25.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

চাম্বল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দালালরাই যেন সর্বেসর্বা

আরও পড়ুন

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

দালালের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বাঁশখালীর চাম্বল ভূমি অফিস। এতে কয়েক ইউনিয়নের মানুষ ভূমি সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকার সাধারণ মানুষকে সহজে ভূমি সেবা দিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও চাম্বল ভূমি অফিসে তা কাগজ, কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে দালালের শরণাপন্ন না হলে এই অফিসে সেবা পাওয়া কঠিন। সেবা অনুপাতে সরকারি ফি নির্ধারিত থাকলেও তার আট, দশগুণ টাকা দালালরা সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে কৌশলে ছিনিয়ে নেয়। দেশের সবদিকে সংস্কার শুরু হলেও এই ভূমি সেবায় এখনও কোন পরিবর্তন নেই। সাধারণ মানুষ আগের মতোই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অফিসে সেবা না পেয়ে সাধারণ মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়ে দালালের খপ্পরে পড়ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চাম্বল ভূমি অফিসে কিছু চিহ্নিত দালাল রয়েছে। তাদেরকে সবাই চিনলেও ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা চিনেন না। এই দালালরা ভূমি অফিসের কর্মকর্তার মতো নিয়মিত ভূমি অফিসে আসেন। এমনকি ভূমি অফিসের কর্মকর্তার পাশাপাশি চেয়ারে বসে তাদেরকে অফিসের ফাইল নড়াচড়া করতে প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তাদের দেখে মনে হবে, তারাও অফিসের উচ্চপদস্থ কোন কর্মকর্তা।

অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ছনুয়া এলাকার আকতার হোসেন চাম্বল ভূমি অফিসের তহসিলদার মহিউদ্দিনের পাশের চেয়ারে বসে অফিসের নথি নড়াচড়া করছেন। এ সময় ভূমি অফিসের এক কর্মচারীকে দালাল আকতার হোসেনকে সহযোগিতা করতেও দেখা যায়। পাশের রুমে শেখেরখীলের খোরশেদুল হক চেয়ারে বসে সেবাপ্রার্থীদের সাথে কথা বলছেন। তারা দুইজনই ভূমি অফিসের কেউ নন। অফিসের বাইরে দালাল হিসেবে তাদের আলাদা পরিচিতি থাকলেও ভূমি অফিসের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তা জানেন না। জানলেও কোন ব্যবস্থা নেন না। ব্যবস্থা নিলে তারা অফিসে চেয়ার পেতেন না। অন্যদিকে চাম্বল ভূমি অফিসের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা সেলিম উদ্দীনকে পাওয়া যায় অফিসের বাইরে। অফিসের নির্দিষ্ট চেয়ার ছেড়ে তিনি সেখানে গিয়ে এক সেবাপ্রার্থীর সাথে কথা বলছেন। অফিসের বাইরে সেবা দেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এক গণমাধ্যমকর্মীর মোবাইল কেড়ে নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন।

চাম্বল ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা হাফেজ রফিকুল ইসলাম বলেন, নামজারি খতিয়ান করার জন্য খোরশেদুল হক মানিককে অফিসের সবার চা নাস্তার কথা বলে তিন হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা নিয়েও তিনি হয়রানি করছেন।’ শেখেরখীল ইউপির গোলাম মোস্তফা জানান, শেখেরখীলে একটি খাস জায়গা খোরশেদ প্রভাব কাটিয়ে তার চাচার নামে খতিয়ান করে নিয়েছেন। সে এলাকায় নিজেকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দেয়। তার বিরুদ্ধে এসি ল্যান্ড, ইউএনও ও জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।’

চাম্বল ভূমি অফিসের তহসিলদার মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমি মাত্র দুই মাস আগে জয়েন করেছি। তাই কে দালাল আর কে সেবাপ্রার্থী চিনি না। আমাদের একটু সময় দেন। আকতার এবং খোরশেদ এই অফিসের কেউ নন। তারা প্রায়ই এই অফিসে আসেন। রমজান মাস হওয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে চা নাস্তা খেতে না পেরে আক্ষেপও করেন ভূমি অফিসের এই কর্মকর্তা।’

গণমাধ্যমকর্মীরা চাম্বল ভূমি অফিস ত্যাগ করার আনুমানিক বিশ মিনিট পর এক গণমাধ্যমকর্মীর ফোনে কল দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জসীম উদ্দীন। তিনি তাকে জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা কেন ওই অফিসে গেছেন এবং কে অভিযোগ দিয়েছে তা জানতে চান। পরে রাত আটটার দিকে তিনি তার অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে সরকারি অফিসের কর্ম পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জসীম উদ্দীন বলেন, চাম্বল ভূমি অফিসে যাওয়ার আগে আপনারা আমাকে বলে যাননি। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমাকে লিখিত আকারে জানাতে হবে। কারো মৌখিক কথায় আমি ব্যবস্থা নিতে পারি না।’#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর