নাদিরা শিমু, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের আলোচিত ইয়াবা ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ প্রকাশ রশিদ খুলু হাসিনা নামের এক রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করে নিয়ন্ত্রণ করছেন মিয়ানমার ভিত্তিক ইয়াবা নেটওয়ার্ক। হাসিনা আক্তার নামের ওই রোহিঙ্গা নারীর ঠিকানা দেখানো হয়েছে নগরের হালিশহরে। এই ঠিকানায় ভুয়া এনআইডি তৈরিতে সহযোগিতা করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গা নাগরিক হাসিনা আক্তারের নামে ভুয়া এনআইডি তৈরি করা হয়েছে সম্প্রতি। এনআইডি নং-৮৭২২৭৭০৫৪৫। হাসিনা আক্তারের বাবার নাম মৃত মোহাম্মদ তাহের। মায়ের নাম নুরজাহান। তাদের কেউই বাংলাদেশের নাগরিক নন। হাসিনার জন্মতারিখ দেখানো হয়েছে ৭ই মার্চ ১৯৭৮। এত বছর পর কেন জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) তৈরি করা হয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এনআইডি কিংবা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছাড়া তিন বছর আগে কিভাবে হাসিনাকে বিয়ে করেছেন রশিদ সেই প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে প্রথমে আব্দুর রশিদ প্রকাশ রশিদ খুলু টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে অবস্থান নেন। এরপর কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে আবাস গড়েন। ২০১২ সালে ২ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার হন ইয়াবা চালানের মূল হোতা রশিদ আহমদ খুলু, তার শ্যালক আতাউল করিম, ইসমাইল ও সাব্বির আহমেদ।খাতুনগন্জের একটি বরই গুদাম থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলো। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইয়াবা ব্যবসা করে শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত তিন কোটি পনের লাখ টাকার সম্পদ উপার্জন অভিযোগর দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করে। ২০২২ সালের ২২ শে সেপ্টেম্বর দায়ের করা সেই মামলা চলমান অবস্থায় রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করেন তিনি ( দ্বিতীয় বিয়ে) । স্ত্রীর নামে জাতীয় পরিচয় পত্র বানান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী আবাসিক এলাকার ২ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর বাড়িটি রশিদ খুলুর। পরিবার নিয়ে এখানেই বসবাস করছেন অনেক বছর।হালিশহর শ্যামলী আবাসিক এলাকায় একতা বিল্ডিং সংলগ্ন আরও একটি বিলাসবহুল ভবন রয়েছে তার। ২০১৫ সালে খুলুর সিন্ডিকেটের প্রধান জাহিদুল ইসলাম ওরফে আলো ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ার পর চট্টগ্রামের সব অফিস বন্ধ করে ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম ও অফিস গড়ে তোলেন রশিদ খুলু। তবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ১০৫ ইয়ারা ব্যবসায়ীর সাথে আত্নসমর্পণের সুযোগ নিয়ে পুনরায় ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন রশিদ খুলু।
অনুসন্ধানে জানা যায় ইয়াবা গডফাদার মোজাহের গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি থাকলেও ভাগ্য ভালো রশিদ খুলুর। তিনি তখন দেশত্যাগ করতে সক্ষম হন। পরে দেশে ফিরে আত্নসমর্পন করে ছাপছুতরা হন রশিদ খুলু। সুত্রমতে, মিয়ানমারের সাথে যোগাযোগের সুবাদে রশিদ খুলু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন।
সুত্রমতে, এই রোহিঙ্গা নারীর নামে পাসপোর্ট তৈরি করার চেষ্টা ভেরিফিকেশনে ভেস্তে যায়। রোহিঙ্গা নাগরিক হবার কারণে হাসিনা আক্তারের নামে পাসপোর্ট তৈরি করা সম্ভব হয় নি। রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র বানানোর বিষয়ে রশিদ খুলুকে মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেন নি।