25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

চিনি ও রাসায়নিকের ভেজালে খেজুর গুড়-স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

আরও পড়ুন

আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :

‘খাঁটি গুড় তৈরি করলে বিক্রির সময় ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। তাই অল্প চিনি মিশিয়ে বিক্রি করছি। তবে পাঁচ বছর আগেও অধিকাংশ গাছি খাঁটি গুড় তৈরি করতেন।

সময়ের পরিবর্তন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বেশি লাভের আশায় এ কাজ করছেন তারা। সবাইকে দেখে আমিও শুরু করেছি দুই বছর ধরে। তবে অন্যদের মতো রং ও হাইড্রোজ ব্যবহার করি না। শুধু চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি।’ এভাবেই নিজের কথাগুলো অকপটে বলছিলেন নাটোরের গুরুদাসপুরের আবদুল জব্বার নামে এক গাছি।

এই উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে ভেজাল গুড় তৈরি শুরু করেছেন গাছিরা। রং, চিনি ও রাসায়নিক দিয়ে প্রকাশ্যেই এসব তৈরি হচ্ছে। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। খাঁটি গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে কেনা থেকে বিরতও থাকেন। তবে ভেজাল গুড়ের দাম কম হওয়ায় এর চাহিদা কম নয়।

গত কয়েক দিনে উপজেলার অন্তত ৪০টি গ্রাম ঘুরে অনেক স্থানে এভাবে ভেজাল গুড় তৈরির প্রমাণ মিলেছে। এসব গুড় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০-৩০০ টাকায়। অধিক মুনাফার আশায় অসাধু গাছি ও ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গুড় খেলে কিডনি অকেজো হওয়ায় ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন মানুষ।

চিকিৎসক মো. রবিউল করিম শান্ত বলেন, খেজুর গুড়ে চিনি, হাইড্রোজ, সোডা, রং, ফিটকিরির মতো ভেজাল মিশ্রণের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া খাদ্যনালিতে ক্যান্সার, লিভারে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গত সোমবার ধারাবারিষা ইউনিয়নের সিধুলী গ্রামে একটি খেজুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চুলায় আগুন জ্বলছে। খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ঢালা হচ্ছে পাত্রে। পরে উজ্জ্বল করার জন্য লাল ও খয়েরি রং দেওয়া হয়। জমানোর জন্য দেওয়া হয় হাইড্রোজ। শুধু সিধুলী নয়, উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায় এভাবে তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করেন।

তারা বলছেন, আগে বড় ব্যবসায়ীরা ভেজাল গুড় বেশি তৈরি করতেন। গাছিরা ভেজাল দিতেন না। এখন অধিক মুনাফার জন্য বেশির ভাগ গাছি ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। বিয়াঘাট গ্রামের উজ্জল হোসেন বলেন, তাঁর এলাকায় খেজুর গুড় তৈরির সময় হাইড্রোজ, রং ও চিনি ব্যবহার করেন গাছি। তিনি একাধিকবার নিষেধ করতে গেলে তাঁর ওপর চড়াও হয়েছেন। এগুলো বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

চাঁচকৈড় এলাকার ব্যবসায়ী মুনজুরুল করিমের ভাষ্য, ইটভাটায় ব্যবহার করায় কমেছে খেজুর গাছের সংখ্যা। এতে রসের সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে তৈরি হচ্ছে ভেজাল গুড়। গাছিরা বাজারে যে গুড় নিয়ে আসেন, সেগুলো ব্যবসায়ীরা কিনে কারখানায় ফের প্রস্তুত করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। গাছিরা ভেজাল দিলে তাদের কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।

ভেজাল রোধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা দরকার।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নাটোরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। খোঁজ নিয়ে অভিযান চালিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর