25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

রেলে বিলের টাকা হাওয়া

ভুয়া বিলে ৯৭ লাখ টাকা উত্তোলন

আরও পড়ুন

তানভীর আহমেদ, চট্টগ্রাম :::

চট্টগ্রামে রেলওয়ের এক ঠিকাদারের বিলের টাকা উত্তোলন করে লাপাত্তা একটি চক্র। হিসাব বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। আর্থিক অনিয়ম জানাজানি হবার পর  পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তার দফতর ৭ কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। পাশাপাশি রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনের পর কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

জানা যায় কোন ধরনের অথারাইজেশন ছাড়াই দ্যা কসমোপলিটন কর্পোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চেক তুলে নিয়ে নগদায়ন করা হয়েছে চট্টগ্রামের আগ্রবাদের একটি ব্যাংকে। রেলওয়ের ওই চেক নগদায়ন করতে খোলা হয়েছে নতুন একাউন্টও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার  বিল আগ্রাবাদের সীমান্ত ব্যাংক থেকে নগদায়ন করা হয়েছে। বিলটি উত্তোলন করেন সোহাগ আলী নামের এক ব্যক্তি।বাংলাদেশ রেল পূর্বাঞ্চলের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সাপ্লাইয়ার) ‘দ্যা কসমোপলিটন কর্পোরেশন’ ৩ কোটি ৬২ লাখ ৬১ হাজার টাকার কাজের বিলের অংশ হাওয়া করে দিয়েছে একটি চক্র। তাদের গত ১৮ ডিসেম্বর ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ১৯ ডিসেম্বর ৯০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা এবং ২০ ডিসেম্বর ৯৬ লাখ ৯০ হাজার ও ৭৭ লাখ ৫২ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। চেকগুলো নগদায়ন করা হয়েছিলো ২১ ডিসেম্বর। এসব চেকের নম্বর ছিল যথাক্রমে আরএ-১১৩৯৩০৪, ১১৩৯৩০৬, ১১৩৯৩০৫ এবং ১১৩৯৩০৭।

কিন্তু আরএ-১১৩৯০৮৫ নম্বরের আরেকটি চেক দিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি বিল আগ্রাবাদের সীমান্ত ব্যাংক থেকে নগদায়ন করা হয়। বিলটি উত্তোলন করেন সোহাগ আলী নামের এক ব্যক্তি। এই বিলটি নগদায়ন করার জন্য ওই ব্রাঞ্চে কসমোপলিটনের নামের একটি নতুন অ্যাকাউন্টও খোলা হয়। যেটিতে শুধুমাত্র ওই পঞ্চম চেকটি নগদায়ন করা হয়।

সাধারণত কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার কিংবা তার অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাজের বিপরীতে চেক তুলে নিতে পারে না। কোন কাজের বিল ছাড় করার বিষয়ে বেশ কড়াকড়িও রয়েছে। তবে নির্ধারিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া কিভাবে ভিন্ন ব্যক্তি রেলওয়ে থেকে চেক তুলে নিয়েছে সেই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ হিসাব বিভাগের কোন কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় সীমান্ত ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ওই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে গত বছরের শেষের দিকে। সেখানে প্রতিষ্ঠান হিসেবে কসমোপলিটন হলেও স্বত্বাধিকারী হিসেবে রয়েছে কোহিনূর নামের এক নারীর নাম। যার ঠিকানা দেখানো হয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়া।

কসমোপলিটনের মালিক  নাবিল আহসান বলেন, ‘সীমান্ত ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৯৭ লাখ টাকা উত্তোলন হয়েছে। তবে ওই ব্যাংকে আমার প্রতিষ্ঠানের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। এমনকি সোহাগ নামের কাউকেও আমি চিনি না।’

সুত্রমতে, প্রতারক চক্র ভুয়া বিল ও ভাউচারের মাধ্যমে এ টাকা আত্মসাৎ করেছে। আর এ কাজে রেলের হিসাব বিভাগ থেকে শুরু করে ব্যাংকের কর্মীরাও জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

রেলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দফতর জানায়, গত অর্থ বছরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কসমোপলিটনের থেকে বেশ কিছু চুক্তির মাধ্যমে মালামাল ক্রয় করা হয়। এরমধ্যে চারটি কাজের বিল বাবদ ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা কসমোপলিটনকে পরিশোধ করতে হিসাব দফতরকে চিঠি দেন প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ উদ্দীন। সেই টাকা উত্তোলনও করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
তবে বিপত্তি বাধে যখন দেখা যায়, ৩ কোটি ৬২ লাখের বাইরে আরও ৯৭ লাখ টাকা বিল নিয়েছে কসমোপলিটন।

তবে এ বিষয়ে কিছু জানে না কসমোপলিটনের স্বত্বাধিকারী নাবিল আহসান। তিনি  বলেন, ‘প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের বরাদ্দ করা ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা উত্তোলন করেছি। তবে আর কোনো টাকার বিষয়ে আমার জানা নেই।’

তিনি অভিযোগ করেন, রেলের হিসাব শাখার সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় তার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ৯৭ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়ে থাকতে পারে। আমার অফিস ঢাকার ইস্কাটনে। আর আমিই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।’

প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের বিষয়ে পূর্বাঞ্চল রেলের অতিরিক্ত হিসাব কর্মকর্তা সাইদুর রহমান খান বলেন, রেলের হিসাব বিভাগের কর্মী ছাড়াও ব্যাংকটির কর্মকর্তাদেরও সহযোগিতা থাকতে পারে। এজন্য ব্যাংকের লেনদেন সম্পর্কে জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে কসমোপলিটনের কোন কোন পণ্যের বিপরীতে ৯৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি রেলওয়ের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তারা।

পণ্য বা সেবা না নিয়েও কীভাবে ৯৭ লাখ টাকা দেয়া হলো, জানতে চাইলে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ উদ্দীন  বলেন, ‘আমার দফতর থেকে ৯৭ লাখ টাকার মালামাল গ্রহণের কোনো কাজগপত্র হিসাব দফতরে পাঠানো হয়নি। পরে হিসাব শাখা থেকে একই প্রতিষ্ঠানের নাম সংযোজন করে টাকা দেয়া হয়েছে।’

ফরিদ উদ্দীনের অভিযোগ, হিসাব শাখার দফতরগুলোর যোগসাজশে সরকারি টাকা লোপাট করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিল আইবাস সিস্টেমে এন্ট্রি করা থেকে চেক ইস্যু করা পর্যন্ত কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয় এবং পণ্য সরবরাহের আদেশ, পণ্যের চালানসহ বেশ কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। এর কোনোটি ছাড়া বিল পরিশোধ সম্ভব নয়।’

এদিকে ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত হিসাব কর্মকর্তা সাইদুর রহমান খান বলেন, প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব কর্মকর্তা রফিকুল বারী খানের দফতরের অস্থায়ী অপারেটর হাবীবুল্লাহ খান হাবিবের প্রতি সন্দেহের তীর। ধারণা করা হচ্ছে হাবীবই সমস্ত ডকুমেন্ট বিল পাসের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ঢুকে এন্ট্রি দিয়েছেন।’

এইবাংলা / তুহিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর