25.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

নড়াইলে কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের অনিয়ম-দূর্নীতি অপসারণ দাবি

আরও পড়ুন

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমান বিরুদ্ধে একের পর এক বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

গত জানুয়ারী মাসে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিল্পীদের সম্মানী ভাতা,যাতায়াত ভাড়া, বিচারকদের সম্মানী যথার্থ না দেওয়া, শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক-কর্মচারিসহ অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

গত ৩ ডিসেম্বর গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পী,কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্টদের এখনও পর্যন্ত কোনো সম্মানি দেয়নি।

অথচ এ অনুষ্ঠানের টাকা আগেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের টাকা একইভাবে আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে।

এসব অনিয়ম-দূর্নীতির ঘটনায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রাশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছে এ ঘটনার তদন্তপূর্বক জেলা কালচারাল অফিসারের অপসারণ দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে সারা দেশের মতো নড়াইলেও গণজাগরণের সাংস্কৃতিক-২০২৩ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সাংস্কৃতিক উৎসবে ব্যয় বিভাজন হিসেবে গত ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেখা গেছে, ৫টি সংগীত সংগঠন,৩টি নৃত্যের সংগঠন ও ২টি আবৃত্তি সংগঠনের সম্মানি হিসেবে প্রত্যেক ১০ হাজার টাকা করে ১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে।

৫ জন যন্ত্রশিল্পীকে ৪ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, একক সংগীত শিল্পী (সিনিয়র) ৫জনকে ১৫ হাজার টাকা, একক সংগীত শিল্পী (জুনিয়র) ৫জনকে ১০ হাজার টাকা, একক নৃত্য শিল্পী ৩জনকে ৬ হাজার টাকা।

কবিতা আবৃত্তিতে ৩জনকে ৬ হাজার টাকা, একক আবৃত্তি শিল্পী ২জনকে ৪ হাজার টাকা এবং উপস্থাপকের সম্মানী হিসেবে ৪ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। এছাড়া ব্যানার, সাজসজ্জা, ডকুমেন্টেশন, প্রচার ও উৎসব সমন্বয়কারীর সম্মানী হিসেবে আরো ৩৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও যন্ত্রশিল্পী,উপস্থাপকসহ মোট ৪১জনের কাওকে এ নিউজ লেখা পর্যন্ত একটি টাকাও দেয়া হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পকলা একাডেমির একাধিক শিক্ষক এবং শিল্পী অভিযোগে জানান,। উৎসবে ১০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করার কথা।

তবে জেলা কালচারাল অফিসার নিজের ইচ্ছে মতো শিল্পকলা একাডেমির সংগীত,নৃত্য ও আবৃত্তি শিল্পীদের ৭টি গ্রুপে বিভক্ত করে এবং বাইরে থেকে ৩টি সংগঠন এনে অনুষ্ঠান করলেও কাউকে সম্মানী দেননি।

শুধু তাই নয় শিল্পকলা একাডেমীতে সংগীতের বিভিন্ন শাখায় যেসব শিশু শিক্ষা গ্রহন করে থাকে ক্লাস ও পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তাদের সাথে এবং তাদের অভিভাবকদের সাথেও অকারণে তিনি অসদাচারণ করে থাকে।

এ বিষয়ে সংগীত শিল্পী পূর্বা সোম, পিংকী সাহা,পমা সোম,অথই সোম, মেঘা সোমসহ একাধিক শিল্পী জানান,তারা অনুষ্ঠানের পর তাদের কোনো সম্মানী দেওয়া হয়নি।

অনুষ্ঠানে গান গাওয়া বাংলা বাউল দলের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা ৫জন শিল্পী এসেছিলাম। সবার কাছ থেকে স্বাক্ষর রাখে এবং অনুষ্ঠান শেষ করে আসার সময় আমার হাতে জেলা কালচারাল অফিসার ২ হাজার টাকা দেয়।

আশামনি সংগীত একাডেমীর আশামনি বলেন, তার শিল্পীরা অনুষ্ঠান করলেও কালচারাল অফিসার এখনও কোনো সম্মানী দেয়নি।

এর আগে গত ৫জুন নড়াইল শিল্পকলা একাডেমীতে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ২লাখ টাকা। এ অনুষ্ঠানে সংগীত,নৃত্য, আবৃত্তি ও একক অভিনয়ে ২১জন বিচারক রাখার কথা থাকলেও রাখা হয় ১০জনকে।

প্রত্যেক বিচারকের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার টাকা থাকলেও ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়। জেলা পর্যায়ে বিজয়ী হয়ে জাতীয় পর্যায়ে মোট ২১জনের ঢাকায় যাওয়ার কথা। এখানে প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ২৭শ টাকা করে।

সম্প্রতি জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে সাউন্ড, ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সাউন্ড এবং ইলেকট্রিক-এর কাজে খাতা-কলমে টেন্ডার দেখিয়ে মূলত নিজেই কাজ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাউন্ড এবং ইলেকট্রনিক্স ও ডেকোরেশন ব্যবসায়ী এ প্রতিনধিকে জানান, তারা অডিটোরিয়ামের কাজ না করলেও তাদের কাছ থেকে জেলা কালচারাল অফিসার দোকানের ফাঁকা ভাউচার নিয়ে গেছেন।

শিল্পকলা একাডেমীর তৎকালীন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ শিমুল শেখ অভিযোগে জানান, গত জুলাই মাসে নড়াইলে চাকরি করাকালীন সময়ে তার (কালচারাল অফিসার) অনিয়ম-দূর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় আমার কাছ থেকে ৬টি কাগজে জোরপূর্বক সই করিয়ে রাখে।

এর পর আগস্ট মাসে আমাকে পথের কাঁটা ভেবে মেহেরপুর বদলি করা হয়।

উল্লেখ্য, গত প্রায় দেড় বছর আগে সংস্কৃতির জেলা ময়মনসিংহে জেলা কালচারাল অফিসার থাকা অবস্থায় ব্যাপক দূর্নীতির কারণে তাকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় বদলি করা হয়।

এ নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক লেখালেখি হয়।

এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের সভাপতি মলয় কুমার কুন্ডু বলেন, গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে ১০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে নড়াইলের উল্লেখযোগ্য কোনো সংগঠনকে এ বিষয়টি অবহিত করেননি।

এছাড়া শিল্পী ও কলাকুশলী ৪১জনের কাওকে কোনো সম্মানি দেননি। বর্তমান কালচারাল অফিসার একের পর এক বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি করে যাচ্ছেন।

আমরা তার এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির তদন্তপূর্বক অপসারণ দাবি করছি। না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমান বলেন, সবাইকে অর্থ দেয়া হবে। নড়াইলের ১০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিয়ে উৎসব করেছেন কিনা এ প্রশ্ন করলে তার সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, এ অভিযোগের ভিত্তিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর