25.2 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

সাতকানিয়ায় এক ব্যক্তিকে মেরে মুমূর্ষু অবস্থায় অস্ত্রসহ পুলিশে দিলো সেই সাইফুল

আরও পড়ুন

তানভীর আহমেদ :::

সিএনজি ভাড়া নিয়ে ঘটনার সুত্রপাত। তবে মুহুর্তেই সেটি যুদ্ধে রূপ নেয়। ঈদের পরদিন সাতকানিয়ার চরতিতে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে আতন্কিত সাধারণ মানুষ দিকবিদিক ছুটতে থাকে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) উপজেলার চরতী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড গাইনার বাড়ি এলাকায় এঘটনা ঘটে। সাইফুল বাহিনীর তান্ডবে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, চরতী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীর এক সমর্থক সাইফুল বাহিনীর হাতে বেধড়ক পিটুনির শিকার হন। আতিক (২৬) নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করে ভাঙা অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যবরত মেডিকেল অফিসার ডা. সুব্র দেব বলেন, ”আতিক নামে একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ সহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসা নিয়েছে। ‘

অভিযোগের তীর যার দিকে সেই সাইফুল পুরো ঘটনাকে জনতার প্রতিরোধ হিসেবে দেখালেও স্থানীয়রা বলছেন প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি। অস্ত্রের মুখে প্রতিপক্ষ পিছু হটলে আতিককে মেরে আধমরা অবস্থায় তার পাশে ভাঙা বন্দুক রেখে পুলিশ আনেন সাইফুল।

জানতে চাইলে চরতী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং প্যানেল চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, সিএনজি ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সিএনজি চালক জিহান ও তার চাচা হাশিমকে মারধর করা হয়।  পরে স্থানীয়রা প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷  স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করতে গেলে সবাইকে এলোপাতাড়ি গুলি করে সন্ত্রাসীরা । এসময় বেশ কয়েকজন আমার এলাকার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়।  আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনি যে একজনকে অস্ত্রসহ আটক করেছে। অস্ত্রটি ভাঙা কিনা আমার জানা নেই৷ আমি ওই ব্যক্তিকে সেখান থেকে আহত অবস্থায়  উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পাঠায়। ‘

ঘটনার তিনজন প্রত্যক্ষদর্শি জানান, ‘ সিএনজি ভাড়া নিয়ে ঝগড়ার পরপরই সাইফুলের লোকজন অস্ত্রসহ ঘটনাস্থলে এসে তান্ডব চালায়। তাদের হাতে মার খেয়ে আহত হওয়া  মুমূর্ষু  আতিককে একটি ভাঙা দেশিয় বন্দুকসহ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অস্ত্রটি সাইফুল এনে দেয় পুলিশকে।  ‘

স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, আহতরা হলেন- চরতী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সুলতান আহমদের ছেলে শফি আহমদ (৬০), মৃত কবির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), আহমদ ছফার ছেলে মো. সোহেল (৩০), ইউনিয়নে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. তানিম (১৩), মো. আলমগীরের ছেলে জোবায়ের ইসলাম আকিব (২২),তাজ উদ্দিনের ছেলে হুমায়ুন কবির (২৯), মৃত জাফর আহমদের ছেলে মো. রুবেল (৩১), মৃত আবদুর জলিলের ছেলে লেয়াকত আলী (৫৬), আবদুল মতলবের ছেলে আবুল হাশিম (৩৬), মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ আশেক (২০) এবং আমিলাইষ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত হাসানের ছেলে ইরফান (২৩)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে প্রতিদিনই প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে এই সাইফুল বাহিনী। গত তিন মাসে সাতকানিয়ায় অন্তত ২২টি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে এই বাহিনী। থানা-পুলিশ জানিয়েছে, এর মধ্যে ১০টি অভিযোগ জমা পড়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাকিরা ভয়ে মুখ খোলেনি।

এর মধ্যে নির্বাচনের পরপরই সন্ধ্যায় দক্ষিণ চরতীতে নৌকার সমর্থকদের বাড়িঘর-দোকানে হামলা ও লুটপাট চালায় এম এ মোতাবেলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনী। গেল জাতীয় নির্বাচনের পর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুকের বাড়িসহ ডেকোরেশনের দোকানে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায় সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের পরের দিন সোমবার খতিরহাট এলাকায় নৌকার সমর্থক জিল্লুর রহমানকেও মারধর করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের আগের দিন শনিবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আমিনকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন সন্ত্রাসী সাইফুলের বড় ভাই জসিম উদ্দিন। এ ছাড়া নির্বাচনের পর থেকে চরতী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীকে বারবার প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন সন্ত্রাসী সাইফুল।

মঙ্গলবারের ঘটনার বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, সিএনজি ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। এসময় স্থানীয়রা অস্ত্রসহ একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় কেউ মামলা করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।

প্রসঙ্গত, জনপ্রতিনিধি হলেও দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মাদক ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা, বালি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ সাইফুলের হাতে। ২৫ শে এপ্রিল  সাতকানিয়ার আলোচিত সন্ত্রাসী দল এই ‘সাইফুল বাহিনীর’ সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত দেলোয়ার হোসেন ‘বগা’ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। দেলোয়ার হোসেন ওরফে বগা সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরতী এলাকার আলী চাঁন বাড়ির আহমেদ হোসেনের ছেলে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আলোচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড  ইয়াবা ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ওরফে বগার গ্রেপ্তারের পর এলাকায় স্বস্তি ফিরলেও দুই মাসের মাথাচ নতুন উদ্যমে মাঠে কব্জির জোর দেখিয়েছে সাইফুল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর