26 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

নগরে ছাত্রদলনেতা রাউজানে আওয়ামী লীগ

বহুরূপী জালালের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা

আরও পড়ুন

তানভীর আহমেদ :::

মোঃ জালাল, চট্টগ্রাম নগরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙ্গার আসামী আর রাউজানে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা৷ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সহ-সস্পাদক জালাল ; রাউজানে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা । ২০২৩ সালে চট্টগ্রা নগরীতে তিনটি নাশকতা ও রাউজানের একটি হত্যাচেষ্টার মামলায় বর্তমানে  কারাগারে রয়েছেন জালাল। বহুরুপী জালালের বিরুদ্ধে  গরু ব্যবসার নামে  হাতিয়ে নেবার অভিযোগে  একাধিক ভুক্তভোগী আদালতে মামলা করেছে।

নথি অনুযায়ী  গরু ব্যবসার নামে জালাল বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বহুরূপী  জালালকে আওয়ামী লীগ বানাতে এবং গরু ব্যবসার নামে বিভিন্ন অপকর্মে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন রাউজান কৃষক লীগের এক শীর্ষ নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ১নং হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্তা তোতা গাজীর বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ জালাল।এক সময় বসবাস করতেন চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা এলাকায়৷ রাউজানের ছেলে হওয়ায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁড়ির দণ্ডে দণ্ডিত সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর সাথে ছিল বেশ ঘনিষ্ঠতা। আর সেই সুবাদে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের কমিটি সহ-সম্পাদক পদও পেয়ে যান জালাল৷

২০২৩ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান এলাকায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিসহ একাধিক স্থাপনার ভাংচুর চালায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা। সেদিনের সেই ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার ভুক্ত ১৮ নং আসামি  মোঃ জালাল। পরবর্তীতে একই দিন  মিছিল থেকে চট্টগ্রাম কলেজের সামনে নাশকতার মামলায় চকবাজার থানায় দায়ের করা আরেক মামলায় জালালকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ সর্বশেষ  এপ্রিল মাসে এনায়েত বাজার এলাকায় আরেকটি নাশকতার ঘটনায় জালালের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়ে সেই মামলাতেও তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

জালালের ঘনিষ্ঠজনদের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের জুন মাসে নাশকতার ঘটনা সংঘটিত করেই রাউজানে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। সেখানে আগে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন জালাল। বিশেষ করে রাউজান উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সুমনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করে জালাল।  সেই সুবাদে একাধিকবার স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে সাক্ষাৎ ও ছবি তোলার সুযোগ পেয়ে যান জালাল। এরপর থেকে নিজেকে ‘আওয়ামী লীগ” নেতা পরিচয়ে নিজ ইউনিয়নে শুরু করেন গরুর ব্যবসা।

জালালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, অল্প দিনের মধ্যে গরু বিক্রি ও বিপুল পরিমাণ মুনাফা দেবান কথা বলে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন  বলেন, বছর ১৫ মার্চ কোতয়ালি থানার নাশকতা মামলায় রাউজান থানা পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেফতার হন জালাল। জালাল গ্রেফতারের খবরে আমি জালালের বাড়িতে যাই। সেসময় খামারে থাকা ৭টি গরু পাওনাদারেরা আমার হেফাজতে নিতে চাইলে বাঁধা দেন স্থানীয় আরেকদল গরু ব্যবসায়ী ও কতিপয় আওয়ামী লীগ নামধারীরা। তাদের দাবি এসব গরুতে জালালের নয়, এসব গরুতে নাকি বিনিয়োগ আছে আলম, রফিক ও সুমনের। উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সুমনের মতন প্রভাবশালীদের সংশ্লিষ্টতার কথা শুনে সেদিন জালালের খামার থেকে ফিরে আসি৷ ঠিক তার পরদিনই সবগুলো গরু জালালের খামার থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।”

শেষ পর্যন্ত নিজেদের অর্থের কোন কূলকিনারা করতে না পেরে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন রাউজানের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন ও ফটিকছড়ির বাসিন্দা মোকাররম হোসেন৷ নাসির উদ্দিন ও মোকাররক হোসেন উভয়ের অভিযোগ গরু ব্যবসার কথা বলে গত বছর কোরবানির ঈদের আগে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েছিলেন জালাল৷ কিন্তু কোরবানির ঈদের পর লাভ তো দূরের কথা আসল টাকা চাইলে গেলে  স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে জালাল।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সেই গরু ব্যবসায়ী রফিককে প্রশ্ন করা হলে তারা জালাল গ্রেফতারের পর ৭টি গরুর নাসিরকে নিতে বাঁধা দেন বলে স্বীকার করেন৷ তবে রফিক বলেন, “গরুর শেডটি জালালের হলেও সব গরু আমাদেরই ছিল। তাই আমরা কাউকে গরু নিতে দেইনি৷”

জালালের গরু ব্যবসায় কৃষক লীগ নেতা সুমনের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রফিক বলেন, জালালের সাথে নয় আমার সাথেই সুমনের সম্পর্ক আছে। সেই সম্পর্কের সূত্রেই আমি সুমনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গরু ব্যবসায় বিনিয়োগ করি।”

জালালের সেডে থাকা ৭টি গরু কিনতে সুমনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন বলে জানান রফিক।রাউজান উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েও জালালের সাথে ঘনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে জিয়াউল হক সুমন  বলেন, জালাল আমাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আসতো এবং বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছে।”

২০২৩ সালের জুন মাসে যে ছেলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর করে সেই ছেলে কীভাবে আওয়ামী লীগের আদর্শের হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, “ঘটনাটি জানার পর আমরাও বিস্মিত হয়েছি। যদি সে জড়িত থাকে তাহলে তার শাস্তি আমরাও চাই৷”

জালালের সাথে নিজের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি অস্বীকার করে সুমন বলেন,” দলের অনুষ্ঠানে এলে আমার সাথে ছবি তুলতেই পারে। এছাড়া তার সাথে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন সম্পর্ক ছিল না।”

জালালের সাথে জন্মদিনের কেক কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা জন্মদিন পালন করিনা৷ আমাদের নেতা ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশে আমরা জন্মদিন বা কেক কাটা থেকে বিরত থাকি।” প্রতিবেদকের হাতে জালালকে সাথে নিয়ে তার কেকসহ ছবির আছে বলা হলে তিনি ছবিটি এডিট করা হতে পারে বলে জানান। যদিও প্রতিবেদকের হাতে জালালের সাথে এই কৃষক লীগ নেতার একাধিক ছবি আছে। জালালের সাথে গরু ব্যবসা প্রসঙ্গটি একেবারেই সত্য নয় বলে জানান সুমন৷ সেই গরু ব্যবসায়ী রফিককে চেনেন বলে স্বীকার করলেও তার সাথে কোন প্রকার অর্থনৈতিক লেনদেন নেই বলেও জানান তিনি।

জিয়াউল হক সুমনের কাছে তার বড় ভাই হলদিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি জাহেদুল হক চৌধুরি নাছিম প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি সেটিও অসত্য বলে জানান। কমিটি অনুমোদনের যে কপিটি প্রচার হয়েছে সেটিও ফটোশপ বলে উড়িয়ে দেন ৷

জানতে চাইলে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শফিকুল ইসলাম  বলেন, “জালাল এলাকায় গরু বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সে গ্রেফতারের সময় তার ওখানে ৭টি গরু ছিল যা পরে রফিক, সুমনরা নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। সর্বশেষ নাশকতার মামলায় বর্তমানে সে জেলে আছে বলে জানি৷ জালাল পারিবারিক ভাবেই বিএনপি৷ তার এক বড় মো: সেলিম এক সময় সাকা চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ও এনডিপি’র রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ছিল। ক্ষমতার পট পরিবর্তনে সে দেশ ছেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করছে। আরেক ভাই মোঃ নেজাম বর্তমানে আবুধাবীর শাহামা এলাকায় বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক। আমি এই ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি৷ ১৫ বছর যাবৎ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম৷ বিগত ১৫ যাবৎ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করছি৷ সে যদি আওয়ামী রাজনীতি করতো তাহলে সবার আগে আমি জানতাম৷’

উপজেলা কৃষক লীগ নেতা জিয়াউল হক সুমন যে বলছেন জালাল আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতো এই প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর ইসলাম বলেন, “সুমন নিজেও তো আগে বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। তাদের আশকারা পেয়ে জালাল আজ অনেকের সাথে গরু ব্যবসার নামে প্রতারনা করার সাহস পেয়েছে। “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর