24.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

ভূমিহীনদের মুখে হাসি ফুটালেন শেখ হাসিনা

আরও পড়ুন

মোহাম্মদ পারভেজ

  • প্রকল্পের আওতায় ৪২ লাখ ৮০ হাজার ১১৫ জন
  • বিএনপি আমলে পুনর্বাসন খাত ছিল শূন্য 

দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করে বিশ্বে নজিরবিহীন আলোচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন। দেশে অন্যান্য সময় সরকার পরিবর্তন হলেও এ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছিল। শেখ হাসিনা সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় আলোর মুখ দেখে এই প্রকল্প। ২০২৩ সালে সরকার এই প্রকল্পের আওতায় এনেছে প্রায় ৪২ লাখ ৮০ হাজার ১১৫ জন উপকারভোগীকে। এতে জড়িত ৮ লাখ ৪১ হাজার ৬২৩ পরিবার।

বাংলাদেশের জন্য ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল ছিল একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। ২০০৮ সালের পর দেশের চিত্র দিনে দিনে বদলে যেতে থাকে। দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ এমনকি বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে নিজের অবস্থানের কথা জানান দিয়েছে। যা বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসন কর্মসূচি খাতের কোনো আলোর মুখ দেখেনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সুযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনার সরকার। বিচক্ষণ কৌশল অবলম্বনে তিনি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত দেশ। গত দেড় দশকে বাংলাদেশ বিস্ময়কর অগ্রগতির ফলে বিশ্ব সভায় বিভিন্ন আর্থ সামাজিক সূচকে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন ও অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রী ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল’ সামনে এনে পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষকে মূলধারায় আনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন এবং একই বছর তিনি সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন “আশ্রয়ণ প্রকল্প”। এ প্রকল্পে দারিদ্র্যমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রতি ছিন্নমূল পরিবার পেয়েছেন দুই শতাংশ জমি। বিনামূল্যে পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগসহ দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর।

‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের উদ্যোগে আওয়ামী লীগ সরকার ৮ লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে বাড়ি ও জমি দিয়ে গৃহহীনমুক্ত করেছেন। এ বাড়ি এবং ভূমি স্বামী-স্ত্রীর নামে দলিল করে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা এক অধিবেশনে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত করা।’

২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত জোটের আমলে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত পরিবারের জন্য পুনর্বাসন খাত ছিল শূন্য। বর্তমান ২০২৩ আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৪২ লাখ ৮০ হাজার ১১৫ জন উপকারভোগী এবং ৮ লাখ ৪১ হাজার ৬২৩ টি পরিবারকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং থানা পর্যায়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে বাড়ি ও জমি বিতরণের ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশ্বে একটি অনন্য প্রকল্প, কারণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে এতো বিপুল সংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়ি বিতরণ করা হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ইতোমধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বেশকিছু কর্মসূচির অধীনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সকলের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই হবে আমাদের লক্ষ্য, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন-যাপন করতে পারে। দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারার চেয়ে বড় কোনো উৎসব আর হতে পারে না। গৃহহীনদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া হবে যাতে দেশের একটি লোকও গৃহহীন না থাকে। যাতে তারা উন্নত জীবন-যাপন করতে পারে। আমরা সে ব্যবস্থা করে দেবো। যাদের থাকার ঘর নেই, ঠিকানা নেই আমরা তাদের যেভাবেই হোক একটা ঠিকানা করে দেব।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ের বরাদ্দকৃত মুজিববর্ষের একক ঘরের উপকারভোগী জেলার তালিকা

১ম পর্যায়ে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত জমির পরিমাণ:

ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ১৪৭ শতক, মুন্সিগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৫২৪ শতক, মানিকগঞ্জ জেলায় ৩শ ৮৪ শতক, নরসিংদীতে ৬৬৩ শতক, মাদারীপুরে ২ হাজার ৯৬৪ শতক, গাজীপুরে ৬ হাজার ৩০ শতক, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২ হাজার এক শতক, শরীয়তপুরে ২ হাজার ৯৭ শতক, রাজবাড়িতে ২ হাজার ২৮০ শতক, চট্টগ্রাম জেলায় ৭১৪ শতক, কক্সবাজারে ৯০৯ শতক, বান্দরবানে ৩ হাজার ৭১৭ শতক, চাঁদপুরে ৩৪৫ শতক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ হাজার ২৭‌৩ শতক, রাঙ্গামাটিতে ১ হাজার ১২৮ শতক, লক্ষ্মীপুরে ৬০০ শতক, নোয়াখালী জেলায় ৪৫০ শতক, ফেনী জেলায় ২১০ শতক, খাগড়াছড়ি সদরে ৫৮৫ শতক।

কুমিল্লায় ৩৮৭ শতক, সিলেটে ৪ হাজার ৮৯৯ শতক, হবিগঞ্জ জেলায় ২ হাজার ১৩৬, সুনামগঞ্জ জেলায় ২ হাজার ১২১ শতক, মৌলভীবাজারে ২ হাজার ১০ শতক, শেরপুরে ৬০৩ শতক, জামালপুরে ৪ হাজার ৪৩৭ শতক, নেত্রকোণায় ২ হাজার ৮৮০ শতক, রাজশাহীতে ২ হাজার ১২৪ শতক, জয়পুরহাটে ৪৮০ শতক, সিরাজগঞ্জ জেলায় ৪ হাজার ৭৭৬ শতক, বগুড়ায় ৪ হাজার ৩৫৬, পাবনায় ৩ হাজার ২৫৮ শতক, নওগাঁ ৩ হাজার ১৭৬ শতক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৩০৩ শতক, নাটোরে ১ হাজার ৫৪২ শতক।

বরিশালে ২ হাজার ৮৮৯ শতক, ঝালকাঠিতে ১ হাজার ৪২২ শতক, পটুয়াখালীতে ৫ হাজার ৬৭৬ শতক, বরগুনায় ৬৯৬ শতক, পিরোজপুরে ১ হাজার ১২৫ শতক, ভোলায় ১ হাজার ৫৬০ শতক, রংপুরে ৩ হাজার ৩৬৯ শতক, গাইবান্ধায় ২ হাজার ৫৪৭ শতক, পঞ্চগড় জেলায় ৩ হাজার ১৭১ শতক, ঠাকুরগাঁও জেলায় ২ হাজার ৩৬৭ শতক, লালমনিরহাটে ২ হাজার ৭৭২ শতক, দিনাজপুরে ১৪ হাজার ২৭৩ শতক, নীলফামারীতে ১ হাজার ৯১১ শতক, কুড়িগ্রামে ৪ হাজার ৬৪৪ শতক, খুলনায় ২ হাজার ৭৬৩ শতক, যশোরে ১ হাজার ৯৭৮ শতক।

মাগুরায় ৩৪৫ শতক, নড়াইলে ৩১৫ শতক, ঝিনাইদহে ৭১১ শতক, বাগেরহাটে ১ হাজার ৩০৫ শতক, মেহেরপুরে ৫১ শতক, সাতক্ষীরা জেলায় ১ হাজার ৭৪০ শতক, কুষ্টিয়ায় ৪৭১ শতক, চুয়াডাঙ্গায় ৪০২ শতক।

মুন্সিগঞ্জ জেলায় ৯৭৫ শতক, মানিকগঞ্জ জেলায় ৭৬৫ শতক, নরসিংদী জেলায় ১৮৬ শতক, কিশোরগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ১১৯ শতক, মাদারীপুরে ৫১০ শতক, গাজীপুরে ৬০৬ শতক, টাঙ্গাইলে ৩ হাজার ৩৯০ শতক, গোপালগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৩১৮ শতক, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৩২৭ শতক, ফরিদপুরে ৪ হাজার ৭১৬ শতক, শরীয়তপুরে ১ হাজার ৮১৮ শতক, রাজবাড়িতে ১ হাজার ২২১ শতক, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৮৭ শতক, কক্সবাজারে ২ হাজার ৯১৯ শতক, বান্দরবানে ১ হাজার ৬৯২ শতক।

চাঁদপুর জেলায় ৩০৯ শতক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮ হাজার ৯৮৭ শতক, রাঙ্গামাটিতে ১ হাজার ৫০৯ শতক, লক্ষ্মীপুরে ১ হাজার ৮৯০ শতক, নোয়াখালীতে ২ হাজার ২৭৭ শতক, ফেনীতে ৫১৬ শতক, খাগড়াছড়ি জেলায় ২ হাজার ১শ শতক, কুমিল্লায় ২ হাজার ৪১৮ শতক, হবিগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৬৫ শতক, সুনামগঞ্জ জেলায় ৫৯৫ শতক, মৌলভীবাজারে ২ হাজার ৪৪২ শতক, শেরপুরে ৫০১ শতক, জামালপুরে ২ হাজার ৩২৫ শতক, নেত্রকোণায় ২ হাজার ১৬৬ শতক, নওগাঁয় ১৭ শতক, রাজশাহী জেলায় ৮৭ শতক, বগুড়ায় ১৯৯ শতক, নাটোরে ৩০১ শতক, জয়পুরহাটে ১ হাজার ৩৬৫ শতক, সিরাজগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ শতক, বগুড়ায় ২ হাজার ২৭১ শতক।

পাবনায় ৯৫১ শতক, নওগাঁয় ১ হাজার ৫০৯ শতক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ১৭ শতক, পাবনায় ১০৭ শতক, সিরাজগঞ্জ জেলায় ১৭৩ শতক, জয়পুরহাটে ২১৫ শতক, নাটোরে ৪ হাজার ১৪৩ শতক, ঝালকাঠিতে ১ হাজার ৪১৬ শতক, বরগুনায় ৬ হাজার ১২ শতক, ভোলায় ১ হাজার ১১৩ শতক, গাইবান্ধায় ২ হাজার ৯৭ শতক, পঞ্চগড়ে ২ হাজার ৯১৯ শতক, ঠাকুরগাঁও জেলায় ২ হাজার ৩৬৭ শতক, লালমনিরহাটে ১ হাজার ৩৯৫ শতক, দিনাজপুরে ৮ হাজার ৯৫৫ শতক, নীলফামারীতে ২ হাজার ৬৯১ শতক, কুড়িগ্রামে ১৭ শতক, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১২ শতক, লালমনিরহাট জেলায় ২২৯ শতক, খুলনা জেলায় ৩ হাজার ৯৯৩ শতক, যশোরে ৩৬ শতক, মাগুরায় ৫৮৫ শতক, নড়াইলে ১৭ শতক, মেহেরপুরে ৩৯ শতক, মাগুরায় ৫৫ শতক, খুলনায় ৮৫ শতক, কুষ্টিয়ায় ২৫৯ শতক, ঝিনাইদহ জেলায় ২৮৩ শতক, যশোরে ৩১৩ শতক, চুয়াডাঙ্গায় ৩১৭ শতক, বাগেরহাটে ৩৪৩ শতক, মেহেরপুরে ৩০৩ শতক, কুষ্টিয়ায় ৪৯৫ শতক, চুয়াডাঙ্গায় ৫২৫ শতক।

এই বাংলা/এমপি

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর