নাদিরা শিমু, চট্টগ্রাম ::
টেকনাফ উপজেলার হ্নিলা বাজারের মধ্যম পানাখালীর প্রবাসী আব্দুল মাবুদের ছেলে এরশাদ। আব্দুল মাবুদের দুই ছেলের জন্মই সৌদি আরবে। সৌদি আরবে মৃত্যুবরণ করা মাবুদের দুই ছেলেই টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির প্রতিহিংসার শিকার। ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর অসহায় এরশাদ ও মাহমুদের ভরনপোষণের দায়িত্ব নেয় সৌদি আরবের এক ব্যবসায়ী।
একসময় এরশাদ ও তার ভাই মাহমুদ চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে স্থায়ী হন। দুই ভাইয়ের পরিশ্রমে সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরলেও পুরো পরিবার বদির ষড়যন্ত্রের জালে ধরা পড়ে। প্রবাসী এরশাদ নিজের টাকায় চট্টগ্রাম শহরের ছোটপুলের শিশু কবরস্থান এলাকায় জমি কেনেন। রেমিট্যান্সের টাকায় কেনেন গাড়িও। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা চক্ষুশূল হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির। এমপি বদি প্রবাসী এরশাদের বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মামলা করিয়ে পুরো পরিবারকে এলাকাছাড়া করেন।
প্রবাসী এরশাদ ও তার ভাই মাহমুদ বিভিন্ন সময়ে বদির দ্বারস্থ হলেও মন গলাতে পারেন নি। উল্টো জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দেন। এক সময় বদির দেয়া হুমকিই সত্য হয়।
২০১৭ সালের ১৮ই মে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে এরশাদের মালিকানাধীন ‘হোন্ডা বেসেল ‘ মডেলের নতুন গাড়ি টেস্ট ড্রাইভেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক এলাকায় এক লক্ষ পিস ইয়াবাসহ ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। গাড়ি ক্রয় করে রেজিষ্ট্রেশন করানোর আগেই বদির ষড়যন্ত্রের জালে ধরা পড়েন এরশাদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একদিন আগে ড্রাইভার হিসেবে কামাল নামের এলাকার এক দরিদ্র পরিবারের ছেলেকে নিয়োগ দেন এরশাদ। ২০১৭ সালের ১৭ ই মে এরশাদের মামাকে নিয়ে কক্সবাজারে যান কামাল। আসার পথে খালি গাড়িতে চট্টগ্রামে আসার জন্য দুই ব্যক্তি অনুরোধ করে ড্রাইভারকে। মাওলানার বেশভূষায় মুগ্ধ হয়ে ড্রাইভার কামাল ওই দুই ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নেন। চট্টগ্রাম শহরে ডুকার পথে কর্ণফুলী থানার চরপাথরঘাটা এলাকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে ‘চেক পোস্ট’ গাড়িটি চেক করে দুই যাত্রীর কাছে এক লাখ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।
সুত্রমতে, যাত্রীর বেশে গাড়ি উঠা ইব্রাহিম ও জাহাঙ্গীর আলম দুই জনই এমপি বদির সহযোগী হিসেবে পরিচিত। এদের দুইজনের বাড়িই টেকনাফে। দুই শীর্ষকে দিয়ে প্রবাসী এরশাদকে ঘায়েল করার পরিকল্পনা করেন আবদুর রহমান বদি।রেজিষ্ট্রেশনবিহীন নতুন গাড়িটির মালিকের ( এরশাদ) বিরুদ্ধেই টুকে দেয়া হয় মাদকের মামলা (দায়রা ১১৫/২০১৯ ) । যদিও রেজিষ্ট্রেশনের অপেক্ষায় থাকা গাড়িটি স্ত্রীর নামেই কেনেন এরশাদ।
জব্দ করা সেই গাড়িটি ব্যবহার করতে থাকে কর্ণফুলী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম । প্রবাসী এরশাদের স্ত্রীকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় গাড়ি নিয়ে মাথা ঘামালে তার বিরুদ্ধেও মাদকের মামলা দেয়া হবে।
মামলার নথি অনুযায়ী, কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়িতে মাদকসহ নাম্বারপ্লেটবিহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছিলো ২০১৭ সালের ১৭ ই মে। পরবর্তীতে ১৮ ই মে এসআই অর্নব বড়ুয়ার দায়ের করা এজাহারে চারজনকে আসামী করা হয়েছিলে। মামলায় ১ নং আসামি করা হয় সিকদার পাড়ার খাইয়ুল আমিনের ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে (৩০। কুমিল্লার দ্বেবীদ্বারের চাঁনপুর গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে মোঃ কামালকে ২নং আসামী এবং টেকনাফের লেদাপাড়ার লালমিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে (২৬) তিন নং আসামি করা হয়। একই মামলায় চার নং আসামি হিসেবে নাম ঢুকিয়ে দেয়া হয় প্রবাসী এরশাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা এরশাদের জব্দ করা গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন কর্ণফুলী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। মাদকের মামলা কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ সাত বছর যাবত প্রবাসে অবস্থান করে দেশে ফিরেন এরশাদ। দেশে স্বজনরাও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়ে দিনাতিপাত করেছেন ছয় বছর।
জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ‘ নতুন কেনা গাড়িটি স্ত্রীর নামে রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য বিআরটিএ’তে জমা দিয়েছিলাম। আগ্রাবাদ এলাকায় বসবাস করা কামাল নামের এক ড্রাইভারকে নিয়োগ দেবার সপ্তাহখানেকের মাথায় গাড়িতে মাদক ধরা পড়েছে বলে জানানো হয়। আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম। আমার বাবাসহ পুরো পরিবার তিন যুগ ধরে প্রবাসী। সৌদি আরবে আমার বাবা মারা যাবার পর সংসার অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। ভাগ্য ফেরাতে আমরা দুইভাইও প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে মামলায় জড়িয়ে ভবিষ্যত নস্ট করে দেয়া হয়েছে। সাবেক এমপি বদিই পুরো ষড়যন্ত্রের মুলহোতা। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মিথ্যা মামলায় আমি খালাস পেয়েছি। কিন্তু মাদকের মামলা আমার সামাজিক সুনাম, আত্মসম্মান নস্ট করেছে। ‘
ছোটপুল এলাকায় বসবাস করা এরশাদের প্রতিবেশীরা জানান, প্রবাসে আয় রোজগার করে সংসার চালান তিনি। ব্যক্তি জীবনে আইনবিরোধী কোন কাজে এরশাদ জড়িত নন। হঠাৎ করে টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ক্রোধের শিকার হয়ে মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়েন।
চট্টগ্রামের ৫ম জর্জ আদালতে খবর নিয়ে জানা যায়, মাদক উদ্ধারের মুল দুই হোতা ইব্রাহিম ও জাহাঙ্গীর দুজনই জামিনে আছেন। জামিন হয়েছে ড্রাইভার কামালেরও। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হাসান আলী। ‘