পাচ্ছেন জনৈক কর্মকর্তা। তিনি অভিযোগ করেন, তাহাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি কোন আর্থিক সুবিধা পাবেনা বলে জানান।
অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্প হতে আত্মত্মীকরণের মাধ্যমে যে সকল কর্মকর্তা এলজিইডিতে নিয়মিত হয়েছেন এবং পিএসসি’র মাধ্যমে যে সকল কর্মকর্তা এলজিইডিতে সরাসরি চাকুরীতে প্রবেশ করেছেন, তাদের মধ্যে চাকুরীর সিনিয়রিটি নিয়ে চাপাক্ষোপ রয়েছে এলজিইডিতে। আবার, বিগত সরকারের আস্থা ভাজনদের লোভনীয় প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা প্রকল্পের টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ারও প্রমান মিলেছে।
২০২৩ সালের ২ নভেম্বর অনুমোদিত সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আলী আখতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট এলজিইডিতে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের একটি শাখা কমিটি গঠন করা হয়। তার মধ্যে বরিশালে কর্মরত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাঃ নুরুল ইসলাম যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব করছেন। ইতিমধ্যে তার বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র জানায় উক্ত কমিটিতে ২০১৩ সালে নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে ১৮ জন সদস্য রয়েছেন। এই ১৮ জন প্রকৌশলীই এলজিইডিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়ছেন। তারা সকলেই সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানা যায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সহকারী প্রকৌশলীর একটি পদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মাত্র ৩জন পরীক্ষার্থী। তথ্য বলছে, সেই পরীক্ষায় ১৫৪টি শূণ্য পদের বিপরীতে বৈধ আবেদন ছিলো ১৫১৮টি। সেই লিখিত পরীক্ষায়
অংশগ্রহণ করে মাত্র ৩৫২ জন আর উত্তীর্ণ হন ১৬২ জন। অর্থাৎ একটি শূণ্য পদের বিপরীতে ১ জন উত্তীর্ণ হয়। অন্যদিকে মৌখিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় ১২৭ জন। অর্থাৎ শূণ্য পদের চেয়ে কম পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। পিএসসির সুপারিশ নিয়ে পরের বছর ২০১৩ সালে এ পরীক্ষা থেকে যোগদান করেন ৫২ জন প্রকৌশলী। অভিযোগ রয়েছে, সকল নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না।
করে প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার সাড়ে ৩ বছর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট ও ২৭ ডিসেম্বর উক্ত প্যানেল থেকে আরও ৩১ জন নিয়োগ দেওয়া হয়। যেখানে নিয়ম রয়েছে পিএসসির সুপারিশের মেয়াদ হবে মাত্র ১ বছর। বড় ধরণের এই অনিয়মে পিএসসি এবং এলজিইডি সিন্ডিকেটের যোগসাজশের বিষয়টি এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। জানা গেছে, ২০০৬ সালের বিজ্ঞপ্তির আলোকে ২০১৩ এবং ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রাপ্তরাও সিনিয়রিটি দাবি করে আসছেন ২০০৬ সাল থেকেই।
কিন্তু বিধি বলছে পিএসসির সুপারিশের তারিখ ও নিয়োগের তারিখ ঠিক রেখে দাবি আদায়ে করা হয় একের পর এক মামলা দিয়ে। ফলশ্রুতিতে নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরেই আটকে আছে এলজিইডির প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের পদোন্নতি। একইভাবে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্তদের উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিয়মিতকরণ করা হয়। উচ্চ আদালত চাকুরীতে নিয়েগের সকল শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিয়মিতকরণের আদেশ দেন।
সূত্র বলছে, যোগ্যতা সত্ত্বেও সিনিয়র প্রকৌশলীদের
এলজিইডিতে পদোন্নতি যথা সময়ে পদোন্নতি প্রদান না করায় তাদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। পদোন্নতি বঞ্চিত জনৈক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক এই বাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং দ্রুত পদোন্নতি না দিলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে’।
যথা সময় পদোন্নতি না পাওয়ায় বিপুল সংখ্যক সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন।