24 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

তের রোহিঙ্গার আলোচিত মামলা ডুবলো দুদকের ইচ্ছায়

অনুসন্ধানে উদঘাটিত তথ্য উপাত্ত অস্বীকার

আরও পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক ::

কক্সবাজারের ঈদগাহ উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ১৩ জনকে ‘রোহিঙ্গা’ দাবি করে দুদকের করা মামলা ইউটার্ণ নিয়েছে দুদকের ইচ্ছায়। সরকারি কয়েকটি দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিকদের মতো অনলাইন জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার মতো অপরাধ অনুসন্ধানের বাঁকে বাঁকে সংস্থাটির তদন্ত কর্মকর্তা গতি পরিবর্তন করেছেন। একেক সময় দেয়া হয়েছে এক এক ধরনের বক্তব্য।  নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করে করা আলোচিত  মামলাটির চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

দীর্ঘদিনের তদন্ত শেষে সংস্থাটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, যে ঘটনায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল ‘সেটি মিথ্যা’। সংশ্লিষ্টদের মতে,  রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিক বানানোর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অপরাধীদের বাঁচাতে ‘ইউটার্ণ’ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। চুড়ান্ত  প্রতিবেদনে পুলিশ, নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সব আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করা হয়েছে।গত ২ মে সেই আবেদন অনুমোদন করা হয়।

এতে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক উল্লেখ করেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা নথি পর্যালোচনা করে কমিশন পরিতুষ্ট হয়েছে। দুদক আইন- ২০০৪ এর ৩২ ধারা এবং দুদক বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি ১৫ উপবিধি ১-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুমোদন দেওয়া হলো।

নথি অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সিভিল রাইটের জন্য হাইকোটের দারস্থ হন আসামীরা। পাসপোর্ট বাতিল হবার পর এবং শরীফ উদ্দিন ( পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা)  চাকরিচ্যুত হবার তারা বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ফিরে পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। পুলিশকে পক্ষভুক্ত করলেও দুদককে তারা মামলায় পক্ষও করে নি। তারপরও হাইকোর্টের রেফারেন্স টেনে দুদক মামলার ফাইনাল রিপোর্ট ‘মিস্টেক অব ফ্যাক্ট’, কেন দেয়া হলো সেটি নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় প্রশ্ন৷ যদিও উচ্চ আদালতে তারা নাগরিকত্ব ফিরে পান। কিন্তু দুদকের করা মামলাটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে  জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলা ;  পাসপোর্ট সংক্রান্ত কোন মামলা নয়। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা কোন যুক্তিতে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ উপেক্ষা করে হাইকোর্টে আসামিদের পাসপোর্ট ফিরে পাবার আবেদনকে তদন্তে গুরুত্ব দিয়েছেন- সেই প্রশ্নও সুশাসন নিয়ে কাজ করা আইনজীবিদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলোচিত মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেছিলেন চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। এরপর তদন্ত করেছিলেন চট্টগ্রামের আরেক উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম। সর্বশেষ মামলাটি তদন্ত করেন কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন। তিনি মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করেন।

প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন পেয়ে গত ১৫ মে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে তিনি ‘মামলার ঘটনা সত্য নয়’ বলে উল্লেখ করেন।

অথচ বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা এ দেশের জন্মনিবন্ধন, এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট পাচ্ছেন— সুনির্দিষ্ট  অভিযোগ পেয়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছিলো দুদক। সেসময় ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। ওই দলে ছিলেন দুদকের সাবেক পরিচালক জহিরুল ইসলাম, উপ-পরিচালক সুভাষ দত্ত, মুহ. মাহবুবুল আলম, মো. সালাউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জাফর সাদেক শিবলী এবং চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। সেই মামলায় সরকারি কয়েকটি দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিকদের মতো অনলাইন জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় মামলায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৩ জনের মধ্যে ১০ জনই পেয়েছিলেন বাংলাদেশি পাসপোর্ট। এ কারণে মামলায় নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছিল।

ওই সময় জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩ রোহিঙ্গার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে নানা নথিপত্র সংগ্রহের প্রমাণ মেলে দুদকের অনুসন্ধানে। তারা কক্সবাজারের ঈদগাহ উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়ন থেকে এ চেষ্টা চালায়। চুড়ান্ত প্রতিবেদনে আসামীদের অব্যাহতি দেয়া হলেও মামলাটির প্রথম দফা তদন্তের আগে অনুসন্ধান শেষে সংস্থাটি মামলার এজাহার দায়ের করেছিল। ওই অনুসন্ধান দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ১৭ জুন দুদকের চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন । এতে রোহিঙ্গাদের আসামি করার পাশাপাশি অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়।

ওই মামলার আসামিরা হলেন- কক্সবাজার ঈদগাহ উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. তৈয়ব, মোহাম্মদ ওয়ায়েস, মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, মোহাম্মদ রহিম, আবদুর রহমান, আব্দুস শাকুর, নুর হাবিবা, আমাতুর রহিম, আসমাউল হুসনা, আমাতুর রহমান, নুর হামিদা, মোহাম্মদ ওসামা, হাফেজ নুরুল আলম, পুলিশ পরিদর্শক এস এম মিজানুর রহমান, মো. রুহুল আমিন, প্রভাষ চন্দ্র ধর এবং তৎকালীন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা একে-অপরের সহযোগিতায় অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে অন্যায়ভাবে লাভবান করে ভুয়া জাতীয়তা ও জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদানপূর্বক এর বিপরীতে বালাম বই গায়েব করে ভুয়া পরিচয়, নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদান ও গ্রহণ করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণসহ জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন। অভিযুক্তরা দণ্ডবিধি ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।লিখিত এজাহার পেয়ে ২০২১ সালের ১৭ জুন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম- ২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন মামলাটি রেকর্ড করেছিলেন।

জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে দশজন বাংলাদেশের পাসপোর্টও নেন। ওই দশ জনের পাসপোর্ট নিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা তিন দফা করে মোট ছয় দফায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন । সেই তদন্ত প্রতিবেদনেও একেকবার একেক ধরনের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ জনের মধ্যে আটজনের পাসপোর্টের পুলিশ প্রতিবেদন দিয়েছিলেন ঘটনার সময়ে কক্সবাজার জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক ও বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে কর্মরত এস এম মিজানুর রহমান।বাকি দুজনের পাসপোর্টের প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা বিশেষ শাখার পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন। দুই কর্মকর্তাই প্রতিবেদনে ওই ১০ জন ‘বাংলাদেশি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। অনুকূলে প্রতিবেদন পেয়ে ১০ জনের নামে পাসপোর্ট ইস্যু করে অধিদপ্তর।

তবে, দুদকের অনুসন্ধানে তাদের রোহিঙ্গা বলে শনাক্ত করা হয়। একইসাথে  ২০২০ সালের ৪ জুলাই দুই পুলিশ কর্মকর্তা পাসপোর্ট কার্যালয় বরাবর চিঠি পাঠিয়ে ওই ১০ জন রোহিঙ্গা বলে উল্লেখ করেন। ফলে ১০ জনের পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যায়। পাসপোর্ট বাতিল হবার পর তারা বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ফিরে পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। উচ্চ আদালতে তারা নাগরিকত্ব ফিরে পান। এরপর পাসপোর্ট অধিদপ্তর তৃতীয় দফা কক্সবাজার ডিএসবি থেকে ১০ জনের প্রতিবেদন তলব করে।তৃতীয় দফায়ও ১০ জনের নাগরিকত্ব নিয়ে তদন্ত করেন ওই দুই কর্মকর্তা।

এর মধ্যে ডিএসবি কর্মকর্তা এস এম মিজানুর রহমান উল্লেখ করেন, তিনি ২০১৭ সালের ২১ জুন থেকে ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজার ডিএসবির ডিআইও- ১ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালের বিভিন্ন সময়ে মামলার আসামি কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের আট ব্যক্তির পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন আবেদন অনুসন্ধানের জন্য ওই কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়। তিনি পাসপোর্টপ্রার্থীদের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায় মামলার ১৩ আসামির নাম ইসলামাবাদ ইউনিয়নের বালাম বইয়ে রোহিঙ্গা হিসেবে লেখা রয়েছে। দুদকের প্রথম অনুসন্ধানেও সেটি প্রমাণিত হয়। আবেদনে উল্লিখিত প্রার্থী, তাদের পিতার স্মার্ট কার্ড, প্রার্থীর স্মার্ট কার্ড, এনআইডি কার্ড, দুই প্রার্থীর মায়ের মৃত্যুসনদ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র, হালনাগাদ ভোটার তালিকা, স্থাবর সম্পত্তির দালিলিক কাগজপত্রের ফটোকপি, প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রসহ স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশি মর্মে প্রাথমিকভাবে জানতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে পাসপোর্ট প্রদানের জন্য ওই কর্মকর্তা মতামত প্রদান করলে তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট পান। পরবর্তীতে তিনি ভুল তথ্যের ভিত্তিতে উপরোক্ত প্রার্থীদের পাসপোর্টগুলো বাতিলের জন্য পুলিশ সুপার (ডিএসবি) কক্সবাজার বরাবর আবেদন করলে প্রার্থীদের পাসপোর্টগুলো ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বাতিল করে।

প্রতিবেদনে তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রকৃতপক্ষে পাসপোর্টপ্রার্থীদের বিষয়ে তিনি প্রথমে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন তা সঠিক ও যথাযথ ছিল। পাসপোর্টপ্রার্থীদের শত্রুরা তাদের নিজেদের পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে মিথ্যা তথ্য দিলে তিনি প্রার্থীদের পাসপোর্টগুলো বাতিলের জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি সঠিক নয়। তিনি প্রথমে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন সেই প্রতিবেদনটি সঠিক ও যথাযথ ছিল। তাই পাসপোর্টগুলো বাতিলের প্রতিবেদন গ্রহণ না করে প্রথমে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন সেটি গ্রহণের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে প্রার্থীদের পাসপোর্টগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক বরাবর আবেদন করেন। পরে ওই আট ব্যক্তি তাদের পাসপোর্ট ফিরে পান।

প্রায় একই ভাষায় দাখিল করা তৃতীয় দফা প্রতিবেদনে পরিদর্শক রুহুল আমিন উল্লেখ করেন, তিনি ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার ডিএসবির ডিআইও- ২ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময়ে তিনি দুজন ব্যক্তির পাসপোর্ট আবেদন অনুসন্ধান করেন। তাদেরকে তিনি প্রথমে বাংলাদেশি বলে প্রতিবেদন দেন। পরবর্তীতে আবার ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিয়ে পাসপোর্ট বাতিলের আবেদন করেন। সর্বশেষ প্রতিবেদনে দুজনকে বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করেন।

একেকবার একেক ধরনের প্রতিবেদন পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার ডিএসবির তৎকালীন পরিদর্শক ও ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে কর্মরত এস এম মিজানুর রহমান  বলেন, ‘ আমরা প্রথমে সঠিক প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। পরে দুদকের চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ওই সময় আমরাও ভুল তথ্যের ভিত্তিতে দ্বিতীয় দফা প্রতিবেদনে তাদের ‘রোহিঙ্গা’ বলে প্রতিবেদন দিয়েছি। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় আমরা তা সংশোধন করেছি। এখন তারা নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছে। ‘

হাতে আসা নথি অনুযায়ী ২০২০ সালের দিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্টপ্রাপ্তির বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে দুদক। বছরখানেক তদন্ত শেষে তারা ঈদগাহ উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ১৩ জনকে প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গা শনাক্ত করে মামলা রুজু করে। কিন্তু মামলার তদন্তে নেমে একই সংস্থার অন্য কর্মকর্তা তাদের রোহিঙ্গা নয় বলে উল্লেখ করেন।

দুদক কার্যালয়ের বক্তব্য, মামলার তদন্তে যা পাওয়া গেছে প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় তারা রোহিঙ্গা মর্মে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ কারণে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (মিস্টেক অব ফ্যাক্ট) দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে সম্মতি পেয়ে সম্প্রতি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ‘

মামলা রুজু হওয়া এবং সাথে দেয়া মামলার এজাহারে রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করার বিষয়ে যেসব প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে সেটিও অস্বীকার করে বসেছেন  কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন। দুদক কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই চট্টগ্রামের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছিলো দুদকে  অনুসন্ধানকারী টিম। কিন্তু এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন নি সর্বশেষ তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।।

এ ঘটনার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিবেদক। তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, কেন ১৩ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল?

তিনি জানান, ‘ আসামিরা জাল রেকর্ড সৃজন করে ভুয়া জাতীয়তা সনদপত্র তৈরি করেছেন। এ ছাড়া মামলার আসামিদের কারও কারও বয়স তার মা-বাবার চেয়ে কম। আসামিদের জাতীয়তা সনদপত্রের ক্রমিক নম্বরের সঙ্গে বালাম বইয়ের ক্রমিক নম্বরের মিল নেই। জন্মনিবন্ধনের বালাম বইয়ের রেজিস্ট্রারে তাদের জাতীয়তার তালিকা মিয়ানমার হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত তাদের জন্মনিবন্ধনের অনলাইনের কপিতে জাতীয়তা মিয়ানমার হিসেবে উল্লেখ ছিল। ‘

তিনি বলেন,  ‘ জন্মনিবন্ধনের বালাম বই গায়েব হলেও তদন্তকালে তা উদ্ধার হয়। সেখানে এখন পর্যন্ত তাদের জাতীয়তা ‘মিয়ানমার’ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। স্থানীয় ৩ নম্বর ইসলামাবাদ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ৮৯৭ রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকা করেছেন। যেখানে এ মামলার ১৩ আসামি রয়েছেন। ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূর ছিদ্দিক ও সংশ্লিষ্ট মেম্বার, গ্রাম পুলিশ কর্তৃক তাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিক মর্মে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা হয়। এমনকি ডিএসবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বেল্লাল হোসেন তাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিক মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ‘

জানা যায়, গত বছরের ৯ মার্চ ঢাকা থেকে কক্সবাজার জেলা বিশেষ শাখা পুলিশ সুপার বরাবর পত্র পাঠিয়ে পাঁচ ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। যাদের নাম ওই ১৩ আসামির তালিকায় রয়েছে।এরপর মোহাম্মদ তৈয়ব, নুর হামিদা, আব্দুর রহমান, আব্দুস শাকুর ও নুর হাবিবা নামে ওই পাঁচ ব্যক্তির পরিচয় জানতে তদন্ত করেন কক্সবাজার জেলার বিশেষ শাখায় কর্মরত এসআই মো. বেল্লাল হোসেন। তদন্ত শেষে গত বছরের ৮ মে তিনি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ওই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ অনুসন্ধানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি হাফিজুর রহমান (বাবলু), নুরুল আলম, আলী হোসেন, সাফায়েত উল্লাহ, স্থানীয় ইউপি সদস্য আ. শুকুর, স্থানীয় গ্রাম পুলিশ বেদারুল ইসলাম, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুর সিদ্দিকিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের দেওয়া সাক্ষ্যে অভিযুক্ত পাঁচজন মিয়ানমারের নাগরিক মর্মে এলাকায় যথেষ্ট জনশ্রুতি রয়েছে। ওই পাঁচজনের জাতীয়তা সনদ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যাচাই করে সঠিক পাওয়া যায়নি। তাদের পূর্বপুরুষের সঠিক কোনো অবস্থান বিদ্যমান নেই। তারা ভাসমান অবস্থায় প্রথমে কক্সবাজার কলাতলী থেকে ঈদগাঁও মেহেরঘোনা, ঈদগাঁও ভাদিতলা, পটিয়া চট্টগ্রাম এবং সর্বশেষ ২০০৫ সালে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের আউলিয়াবাদসহ সব জায়গায় বন বিভাগের জায়গায় বসবাস করে আসছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা পটিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। পরবর্তীতে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের আউলিয়াবাদে বসবাস শুরু করেন। তারা কক্সবাজারের রামুর বাসিন্দা ওলা মিয়াকে পূর্বপুরুষ বলে উল্লেখ করেন।

অনুসন্ধানকালে রামুর জোয়ারিয়ানালার মৃত ওলা মিয়ার ছেলে হাজি নূরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওলা মিয়ার তিন ছেলে চার মেয়ে। তারা হলেন- মৃত নুর আহমদ, নুরুল ইসলাম, মৃত নুর হোছাইন, ছলেমা খাতুন, ছকিনা খাতুন, ছফুরা খাতুন ও মরিয়ম খাতুন। ওলা মিয়ার স্ত্রী দৌলত বাহার অসুস্থ হলে ওলা মিয়া দ্বিতীয় বিবাহ করেন। যদিও তদন্ত কর্মকর্তা ওই স্ত্রীর নাম জানতে পারেননি। বিবাহের দুই থেকে তিন বছর পর দৌলত বাহার সুস্থ হয়ে গেলে দ্বিতীয় স্ত্রী ওলা মিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। এ সময়ে ওলা মিয়ার দ্বিতীয় সংসারে কোনো সন্তান হয়নি। এরপর ১৫ থেকে ১৮ বছর পরে দৌলত বাহার তার স্বামীর দেখাশোনার জন্য পূর্বের ডিভোর্স দেওয়া নারীকে পুনরায় ওলা মিয়ার সঙ্গে বিয়ে দেন। এর আনুমানিক দুই বছর পর এবং ওলা মিয়ার মৃত্যুর ছয় মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রী আবার ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। ওই সময়েও ওলা মিয়ার ঘরে কোনো সন্তান হয়নি।

ওলা মিয়ার মৃত্যুর আনুমানিক এক বছর পর ওই নারী জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদে খোরপোষের টাকার জন্য অভিযোগ করেন। সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ওলা মিয়ার তিন ছেলেকে ১৩০০ টাকা খোরপোশ ধার্য করে আরও ৫০ টাকা বেশি দিয়ে মোট ১৩৫০ টাকা ওই নারীকে দেওয়া হয়। অতএব মো. তৈয়বের পূর্ব পুরুষ মৃত ওলা মিয়ার বংশধর বলে দাবি করা হলেও এটি সত্য নয়। তৈয়বের পিতা মৃত জালাল আহমদ, জালাল আহদের পিতা মৃত আহমদ হোসেন। এ আহমদ হোসেনের পিতা, মাতা, ভাই ও বোন অথবা নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের নাম-ঠিকানা সম্পর্কে আবেদনকারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি কিছু বলতে পারেননি। ‘

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের বক্তব্য 

এ মামলার আসামিদের সবাই ঠিকানা উল্লেখ করেছেন ঈদগাহ উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড। এ এলাকায় ১৯৯৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনবার মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন বশির আহমেদ। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন।

জানতে চাইলে  তিনি বলেন, আপনি যে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করেছেন তারা সবাই রোহিঙ্গা। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের বালামে তাদের পরিচয় রোহিঙ্গা বলে উল্লেখ রয়েছে। তারা আমাদের এলাকায় কোনো জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড তৈরি করতে পারেননি। ২০১৪ সালের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তারা জন্মনিবন্ধন ও আইডি কার্ড তৈরি করেন।

এ এলাকার অপর বাসিন্দা হচ্ছেন নুর মোহাম্মদ আনসারী। ৫১ বছর বয়সী নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘ আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা করা হয়েছিল। সেখানে ৮০০ জনের বেশি রোহিঙ্গার নাম উল্লেখ রয়েছে। ওই তালিকায় মামলার আসামিরাও (১৩ রোহিঙ্গা) রয়েছেন। তাদের এ এলাকায় তেমন কোনো জায়গা নেই। তারা বন বিভাগের জায়গা দখল করে থাকেন। এ কারণে সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ মামলা দায়ের করেছে। অভিযুক্তরা যে রোহিঙ্গা এটা প্রমাণের জন্য বেশি দূর যেতে হবে না। এখানে কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাবা-মার চেয়ে সন্তানদের বয়স বেশি। ‘

যদিও এ ঘটনার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন ১৩ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল? তিনি জানান, আসামিরা জাল রেকর্ড সৃজন করে ভুয়া জাতীয়তা সনদপত্র তৈরি করেছেন। এ ছাড়া মামলার আসামিদের কারও কারও বয়স তার মা-বাবার চেয়ে কম। আসামিদের জাতীয়তা সনদপত্রের ক্রমিক নম্বরের সঙ্গে বালাম বইয়ের ক্রমিক নম্বরের মিল নেই। জন্মনিবন্ধনের বালাম বইয়ের রেজিস্ট্রারে তাদের জাতীয়তার তালিকা মিয়ানমার হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত তাদের জন্মনিবন্ধনের অনলাইনের কপিতে জাতীয়তা মিয়ানমার হিসেবে উল্লেখ ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নুর মোহাম্মদ আনসারী যে রোহিঙ্গা তালিকার কথা বলেছিলেন সেটি তৈরি করেছিলেন ইসলামাবাদ ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুর ছিদ্দিক।

জানতে চাইলে তিনি  বলেন, ‘ এলাকায় রোহিঙ্গা বেড়ে যাওয়ায় একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছিল। গ্রাম-পুলিশ, ইউপি মেম্বার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ওই তালিকায় পুরো ইউনিয়নে ৮০০ রোহিঙ্গা শনাক্ত করা হয়েছিল। যার বেশিরভাগ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করতেন। ওই এলাকায় মামলার আসামি মোহাম্মদ তৈয়বসহ অন্যরা থাকেন। তাদের নাম ইউনিয়নের বালাম বইয়ে রোহিঙ্গা হিসেবে লেখা রয়েছে। ‘

উদঘাটিত সত্যের কবর 

দুদক কর্মকর্তারা তের রোহিঙ্গা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে মামলা দায়ের করলেও একই সংস্থা অন্য কর্মকর্তার হাতে কবর হলো সেই সত্যের। দীর্ঘদিনের তদন্ত শেষে আলোচিত এ মামলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলার আসামি ও পাসপোর্ট আবেদনকারীদের এনআইডি রয়েছে এবং যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্মসনদ রয়েছে। তারা কোনো বাধা ছাড়াই দীর্ঘকাল ধরে নিজ গ্রামে বসবাস করে আসছেন। আবেদনকারীদের কয়েকজন ইতোমধ্যে জমি ক্রয় করেছেন এবং বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরে এর দখল ভোগ করছেন। নিজ নিজ এলাকার ভোটার তালিকায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। আলোচ্য পাসপোর্ট ১০টির বাতিলাদেশের বিপরীতে তাদের কর্তৃক দায়েরকৃত হাইকোর্টের একটি রিট পিটিশনের শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের বিষয়ে রায় আসামি মো. তৈয়বদের পক্ষে প্রদান করা হয়। রায়ে তৈয়বদের বাংলাদেশের নাগরিক বিবেচনায় পাসপোর্টগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এ রায়ের বিপরীতে পাসপোর্ট অধিদপ্তর আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করে। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর রায় প্রদান করেন। এতে পিটিশনের কোনো মেরিট না থাকায় সেটি ‘ডিসমিস’ করা হয় এবং হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রেখে আদেশ প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে পাসপোর্ট অধিদপ্তর পাসপোর্টগুলোর বাতিলাদেশ প্রত্যাহার করে সেগুলোকে বৈধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে আসামিরা পুনরায় তাদের পাসপোর্ট ফেরত পান। এ ছাড়া মামলার ছয় আসামি পাসপোর্টপ্রাপ্তির আবেদনকালে নাবালক ছিলেন এবং তারা সবাই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন। সার্বিক বিষয় বিবেচনায়, তদন্তকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় তারা রোহিঙ্গা নাগরিক মর্মে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনুষ্ঠিত দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, সত্য উদঘাটন হবার পরও চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার মাধ্যমে দুদকের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এখন সেই ঘোষণার বাস্তবায়নের দায়িত্ব দুদকের। কিন্তু দুদক কর্মকর্তারা নিজেরাই যদি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন সেক্ষেত্রে বলার কিছু নেই। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। ‘

জড়িত কর্তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আইনজীবী আখতার কবির চৌধুরী  বলেন, দুদক সাধারণত অনুসন্ধান করে এজাহার দায়ের করে। তদন্তে আরও বিস্তারিত বিষয় উদঘাটিত হয়। এখন এ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট ‘মিস্টেক অব ফ্যাক্ট’, এর মানে হলো আগের অনুসন্ধান অস্বীকার করা। এক কথায়, অনুসন্ধানের পুরোপুরি বিপরীত। যেহেতু জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সবাই তাদের এক বাক্যে রোহিঙ্গা বলছেন, সেখানে দুদক বলছে উল্টো।

উৎকোচ নিয়ে দুদক কর্মকর্তারা এমনটি বলেছেন বলেও অভিযোগ তার।

ডিএসবি কর্মকর্তাদের একই বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন দেওয়া প্রসঙ্গে আখতার কবির চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা নিজেদের জন্য চেষ্টা করেছেন। তারা জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের এনআইডি, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট বানিয়েছেন। এখন এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের চেয়ে আমাদের দেশের অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের অপরাধ বেশি। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে নির্বাচন কমিশনসহ সরকারি কর্মকর্তাদের অপরাধ ঢাকতে তের রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশী হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হলো। পূর্বের অনুসন্ধানের পাওয়া তথ্য প্রমাণ  আমলে না নিয়ে মামলা থেকে সতের আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি দূর্নীতির ভিন্ন নজির স্থাপন করলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর