নিজস্ব প্রতিবেদক :::
রাজধানীর সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে চট্টগ্রাম আদালতে। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শহিদুল ইসলাম এর আদালতে রাউজানের সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের ২৭ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে এই মামলা করেছেন ১১ নং পশ্চিম গুজরা (মগদাই) এর সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজউদ্দৌলা।
আদালতের পেশকার জয়নুল আবেদিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পশ্চিশ গুজরার সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুদ্দৌলা বাদী হয়ে মামলটি দায়ের করেছেন। মামলায় চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মোট ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা সবাই রাউজান উপজেলার বাসিন্দা। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
এজাহার অনুযায়ী উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিরাজদৌল্লাহ অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে মামলাটি করেছেন।
বাদীর আইনজীবী এডভোকেট সবুজ তালুকদার বলেন,’ সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজদৌল্লাহকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিমসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলার আবেদন আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ‘
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর পরিচিত এমদাদের ভাগ্নির বাড়িতে দাওয়াতে যান। সেখানে সন্ত্রাসীরা তাকে আটকের চেষ্টা করলে জানতে পেরে দ্রুত বাড়িতে চলে আসেন।
পরদিন সকাল ১১টায় তাঁকে সাবেক সংসদ সদস্যের নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে প্রবেশ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। তাকে বাঁচাতে স্ত্রী-কন্যা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও লাঞ্ছিত করে। আসামি মো. মাসুদ তাদের আলমারির তালা ভেঙে ৭ ভরি স্বর্ণালংকার এবং আসামি লিটন দে ১৫ হাজার টাকা লুট করে৷ এছাড়া বাড়ির মূল্যবান আসবাব ভাঙচুর করে চার লক্ষ টাকার ক্ষতি করে।
একই সময় ইউপি চেয়ারম্যানকে অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামাবাদ সাকিনের নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বাড়ির পেছনে একটি টিনশেড ঘরে আটকে রাখে। এরপর তার মাথার চুল ও মুখের দাঁড়ি ফেলে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে দেখানো হয়। এরপর সেই ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
এছাড়া আসামি টনি বড়ুয়া মৃত্যুর হুমকি দিয়ে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে তার ভাই তিন লাখ টাকা এনে টনির হাতে তুলে দেয়। রাত ৮টার দিকে বাদীকে আসামি শাহাবুদ্দিন আরিফের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর একটি সিএনজিতে বসিয়ে আসামি লিটন দে পুরাতন একটি অস্ত্র আসামি আনোয়ার একটি গুলি এনে ওই সিএনজির পেছনে রাখে। এরপর রাউজান থানার উপপরিদর্শক অজয় দেবনাথ এবং ইলিয়াছ বাদীকে আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় করে থানায় নিয়ে যায়। এসআই অজয় দেবনাথ বাদীকে দিয়ে তার স্ত্রীর কাছে ফোন করিয়ে ১০ হাজার টাকা আদায় করেন।
পরে একইবছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১আতায় রাউজান থানায় অস্ত্রসহ ছবি তুলে অস্ত্র আইনে একটি মামলা রুজু করে বাদীকে আদালতে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, অপহরন করে মুক্তিপন আদায়, হত্যার মতো অসংখ্য জঘন্য অপরাধ করেছেন রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুক্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলমকে চকবাজারের বাসা থেকে আটক করে রাউজানের তৎকালীন সংসদ সদস্য ফজলে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয় পুলিশ কর্মকর্তা। পরদিন কর্ণফুলী তীরে হাত বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল আলমের মরদেহ। এছাড়া চারমাস আগে রাউজানে ওমান ফেরত আরেক বিএনপি নেতা মুছাকে মসজিদ থেকে বের করে পিটিয়ে মারেন ফজলে করিম চৌধুরীর সহযোগী সন্ত্রাসীরা।