আসিফ আলম ::
গত ২০ শে অক্টোবর ৮৫ জন নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এক যুগ পর পা রাখে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ। ভোর পাঁচটায় বিমানবন্দরে সারাদেশ থেকে সহস্রাধিক নেতাকর্মী তাকে স্বাগত জানাতে আসেন।
বিমানবন্দর থেকে সাতটার দিকে পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁও। সেখানেও নেতাকর্মীদের জটলা। কেউ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ; কেউ বা সাংগঠনিক বার্তা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পৌঁছে দেবার আবদার করছেন। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি নেতাকর্মীদের সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছিলেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।
দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থাভাজন নেতা হিসেবে হিসেবে পরিচিত কয়ছর আহমেদ। যিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা স্বর্তেও দেশে নেতাকর্মীদের সুবিধা অসুবিধার খোঁজ রেখেছেন। ফলে তৃণমূলে কয়ছর আহমেদের প্রতি আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।
শুধু সিলেট নয় চট্টগ্রাম, বগুড়া, শরিয়তপুর, খুলনা, গাজিপুরসহ বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতারা দলের পরিস্থিতি যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমেদের কাছে জানাচ্ছেন। সবার আশা তৃণমূলের বার্তা দলের প্রধানের কাছে পৌঁছে দেবেন তিনি। বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে দলের ত্যাগী নেতা কর্মীদের অনুযোগ শুনার ব্যক্তি শুন্যতা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি, দলের ভাবমুর্তি বিনষ্টকারীদের দমন, সহসা জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতে বিএনপির শক্ত অবস্থান তৈরির মতো পরামর্শ দিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম থেকে আসা এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ দলের অভিভাবক দেশের বাইরে থাকার কারণে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। দলের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। তৃণমূলের নেতাকর্মিদের সাথে গ্রামে গন্জে সম্মেলনের যে কাজ তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান শুরু করেছিলেন, সেটি স্তিমিত হয় এক এগারোর সময়। নির্বাচনের আগে প্রতি জেলা উপজেলায় দক্ষ ও ত্যাগী কর্মীদের ডাটাবেইজ তৈরির কাজ করা উচিত দ্রুত। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নেতাদের চেয়ে তৃণমূলের কর্মীদের প্রাধান্য দিলে দলে সাংগঠনিক শক্তি সুদৃঢ় হবে। কারণ নেতারা অনেক সময় ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সঠিক বার্তা হাইকমান্ডের কাছে পৌঁছান না। ‘
তিনি বলেন, ‘ যুক্তরাজ্যে যেহেতু আমাদের নেতা অবস্থান করছেন সেহেতু সেখানকার বিএনপি নেতাই তৃণমূলের সঠিক বার্তা নেতার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন- এমন আশা নিয়ে এসেছি । চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি শুন্য। অতীতে নেতা বানানো হয়েছে কিন্তু তারা দলের সাথে প্রতারনা করেছেন। ‘
কথা হয় কেন্দ্রীয় যুবদলের দুই নেতার সাথে। দুজনই কথা বললেন অনুযোগের সুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন দুই ছাত্রনেতা জানালেন ‘ কেন সাবেক দক্ষ ছাত্রনেতারা দলবিমুখ। কস্ট নিয়ে ঘরে বসে থাকেন। বললেন ‘ জীবনের ত্রিশ বছর এই দলের পেছনে আমাদের বিনিয়োগ। আমরা ম্যাডামের জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত ছিলাম ; তারপরও কেন পনেরটি বছর লেগেছে স্বৈরাচার হটাতে? কারণ আমাদের নেতা যুক্তরাজ্যে। যারা দেশে ছিলেন তারা আসলে সময়ে অসময়ে আত্নগোপনে ছিলেন। ‘
হোটেলের লবিতে বসে থাকা আরেকটি গ্রুপের সাথে কথা হলো। তারাও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমেদের সাথে দেখা করে বলতে এসেছেন ; তাদের অনুযোগ। জানালেন; বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে চট্টগ্রামে জামাল উদ্দিন নামের এক বিএনপি নেতাকে গুম করা হয়েছিলো। তিনি সুনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন। তার লাশ উদ্ধার করা যায় নি। একসময় কন্কাল উদ্ধার করা হয়েছিলো ফটিকছড়ির গহীন পাহাড় থেকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন দল পুনরায় ক্ষমতায় আসলে বিএনপি নেতা জামালউদ্দিনকে যারা গুম করেছে, খুন করেছে তাদের বিচার করবেন। কিন্তু জামাল উদ্দিন হত্যা মামলার আসামী ; ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়া ওই ব্যক্তিকে দলের নেতা বানানো হয়েছে। ‘
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার রাজনীতির সাথে জড়িত রহিম উদ্দিন বলেন, সবসময় দেখা যায় নেতা বানানোর ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীরা প্রাধান্য পায়। তাই বলে দলের নেতা ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিনের হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত ‘হেলাল উদ্দীন ‘ নেতা হবেন? তিনি কখনো দল করেন নি, সদস্যও ছিলেন না। তাকে বানানো হয়েছে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব। এসব অনুযোগ কার কাছে বলবো? যুক্তরাজ্য থেকে আমাদের নেতার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি দেশে এসেছেন, তাকে জানাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছি। ‘
ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁইছুঁই। কিন্তু হোটেলের লবিতে নেতাকর্মীদের জটলা। সবাই যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষাত প্রত্যাশী। এভাবেই হোটেল সোনারগাঁও লবি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দীর্ঘ সতের বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের উপর নির্যাতনের খগড় নামে দেড় যুগ ধরে। দীর্ঘ সময় ধরে দেশের রাজনীতিতে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিএনপি টিকে থাকলেও ; নেতৃত্ব শুন্যতা প্রকট আকার ধারন করেছে।