মাঠের লড়াই ডেস্ক :
ক্রীড়াই আমাদের শক্তি। যে চট্টগ্রাম থেকে দেশ সেরা ক্রীড়াবিদরা উঠে এসেছে সেই চট্টগ্রামের প্রতি বৈষম্যমুলক আচরণ করা হয়েছে। আজকে আমরা দেখতে পারছি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এখানকার সবার অজান্তে কেন্দ্র থেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম আগামী ২৫ বছরের জন্য বরাদ্দ নিয়েছে। আমি পুনরায় একুশের এই মঞ্চ থেকে আবারও ঘোষণা করতে চাই চট্টগ্রামের মাঠে চট্টগ্রামের খেলোয়াড়েরা খেলবে। চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম কারো কাছে লীজ দেওয়া যাবে না। বুধবার ( ১৯ ফ্রেরুয়ারি, ২০২৫ খ্রিঃ ) রাতে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম চত্বরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এর আয়েজন ও অর্থায়নে এবং চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ এর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত একুশে বইমেলা, চট্টগ্রাম ২০২৫ মঞ্চে তরুণ – যুব সমাজকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সতেজ রাখতে ক্রীড়ার ভুমিকা অপরিসীম শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এর মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। সেখানে তরুণরা অংশগ্রহণ করেছে। সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন একটা বাংলাদেশ সেইদিন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেরা উপহার দিয়ে ছিল। ঠিক একইভাবে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, পরর্বতীতে ২৪ এর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনেও অগ্রভাগে ছিল ছাত্র ও তরুণরা।
মেয়র বলেন, শপথগ্রহন করে আমি স্পর্শ বলে দিয়েছি চট্টগ্রামের ৪১ ওয়ার্ডে খেলার মাঠ আমরা করে দিয়ে যাব। প্রতিটি এপাটমেন্ট মালিকদের বলে দিয়েছি একটি ফ্লোর সম্পুর্ন ছেড়ে দিতে হবে ফ্লাটে বসবাসকারীদের জন্য স্পোর্টস জোনের জন্য। পাশাপাশি প্রতিটি আবাসিক একালায় সিটি করপোরেশন, সিডিএ অথবা সংলিষ্ট যারা অনুমোদন দিবেন তাদের খেলার মাঠ রাখার বাধ্যবাদকতা রাখতে হবে। অন্যথায় সেখানে তাদের কোন অনুমতি দেওয়া যাবে না। এধরনের নিয়ম ইনশাআল্লাহ আমরা করে যাব। কাজই আমার মনে হয় আমরা যতবেশী খেলার মাঠ করতে পারব, ততবেশী খেলেয়াড় সৃষ্টি হবে। রক্ত যেমন মানব দেহে উৎপন্ন হয় তেমনি খেলোয়াড় তৈরী করতে মাঠ লাগবে। মাঠ ছাড়া খেলোয়াড় অন্য কোথাও তৈরী হবে না। প্রতিভা যতই থাকুন না কেন আমি যদি সেটা নাসিং করতে না পারি তাহলে সেটা আমাদের কোন কাজে আসবে না। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই লগ্নে মঞ্চে যে ক্রীড়া সংগঠকরা আছে তাদের সম্মানিত করতে পেরে আমরা নিজেরা গর্বিতবোধ করছি, আনন্দিত হয়েছি। এইসব ক্রীড়া সংগঠকদের আরও বেশী সম্মানিত করা উচিত বলে আমি মনে করি। ভবিষ্যতে অবশ্যই সেটাও হবে।
নবনির্মিত চট্টগ্রাম শহীদ মিনার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এটা চমৎকার একটা শহীদ মিনার হয়েছে। সেখানে না গেলে সেটা বুঝা যাবে না। একুশের প্রথম প্রহরে সবাই সেখানে গিয়ে মহান একুশে স্বরণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শ্রদ্ধা জানাবেন। মেয়র আশাবাদ ব্যত্ত করে বলেন, আমরা সবাই মিলে এই শহরকে একটা সুন্দর, পরিছন্ন, ক্লিন, গ্রীন ও হেলদি সিটিতে রুপান্তরিত করব।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার এ্যাডহক কমিটির সদস্য বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও সাবেক খেলোয়াড় হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সিজেকেএস সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেলা পরিষদের সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ এর সভাপতি হৃদয় হাসান বাবু।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বর্তমান ও আগামী প্রজ্জমের জন্য খেলার মাঠ প্রয়োজন। যে কোন পেশায় কাজ করতে হলে শরীরকে সতেজ রাখতে হবে। সুতরাং শরীরকে সতেজ রাখতে খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। তিনি সিটি মেয়র ঘোষিত প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ ও প্রতিটি আবাসন প্রকল্পে স্পোর্টস জোন গড়ে তোলার উদ্দোগকে স্বাগত জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম বলেন, যুব সমাজকে মাদক মুক্ত করতে খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। খেলাধুলার মাধ্যমে একজন খেলোয়াড় বা একটি দল বিশ্ব দরবারে একটি দেশ ও জাতিকে পরিচিত করতে বিশেষ ভুমিকা পালন করতে পারে। তিনি বাংলাকে মাতৃভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে যেসকল ভাষা সৈনিক তাদের জীবন উৎসগ করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
সভাপতির বক্তব্যে হাফিজুর রহমান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” – সেই অমর গানের প্রথম অংশ পরিবেশন করে বলেন, সেই ৫২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমরা তাদের ভুলি নাই, আগামীতেও ভুলবনা। তিনি ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম উন্নয়নে বিশেষ ভুমিকা রাখায় তৎকালীন মন্ত্রী চট্টগ্রামের সন্তান আবদুল্লাহ আল নোমানের কথা স্বরণ করেন এবং ক্রীড়াঙ্গনের মানুষদের নিয়ে একুশে বইমেলা মঞ্চে তরুণ – যুব সমাজকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সতেজ রাখতে ক্রীড়ার ভুমিকা অপরিসীম শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজনের জন্য সিটি মেয়র সহ সংলিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।