24.3 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

সংস্কার এবং এর প্রাসঙ্গিকতা

আরও পড়ুন

রওশন জাহান:
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সংস্কার শব্দটির সাথে পরিচিত নয় এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। মূলত আগস্ট এর ছাত্র আন্দোলনের পরেই এই শব্দটি কম বেশি দেশের সকল লোকের কাছেই পরিচিত। সংস্কার শব্দটির আক্ষরিক অর্থ মেরামত করা বা সংশোধন করা। অন্যভাবে বললে বলতে হয় ভালো করা বা ভালো হয়ে যাওয়া। বিগত দিনের ভুল শুধরে নেওয়ার এটাই মোক্ষম সময়। এখন আসা যাক রাষ্ট্র সংস্কারের প্রসঙ্গে। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্য হলো স্থিতিশীলতা, সুশাসন এবং জনগণের জন্য কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করা। উন্নততর নীতি ও সিস্টেমের মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ, উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেয়ার মাধ্যমে প্রত্যেক বিদ্যমান সংবিধান রক্ষারই প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। একদিকে ক্ষমতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্তুপীকৃত বিশাল জঞ্জাল সাফ করা যেমন তাদের দায়িত্ব, সেইসঙ্গে নতুন কিছু গড়ার বিষয়ও আছে। এটি বিশাল সংস্কারযজ্ঞ। গত আগস্ট এর অভ্যত্থানে বিগত সরকারের পতন হয়েছে এবং জনগণ ছাত্রদের বৈধতা দিয়েছে। এটা বিপ্লবী সরকার বলে ইতোমধ্যে পরিচিত পেয়েছে। যে সরকারের প্রধান দায়িত্ব প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কার পূর্বক সর্বজন, সর্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আপামর জনসাধারনের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করা। দূর্নীতি নামক দূরারোগ্য সামাজিক ব্যাধির মূল উৎপাটন করা এ সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য।
অন্তবর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের বিকল্প। কিন্তু এই বিকল্পটা স্বল্প সময়ের জন্য। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট শুধুমাত্র সংবিধান সংশোধন কিংবা নতুন সংবিধান প্রণয়নই একমাত্র বিষয় নয় বরং দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে আপন মেরুদন্ডের উপর দাঁড়াতে সক্ষম করে তোলাটাও বড় চ্যালেঞ্জ।
রাষ্ট্রকে নতুন করে পুনর্গঠনের কাজ অবশ্যই জরুরী। তা না হলে রাষ্ট্রে যেসব প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত নড়বড়ে অবস্থায় অবস্থান করছে, সেগুলোকে কার্যকরী করে তোলা যাবে না। শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু করতে পারবে না। সেখানে দেশের আপামর জনগণের ভূমিকা রাখতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত অর্জনের লক্ষ্যে একটি সময়বদ্ধ রোডম্যাপ প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে কতগুলি প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, অনিয়ম-দূর্নীতি প্রতিরোধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ নারীর ক্ষমতায়ন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্দি ধরে রাখা ইত্যাদি। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশে সমান ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে, যা দেশের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। বাংলাদেশকে উন্নত ও সুশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করা রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে সম্ভব। তবে এর সাথে সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ নেতৃত্ব, জনগণের অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা একান্ত প্রয়োজন। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হলে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা ফিরিয়ে আনতে হলে রাষ্ট্র সংস্কার এর বিকল্প অন্য কিছু নেই।
সংস্কার একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ যাকে সমাজের সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য করে তোলাটাই বড় চ্যালেঞ্জ, কিন্তু এতে প্রয়োজনীয় অনুঘটক হচ্ছে সাধারণ জনগণ। বিপ্লবী সরকারকে চিন্তা-চেতনা হচ্ছে জেন-জি ভিত্তিক যা সমাজে দৃশ্যমান। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত পরিচিত কিন্তু এ দেশে অনেকটাই অপরিচিত। অথচ বৃহৎ জনগোষ্ঠী সংকারে আগ্রহী, সামাজিক স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী ভোটাধিকারের মাধ্যমে নিজস্ব মতামতের প্রতিফলনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ কারনেই সংস্কার প্রয়োজন প্রাসঙ্গিক।
লেখক: ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার
সোনালী ব্যাংক পিএলসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর