25.6 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

গর্ভবতী নারীকে ভুল রক্ত প্রয়োগে গর্ভের শিশুর মৃত্যু-ক্লিনিকের পরিচালকসহ ৩ জন গ্রেফতার 

আরও পড়ুন

আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি ::

নাটোরের গুরুদাসপুরে সাথী খাতুন নামের ৯ মাসের এক গর্ভবর্তী নারীর শরীরে ভূল রক্ত প্রয়োগে নবজাতক শিশুর মৃত্যু ঘটনায় আল্পনা
ক্লিনিকের পরিচালকসহ তিনজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার পৌরসদরের চাঁচকৈড় বাজার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগি অন্তঃসত্তা সাথী খাতুনের (১৮)স্বামী খায়রুল ইসলাম বাদি হয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নাটোরের গুরুদাসপুর আমলী আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন ক্লিনিকের পরিচালক আলাল উদ্দিন ও তার সহদর ভাই সরোয়ার হোসেন এবং রাশেদুল ইসলাম।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম সরোওয়ার হোসেন বলেন, গুরুদাসপুর থানায় মামলা রজু এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৭ ফেব্রুয়ারি আমলী আদালত নির্দেশ দেন। আদালতের ওই নির্দেশনার ভিত্তিতে শনিবার সকালে থানায় মামলা রজু করে দুপুরেই আসামীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।

নিহত নবজাতকের পিতা মামলার বাদি খায়রুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, তার স্ত্রী সাথী খাতুনকে গুরুদাসপুরের আলপনা ক্লিনিকে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেখানে রক্তের গ্রুপ ভুল নির্ণয় করে ‘বি পজেটিভের’ স্থলে ‘এ পজেটিভ’ এক ব্যাগ রক্ত প্রয়োগ করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পাশ্বপ্রতিক্রিয়ায় নবজাতকটি গর্ভেই মারা যায়।

সেসময় গুরুদাসপুরের হাজেরা ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভের মৃত শিশুকে বের করা হলেও জীবন সংকটে পড়েন তার স্ত্রী।

জানা যায়,ভুক্তভোগি সাথী খাতুন গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ি গ্রামের আব্দুস সালাম মন্ডলের মেয়ে। সাথীর শ্বশুরবাড়ি ফরিদপুরে। অন্তসত্তা হওয়ার পর তিনি পিতার বাড়ি গুরুদাসপুরেই ছিলেন। সেসময় রক্তশূণ্যতা দেখা দেওয়ায় গত বছরের ২২ সেপ্টম্বর সকালে
গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারের নিউ আলপনা ক্লিনিকে অন্তঃসত্তা সাথীকে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন। সেখানে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের পর সাথীর শরীরে ভুল রক্ত প্রবেশের পরপরই শ্বাসকষ্ট এবং শরীরজুড়ে লাল চাকার মতো হয়ে যায়। একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় গর্ভের শিশুর নড়াচড়া। পরিস্থিতি খারাপ হলে পরের দিন ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাথী খাতুনকে গুরুদাসপুর পৌর সদরের হাজেরা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

সেখানে নতুন করে পরীক্ষার পর জানতে পারেন শরীরে ভুল রক্ত প্রয়োগ করায় গর্ভের সন্তান মারা গেছে। ওই দিন সিজারিয়ানের মাধ্যমে মৃত নবজাতকটিকে বের করে ময়না তদন্ত করা হয়। সাথীর অবস্থার আরো অবনতি হলে ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে স্বামীর ঘরে ফেরেন সাথী খাতুন।

সে সময়ের কথা মনে করে সাথী বলেন,আলপনা ক্লিনিকে রক্ত গ্রহণের পরপরই তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। দুই বছরের সংসারে এটিই ছিল তার প্রথম সন্তান। অথচ ভুল রক্ত প্রয়োগে তার গর্ভের সন্তানটি হত্যা করা হয়েছে। তিনিও জীবন সংকটে পড়েছিলেন।তিনি এর সঙ্গে জড়িতদের কঠিন শাস্তির দাবি করেন।

এদিকে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ২০২২ সালেও এই ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছিল।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমল্পেক্সের স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এএসএম আলমাস বলেন, সিলগালা খুলে ক্লিনিক চালু করার নির্দেশনা নেই। আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর