25.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

৮৮ বছর পার হয়ে গেলেও উন্নত হয়নি বিদ্যালয় অবকাঠামো

আরও পড়ুন

সানাউল্লাহ রেজা শাদ, বরগুনা:

খবরের কাগজ বা টেলিভিশন চ্যানেল খুললেই মাঝে মধ্যে প্রধান শিরোনাম হিসেবে যে খবরটি চোখে পড়ে সেটা হলো বিদ্যালয় ভবন থাকলেও নেই শিক্ষার্থী অথবা শিক্ষার্থী শূন্য শ্রেনী কক্ষ।

ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রায় পাঁচশতাধিকশিক্ষার্থী অবকাঠামো গত অনুন্নত এ কারনে পারছে না সঠিক ভাবে ক্লাস করতে।

শ্রেনী কক্ষে জায়গা না হওয়ায় বসতে হচ্ছে বারান্দায়। ভবনে ধরেছে ফাটল আতঙ্কে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা । বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যাবহার করা হচ্ছে পড়ে থাকা একটি পরিত্যক্ত ভবন।

বর্ষায় ছাতা আর গ্রীষ্মের তাপদাহে বাংলা সিনেমার সেই গান ” তোমার হাতপাখার শিতল বাতাস” এর মতো শ্রেনী কক্ষে নিয়ে আসতে হয় হাত পাখা‌। শুনতে অবাক লাগলেও এভাবেই শিক্ষা গ্রহন করছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা । বলছিলাম বরগুনা সদর উপজেলার ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়নের বিষখালী নদী ঘেসে গড়ে ওঠা নলী এলাকায় অবস্থিত নলী মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ র কথা। ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত হয়নি তেমন কোন অবকাঠামো গত উন্নয়ন।একটি ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা এবং সেমি পাকা ২ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন দিয়েই চলছে বিদ্যালয়টি । শ্রেনি কক্ষের অভাবে একই কক্ষে পরিচালিত হচ্ছে বিজ্ঞানাগার , কম্পিউটার ল্যাব, গ্রন্থাগার ও ক্লাস রুম হিসেবে।

বর্তমান অধ্যায়নতর দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া বলেন – আমাদের স্কুলটি অনেক পুরানো হলেও আমাদের স্কুলে কোন ভালো ভবন নেই‌। আমাদের ক্লাস করতে খুবই কষ্ট হয় । আমাদের গ্রুপ ভিত্তিক যে ক্লাস গুলো সেগুলো ক্লাস রুমের অভাবে ঠিক মতো করতে পারছি না। অনেক সময় ছাত্র-ছাত্রী বেশী আসলে একই ক্লাসে বসতে পারিনা অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগারের জন্য আলাদা কোন রুম না থাকায় আমারা সে গুলো ব্যাবহার করতে পারছি না।

দশম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরা জাহান বলেন – ১৯৩৬ সালে আমাদের স্কুলটি শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আধুনিক ভবন হয়নি।ক্লাসে গাদাগাদি করে একই বেঞ্চে ৪-৫ জন বসতে হয় । স্কুলের ভবন পূরাতন হওয়ায় অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে । মাঝে মাঝে ক্লাস চলাকালীন সময় উপর থেকে বালু সিমেন্ট মাথার উপর পড়ে । বৃষ্টির দিনে ছাদ থেকে পানি পড়ে । ক্লাস করার থেকে আতঙ্কে থাকতে হয় বেশি কখন যেন উপর থেকে ছাদ ভেঙে মাথায় পড়ে। বরগুনার মধ্যে আমাদের স্কুলের ফলাফলও অনেক ভালো কিন্তু তবুও কেন আমাদের এই ভাবে ক্লাস করতে হয় ? আমাদের দাবি আমাদের স্কুলে যেন একটি ৫ তলা ভবন হয় । যাতে আমাদের এইভাবে কষ্ট করতে না হয়।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির বলেন – ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা যাচ্ছে ‌ বড় কোন ঝড় বা ভূমি কম্প হলে ভেঙে যেতে পারে‌ । ক্লাসে জায়গা কম হওয়ায় একই বেঞ্চে মাঝে মধ্যে ৫-৬ জনও বসতে হয়। ফ্যান না থাকায় গরমে বসা যায় না‌।

অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাসিব বলেন- ক্লাসে বেঞ্চের অবস্থা ভালো না। তারপরে উপরে টিন থাকায় গরমের দিনে বসা যায় না । বৃষ্টির দিনে শব্দে কিছু শোনা যায় না । অনেক সময় বৃষ্টির পানিতে বই খাতা ভিজে যায়।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ জুবায়ের ও মঈন একই সুরে বলেন – আমাদের বিদ্যালয়টি অনেক পুরাতন হওয়ার পরেও কোন ভালো ভবন নেই কিন্তু এই স্কুলের পরে যে প্রতিষ্ঠান গুলো হয়েছে তাদের অনেক বড় বড় ভবন হয়েছে। গরমের দিনে খুবই কষ্ট হয় আর বৃষ্টির দিনে তো এক কথায় ছাতা নিয়ে আসতে হতো । আবার অনেক সময় ছাদ থেকে বালু সিমেন্ট মাথায় পড়তো ‌ । ক্লাসে জায়গা না হওয়ায় এক বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসে এরপরে দাড়িয়েও থাকতে হয়েছে। স্কুল ৭-৮ শিক্ষক কম রয়েছে‌। ক্লাস রুমের অভাবে আমরা অনেক সময় গ্রুপের অনেক ক্লাস করতে পারিনি । আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই এই উপকূলীয় এলাকায় নদী মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিদ্যালয় তাই এখানে যেন একটি ভবন করা হয় । একটি ছাত্রাবাস রয়েছে সেটার অবস্থাও বেহাল।

অভিভাবকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন – উপকূলীয় এলাকায় এই নলী মুসলিম স্কুলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই স্কুলটি না হলে এই অঞ্চলের মানুষ এক কথায় শিক্ষার আলোই পেতো না । আমাদের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে বর্তমানে লেখা পড়া করতেছে আমরাও অনেকেই এখানে লেখা পড়া করছি । কিন্তু দুঃখজনক হলো এতো পুরানো স্কুল হলেও কোন ভবন নেই। এই যে দুইটা আছে একটায় তো টিন দেওয়া ‌। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা যাচ্ছে। আমরা ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকি কখন যেন ভেঙে আমার সন্তানের মাথায় পড়ে । আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই যেন এই স্কুলে যেন একটা বহুতল ভবন দেয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন – আমাদের ক্লাস রুমে সংকট হওয়ায় ঠিক মতো শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে পারছি না। শ্রেণীকক্ষে অনেক শিক্ষার্থী একসঙ্গে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করে। যেখানে শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব হয় না গ্রুপ ওয়ার্ক বা উদ্ভাবনীমূলক কোনো পাঠদান পদ্ধতির প্রয়োগ করা। চাইলেই একজন শিক্ষক ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানসম্মত উপায় বসাতে ও পরীক্ষণে যেতে পারেন না।
দীর্ঘদিনেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া না লাগায় দুর্বল কাঠামো বর্তমানে ক্ষণভঙ্গুরে গিয়ে দাড়িয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে চলছে পাঠদান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মতিয়ার রহমান বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বলেন- উপকূলীয় এবং প্রত্যান্ত অঞ্চলে ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ। কিছু দুঃখজনক ব্যাপার অনেক পুরাতন হলেও নেই কোন ভালো অবকাঠামো। আমাদের যে ভবন রয়েছে বৃষ্টির দিনে ছাদ চুষে পানি পড়ে ক্লাস নেওয়ার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের বই খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র ভিজে যায় । অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বারান্দায় বসে ক্লাস করতে হয় । গ্রুপের মে ক্লাস গুলো সেগুলো শ্রেনী কক্ষের অভাবে নিতে অনেক কষ্ট হয়। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পাশে পড়ে থাকা একটি পরিত্যক্ত ভবনে ব্যাবহার করছি । কিন্তু তাও শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে ।এই আধুনিক যুগে এসেও আমাদের বিদ্যালয়ে কক্ষের অভাবে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব , বিজ্ঞানাগার করতে পারছি না। এই প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনেক বার দরখাস্ত করা হয়েছে । কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটির কোন অবকাঠামো গত উন্নয়ন এখন পর্যন্ত হয়নি। আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে এখানে একটি ৫ তলা বিশিষ্ট ভবন করা হয়।

নদী মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নতি হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর