গোপাল হালদার, পটুয়াখালী:
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “যখন লামিয়ার উপর অত্যাচার ও নির্যাতনের হুমকি আসছিল, তখন যদি তার ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিশ্চিত করা হতো, তাহলে হয়তো আজ সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না।” শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা কলেজছাত্রী লামিয়ার জানাজায় পাংগাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, “যে জন্য এত ছাত্র-তরুণ প্রাণ দিয়েছে, যে বিষয়টির জন্য শ্রমিকেরা জীবন দিয়েছে, সেই আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার এখনো কেন বিলম্বিত হবে এটাই আজ জাতির সামনে বড় প্রশ্ন।”
তিনি আরও বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে, একজন ভুক্তভোগী ন্যায়বিচারের জন্য সমাজের কাছে গেলে যদি বারবার প্রতারিত হয়, তাহলে দেশ অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। আদালত হচ্ছে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল; সেখানে যদি মানুষ বিচার না পায়, তাহলে দেশে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।”
৫ই আগস্টের বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। সমাজের প্রতিটি স্তরে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। যদি দুর্বৃত্তদের দৌরত্ব বাড়তে থাকে, তাহলে কখনোই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।”
তিনি বলেন, “স্কুল-কলেজের প্রতিটি মেয়ে, প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদ থাকে, সেটাই হবে আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চিহ্ন। তার জন্যই তো এত আত্মত্যাগ, শহীদদের রক্ত ঝরেছে। আজ ৮ মাস পরও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় গোটা জাতি তাকিয়ে আছে।”
লামিয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রিজভী আরও বলেন, “যথাসময়ে যদি তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হতো, যদি তার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হতো, তাহলে আজ তার জীবন এভাবে নিভে যেত না।”
জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন, এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক (উত্তর অঞ্চল) সারজিস আলম, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য কৃষিবিদ মোঃ শহিদুল ইসলাম ফাহিম, পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহবায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু, সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি, জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান, দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মোঃ ইজাজুল হক, দুমকি থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাকির হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সর্বস্তরের মানুষ।
উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর পাংগাশিয়া ইউনিয়নে নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে লামিয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। পরে তিনি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার দুই আসামি সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সী আদালতের আদেশে কারাগারে রয়েছেন। ২৬ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার একটি বাসা থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।