25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

শিক্ষার্থীদের বুকে গুলি করতে ফজলে করিমের নির্দেশ !

আরও পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী। নির্দেশনা অনুযায়ী  গত ১৬ ই জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন ফজলে করিম চৌধুরীর ক্যাডাররা। এদিন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক ওয়াসিম আকরামসহ তিনজন নিহত হয় দুর্বৃত্তদের গুলিতে।

সূত্র মতে, ফজলে করিমের নির্দেশ অনুযায়ী শতাধিক অস্ত্রধারী ক্যাডার  ঢুকেছিল নগরীতে। তার ১৭ই জুলাই বহদ্দারহাট  এবং ৪ ঠা আগস্ট চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থান নেয়া রাউজানের সন্ত্রাসীদের মনিটরিং করছিলেন ফজলে করিম নিজেই।

রাউজানের সন্ত্রাসীরা

 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৪ঠা আগস্ট সকালে পাথরঘাটা এলাকা থেকে এসে জমায়েত হওয়া শিক্ষার্থীদের উপর অস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়েন ফজলে করিম বাহিনী। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে নিউ মার্কেট এলাকায় জড়ো হবার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের জিপিও এলাকায় হামলা চালায় তারা।

মানবতার ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত রাউজানের সাবেক এমপি পুত্র ফারাজ করিম চৌধুরী। সুনামগঞ্জের বণ্যা, ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ব্যাপক আলোচনায় আসে তার নাম। তবে এই মানবতার ফেরিওয়ালাই খোলস বদলে ফেলেন ২০২৪ এর রক্তক্ষয়ী আগষ্টের ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে। শুরু থেকেই পুরোপুরি এই আন্দোলনের বিরোধিতা করেন তিনি, যদিও তা প্রকাশ পায়নি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শুধু তাই না, অভিযোগ রয়েছে ছাত্রসমাজের বুকে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশদাতাও তিনি।

এর আগে স্বায়ত্তশাসিত কিংবা সরকারি বেসরকারি চাকরির সব নিয়োগ প্রক্রিয়ার  ৫৬ শতাংশ  কোটার  সংস্কার চেয়ে দাবী জানিয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রথমে তাদের ১ দফা দাবী থাকলেও পরবর্তীতে পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় ৯ দফা দাবী পেশ করে তারা। সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের নির্বিচারে গুলি, হত্যা ও গুম হওয়ার ঘটনায় পরবর্তীতে সরকার পতনের এক দফা দাবীতে অনড় অবস্থানের ঘোষণা আসে । পরে ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে পতন হয় হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে হেলিকপ্টারযোগে ভারতে পালিয়ে যান তিনি।

গত ৪ই আগষ্ট হাসিনা সরকারের দেশত্যাগের আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ দফা দাবীর ডাকে নেমে আসে চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ। এতে সমর্থন জানিয়ে নগরের নিউ মার্কেট মোড়ে উপস্থিত হয় চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনতা। তাদের এই আন্দোলনকে বানচাল করতে দফায় দফায় আক্রমন করে আওয়ামিলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ। সেদিন রক্তের রঞ্জিত হয় গোটা নিউ মার্কেট, জিপিও, রেয়াজউদ্দিন বাজারের অলিগলি। এর আগে গত ৩ আগষ্ট মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে একটি মিটিং করে আওয়ামিলীগ, ছাত্রলীগসহ চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতারা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাউজানের এমপি ফজলে করিম চৌধুরী ও তার ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী।

জানা যায়, ঐ মিটিংয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আর এই নির্দেশ দেন খোদ রাউজানের এমপি ফজলে করিম চৌধুরীর । এ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ যোগান দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

ফজলে করিমের বাসা চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার পাশে। এছাড়াও নামে বেনামে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদেরও সন্ধান মিলেছে  অনুসন্ধানে। অবৈধ আয়ে গড়া এই বিশাল সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতেই হাসিনা সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন তিনি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গত ৪ই আগষ্ট চট্টগ্রামের নিউ মার্কেটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর তাদের ইশারায় গুলি করে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। রাউজানসহ দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাঁচশতাধিক অস্ত্রধারী  সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে  রাজপথ দখলে নেবার মিশনে নামেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির উদ্দীন।

নিউ মার্কেটের স্থানীয় এক ফুটপাত দোকানদান বলেন, হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর আগের দিন আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে বেশ কয়েকজন ছাত্রকে গুরুতর আহত হতে দেখেছি। পুলিশের পাশাপাশি এই সন্ত্রাসীরাও সেদিন নির্বিচারে ছাত্রজনতার উপর গুলি চালায়। এদের মদতদাতা হিসেবে আওয়ামীলীগের আ জ ম নাসির, মশিউর রহমান, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, মাহবুবুল হক সুমন, দিদারুল আলম মাসুম, চকবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, পশ্চিম মাদারবাড়ির কাউন্সিলর  আতাউল্লাহ, জামাল খান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর  শৈবাল দাশ সুমন, খুলশী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর  ওয়াসিম উদ্দিন,আওয়ামী লীগ নেতা আরশাদুল আলম বাচ্চু, গোলপাহাড় এলাকার সন্ত্রাসী বাহাদুর, ফিরোজ,ইকবাল (হালিশহর) শাহআলমসহ অনেকেই।

জানা যায়, গত ৪ই আগষ্ট চট্টগ্রামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় ৫০টি লাশ ফেলানোর পরিকল্পনা ছিলো । আর এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নির্দেশ দেন রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিম ও ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী। ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করে রাউজানের পৌর মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ, উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার বাবুল ও সাইদুল ইসলাম। সুত্রমতে, তিনপোল এলাকায় একে ২২ এর মতো মারণাস্ত্রসহ অবস্থান করছিলেন, ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন ও ব্লেড শামীম।

গত ৫ আগস্ট  স্বৈরাচার  শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দশ দিন গত হলেও ফজলে করিম চৌধুরীসহ  এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর