28.2 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

জমে উঠছে কেশবপুরের মধুমেলা

আরও পড়ুন

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি

কেশবপুরে সাগরদাঁড়িরত মধুমেলায় অষ্টম দিনে স্বরণ কালের জনসমাগম। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে মধুমেলার মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লক্ষ দর্শনার্থীদের পদচারণায় আনন্দ উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে উঠেছে মেলার মাঠ।

এদিকে জেলা প্রশাসকের আয়োজনে মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদার সভাপতিত্বে মধুমেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন থেকেই প্রতিদিনই বিকাল ৩টা থেকে মধুমঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলোচনা সভা। মধুসূদনের সৃষ্টি, সাহিত্য ও কর্মজীবনের উপর বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিচ্ছন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, দেশের খ্যাতিনামা কবি,সাহিত্যিক, প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিগন, সাংবাদিকবৃন্দ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। আলোচনা সভা শেষে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিভিন্ন দলগত সংগীতানুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের খ্যাতিমান কণ্ঠ শিল্পীরা এখানে সংগীত পরিবেশন করছেন। প্রতিবারের ন্যায় মেলায় আগতদের মাঝে মেলা আকর্ষণীয় করে তুলতে মেলার উন্মুক্ত মঞ্চে যাত্রা, সার্কাস , ইজ্ঞিন ট্রেন, মৃত্যুকুপ, নাগোরদোলা, প্রদর্শন জাদুঘরদর্শনীর ব্যবস্হা রয়েছে। এছাড়া মেলার মাঠে বসেছে নানা ধরনের আকর্ষনীয় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

এবার মধু জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা অশ্লীলতামুক্ত হচ্ছে। দিন দিন মধুমেলার মাঠে অনুপ্রাণিত হবেন লাখো মধুভক্তরা।সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদের পাড়ে এ মেলা এখন এ অঞ্চলের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত শুক্রবার ১৯ জানুয়ারি থেকে যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে শুরু হয়েছে ৯ দিনব্যাপী মধুমেলা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিন ২৫ জানুয়ারি। তবে এ জন্মদিনকে ঘিরে উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায় আগে ভাগেই। অন্যান্য বছর সাতদিন মেলার আয়োজন করা হলেও এ বছর ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আরও দুই দিন বৃদ্ধি করে ৯ দিনব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করেছেন কমিটি। প্রথমদিন থেকেই মেলার মাঠে ভিড় করতে শুরু করেছে স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা।

লিলিকা সরকার ও বিথিকা সরকার নামে আরও দুই জন দর্শনার্থী বলেন, আমরা সাতক্ষীরা থেকে এসেছি। আসতে কষ্ট হলেও এখানে এসে সে কষ্টটা ভুলে গেছি। বাচ্চারা নাগরদোলায় চড়ছে, সার্কাস দেখছে, আমাদেরও অনেক ভালো লাগছে। মধুমেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলা জুড়ে ৩৫১টি ছোটবড় স্টল রয়েছে। এ সব স্টলের মধ্যে রয়েছে খাবারের দোকান, কসমেটিকস, শিশুদের খেলনার দোকান, বাহারি মিষ্টির দোকান ইত্যাদি।

এ বছর মেলা দুই দিন বৃদ্ধি করায় ভালো বেচাকেনা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। মধুমেলায় কসমেটিকস্ এর প্রসাধনীর স্টল দিয়েছেন কুষ্টিয়ার জসীম হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছরই দোকান দেই। আমরা তো বড় বড় মেলাগুলোকে টার্গেট করি বড় অংকের বেচাকেনার জন্য। এবছর মধুমেলা জমজমার হচ্ছে, এখন পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।

আব্দুল খালেক ও দেলোয়ার হোসেন নামে দুই ব্যবসায়ী বলেন, বিনোদন কেন্দ্র আর আমাদের মতো কসমেটিকসের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় বেশি। এবার মেলা দুই দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এজন্য আমরা লাভের আশাও ভালো করছি।

মধুকবির ২০০তম জন্মবার্ষিকীতে নানা দাবি তুলেছেন এখানকার সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তাদের প্রধান দাবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র স্মৃতিবিজড়িত জন্মস্থানে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক।

কেশবপুর উপজেলা নাগরিক সমাজের আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রাণের দাবি মধুকবির এই স্মৃতি বিজড়িত জন্মস্থানে সাগরদাঁড়িতে তার নামে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক। বাংলা সাহিত্যে মাইকেল প্রাসঙ্গিক। আমরা চাই এই প্রাসঙ্গিকতাকে শুধু সাগরদাঁড়িতে আটকে না রেখে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে।মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য এমএ হালিম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই সাগরদাঁড়িতে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করে আসছি। এবছরও আমরা একই দাবিটি তুলে ধরছি। এছাড়া সাগরদাঁড়ির সঙ্গে সাতক্ষীরার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কপোতাক্ষ নদের উপর বাশেঁর সাকোটি সেতুতে রুপান্তর করার দাবি জানাচ্ছি।১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়ি গ্রামে এক জমিদার বংশে মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও প্রথম সার্থক নাট্যকার, বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলা সনেট আর আধুনিক মহাকাব্যেরও জনক।

কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহিরুল আলম বলেন, অতীতের ন্যায় ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মধুমেলা।এ মেলাকে নিয়ে কোন বির্তকের সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। যে কোন উপায়ে মেলার সুশৃংঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর।

মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তুহিন হোসেন বলেন, ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মধুমেলা।মেলায় মধুভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও পাশাপাশি ডিবি, জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সাথে প্রয়োজন মতো সাদা পোশাকে পুলিশ ও র‌্যাব-৬ বলবৎ রয়েছে।এছাড়া মাঠে একাধিক নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ভাবে শতাধিক যুবকদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেচ্ছাসেবক বাহিনী।

এই বাংলা/এমপি

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর