25.6 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

বিএনপি নেই তবুও সংঘাত নির্বাচনের মাঠে

আরও পড়ুন

বিশেষ প্রতিনিধি :::

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে সারা দেশে নির্বাচনী সংঘাত বাড়ছে। নির্বাচন নিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে পেশী শক্তি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরাই এমন সংঘাতে জড়াচ্ছে। কোথাও কোথাও নৌকার সমর্থকদের প্রহৃত হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪টি আসনের ৪৬ টি জায়গায় নতুন করে নির্বাচনী সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল শনিবারের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।

এরমধ্যে মাদারীপুরে গতকাল শনিবার একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জেলার  কালকিনিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা সিদ্দিকীর কর্মী এসকান্দার খাঁ (৬৫)কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে নৌকা সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ফজরের নামাজ শেষে বাড়ির পথে হাঁটছিলেন ওই ব্যক্তি। এ সময় নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান গোলাপের সমর্থকরা এসকান্দারকে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত এসকান্দার খাঁ’কে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা সিদ্দিকী নিজের কর্মী বলে দাবি করেছেন। মুন্সিগঞ্জে এক কর্মীর বাড়িতে গিয়ে গুলির ঘটনা ঘটেছে।

সব মিলিয়ে গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৯টি আসনের ১০ জায়গায় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত ১১টি আসনের ১৫টি জায়গায় সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অন্তত ৩০ জন।

কোথাও মারামারি হয়েছে, কোথাও প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে, কোথাও কোথাও প্রতিপক্ষের সভায় হামলা, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনের পথসভায় গতকাল পাঁচটি জায়গায় হামলা হয়েছে।নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর পাঁচ দিনে এ নিয়ে ৩৬টি সংঘাতের ঘটনা ঘটল। আগের মতো নতুন ঘটনায়ও হামলা ও মারধরের শিকার বেশি হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা।

এবারের নির্বাচনে প্রচার শুরু হয় ১৮ ডিসেম্বর থেকে। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে ২৬৪টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতারা, যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বাকিগুলোতে নৌকার প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ২৬ ও জোট শরিকদের ৬টি আসন ছেড়েছে। নির্বাচনী প্রচারকালে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে মূলত নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসুল আলমের সমর্থকদের হাতে প্রহৃত  হয়েছেন যুবলীগ নেতা তৌহিদ। নৌকার পোস্টার লাগাতে গেলে তাকে মারধর করে বর্তমান সাংসদ সামশুল আলমের সমর্থকরা।এছাড়া,  চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায় নৌকার সমর্থকদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের লোকজন৷

চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটি সংসদীয় আসনের দিকে কড়া দৃষ্টি রাখছেন প্রশাসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের পর থেকেই চট্টগ্রামে বিশেষ করে পটিয়া, সাতকানিয়া–লোহাগাড়া ও বাঁশখালী আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে দফায়– দফায় সংঘর্ষ–ভাঙচুরের ঘটনায় নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সহিংস হয়ে উঠছে এই তিন সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী পরিবেশ। এই তিন আসনে দিনদিন নির্বাচনী সহিংসতা বাড়ছে। পুলিশসহ নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি এই ব্যাপারে কড়া নজর রাখছেন।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ  বলেন,  ‘প্রতিটি সংসদীয় আসন ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া আছে। তবে বিশেষ করে পটিয়া, সাতকানিয়া লোহাগাড়া এবং বাঁশখালীর দিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি রাখছি। এর মধ্যে এই তিনটি আসনে কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর ব্যাপারে মামলা হয়েছে। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। পটিয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। সাতকানিয়ার ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। আসামিও গ্রেপ্তার করেছি। ‘

ভোটের প্রচার ঘিরে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় ‘নির্লিপ্ততা ও দায়িত্বে অবহেলার’ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঝিনাইদহর শৈলকূপা ও হরিনাকুণ্ডু থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ডিসি ও এসপির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন এ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

প্রতিটি ঘটনায়  আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের দায়ী করেছেন। ভোটের আরো দুই সপ্তাহের বেশি সময় বাকি। প্রচারের শেষ পর্যায়ে উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিভিন্ন আসনে পূর্বশত্রুতা ও রেষারেষির ফলে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই তর্কযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন প্রার্থীরা। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পরে নির্বাচনী উত্তাপ রূপ নিয়েছে সংঘাত ও সংঘর্ষে। দেশব্যাপী প্রায় শত আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মী-সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।

দলের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের আগেই একাধিক প্রার্থীর মধ্য বিভাজন তৈরি হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্যের সঙ্গে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিরোধ ও নিজস্ব বলয় তৈরিকে কেন্দ্র করে বিভক্তি তৈরি হয়। কোথাও কোথাও প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে যে শীতল সম্পর্ক ছিল, তা নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রকট হয়ে উঠেছে। উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে থাকায় সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও সংঘর্ষও হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনে অভিযোগের পাল্লা ভারী হচ্ছে। নির্বাচনের প্রচার শুরু হয় ১৮ ডিসেম্বর। সেদিন থেকে শনিবার (২৩ ডিসেম্বর)  পর্যন্ত ছয় দিনে ৪৬টি জায়গায় সংঘাতের ঘটনা ঘটল। মৃত্যু হয়েছে  একজনের। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে কমিশনের নির্লিপ্ততা আতংক ছড়াচ্ছে নির্বাচনের মাঠে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর