নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম, জেলা প্রতিনিধিঃ
ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা তীরে থামছে না নদী ভাঙন। ভাঙনে বসত ভিটা হারিয়ে অনেকে হয়েছে পথের ফকির। কোথায় হবে তাদের আশ্রয় স্থান এ চিন্তায় ঘুম আসে না ভুক্তভোগিদের।গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে উজানের পাহাড়ি ঢলে ও নদীর পানি কমতে শুরু করায় ব্রম্মপুত্র ও ধরলা নদী ভাঙ্গনের করাল গ্রাসে কেড়ে নিয়েছে অনেকের বসতভিটা। একর একর আবাদি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে অনেক মুলাবান সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিন মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে দেখা যায় কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের আকেল মামুদ ভুগলের কুটি, সরকারপাড়া গ্রাম ও উত্তর বালা ডোবা গ্রামে ব্রম্মপুত্র ও ধরলা নদীর তীরে ভাঙন কবলিত এলাকায় নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে অনেকে তাদের বাড়িঘর অন্যত্বে সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙ্গনের শিকার , ভূগোলের কুটি গ্রামের, আব্দুল বারেক, রহিম বাদশা, রুস্তম আলী, হক সাহেব, শাহ জামাল, হাসেন আলী, ব্যবসায়ী রুস্তম আলী সহ অনেকে জানান, গত কয়েক দিনের ভাঙ্গনে প্রায় শতাধিক পুরাতন বসত ভিটা ও প্রায় ৩০ বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়াও বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়ার বসতবাড়ি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
যে কোন মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।
ভুক্তভোগীরা জানান, আমাদের গ্রামে নদী ভাঙ্গন রোধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বালাডোবা ও সরকার পাড়া গ্রামের আবু তালেব,আব্দুল কাদের, মোগলনগরের পারভীন ইউনুস, আবুসাঈদসহ অনেকের বসত ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের বসত ভিটা ও হুমকির মুখে পড়েছে।
বেগমগঞ্জ মোল্লারহাট বাজারে ভাঙ্গনে বেশ কিছু দোকান ঘরের জায়গা ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বসে বেচাকেনা করছেন । ক্রেতারা কেনাকাটা সারছেন রাস্তায়।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিনের ব্যবধানে ব্রম্মপুত্র ও ধরলা নদী নিঃস্ব করে দিয়েছে অনেকের জীবন।
হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ৯ শতাধিক পরিবারের বসত বাড়ি ও আবাদি জমি।
এছাড়া সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক সেন্টার, আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ অনেক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।
ভাঙ্গনের শিকার ভূগোলের কুটি গ্রামের রুস্তম আলী নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া বসতভিটার দিকে নির্বাক তাকিয়ে জানান, ‘ কয়েক দিন আগেও এখানেই ছিল তার সাজানো সংসার। উঠানে খেলা করেছিল তার ছেলে মেয়েরা। এখন সেখানে নেই বাড়িভিটার কোন চিহ্ন। ভেঙ্গে নেয়া বসতভিটায় এখন খেলা করে নদীর জল। ‘
স্থানীয় ইউনুস আলী জানান,ভাঙ্গনরোধ ও বসতভিটা হারানো পরিবারের আশ্রয়ের সুব্যবস্থার জন্য ইতিপুবে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেও কোন সুরাহা হয়নি। আশ্রয়হীন পরিবারের অনেকে নিরুপায় হয়ে পার্শ্ববর্তী হকেরচর,কাজিয়ারচর,মুছারচর কালিরআলগাসহ বিভিন্ন স্থানে কোন রকমে আশ্রয় নিযেছে। বর্তমান ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। জনশূন্য হচ্ছে গ্রামের মানুষ।
ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, ‘ ভাঙ্গল রোদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জানানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের সরকার পাড়া এলাকায় ভাঙ্গন রোধে ১৫০ কিলোমিটার কাজ চলমান রয়েছে। এটা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে । পরবর্তীতে জানানো যাবে। উত্তর বালা ডোবা ওভূগোলের কুটি ভাঙ্গন এলাকাটির বিষয়ে আমার সঠিক জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।