সানাউল্লাহ রেজা শাদ, বরগুনাঃ
একটা সময় ছিলো যখন বরগুনার মানুষকে পান খেতে হলে অন্য জেলার উপর নির্ভর করতে হতো। সাতক্ষীরা, পিরোজপুর কিংবা রাজশাহীর পানের অপেক্ষায় থাকতো উপকূলীয় মানুষ। উপকূলের মাটি ও পানি পান চাষের অনুকূলে হওয়ায় পরবর্তীতে বরগুনার চাষীরা পান চাষ শুরু করলে ফলনও পেতে শুরু করে ব্যাপক। কিন্তু পান দ্রুত পচনশীল পন্য হওয়ায় বরগুনার অনুন্নত যোগাযোগের কারণে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্যই পানের সীমাবদ্ধ উৎপাদন হতো। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়া রাজধানীর সাথে যোগাযোগে সময়ের দূরত্ব কমে যাওয়া পান চাষীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় পান চাষ শুরু করেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর বরগুনার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে ৪১১২ টি বরজে দেশি পান, বাংলা পান, শাহী পান ও মহানলী পানের উৎপাদন হয় ২০২০ মেট্রিকটন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা।
এদিকে, পান বিক্রি জন্য আলাদা আলাদা হাট বসছে বরগুনায়। ফজরে আজান থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত বরগুনা সদরের পৌর মার্কেটের সামনে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার বসে পানের পাইকারি হাট, সপ্তাহে রবি ও বুধবার বিকেলে আমার পিছনে যে বেচাকেনা দেখছেন এভাবেই চলতে থাকে বেচাকেনা। এই বাজারে ৬৪ বিরা বা ১ আকার ও জাত ভেদে ৮০০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব পাইকারি হাটে সপ্তাহে দুদিনেই বিক্রি হয় ৭-১০ লাখ টাকার পান।
এছাড়া জেলার সদর সহ অন্যন্য উপজেলায় বাজারে নিয়মিত পান বেচাকেনা হয়।
স্থানীয় পান চাষী সুধীর চন্দ্র বলেন — সরকার থেকে যদি চাষীদের সার ও কীটনাশকের কিছুটা অংশের যোগান দেওয়া হতো, তাহলে পানের উৎপাদন আরো বাড়তো এবং এই পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যেতো।
গীতা রানী বলেন — গত কয়েক বছর যাবত পান চাষ করে আগের থেকে মোটামুটি আমার সংসার ভালো চলছে ।আমার তিন ছেলে মেয়ে স্কূলে পড়াচ্ছি । এখন যদি সরকার আমাদের সার ঔষধের কাছুটা অংশ দেয় তাহলে আমাদের আরেকটু ভালো হতো।
সমীর কুমার বলেন — সৃষ্টি কর্তার কৃপায় এই পান চাষ করে ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালো আছি। পদ্মা সেতু হওয়ার পর আগের থেকে পানের চাহিদা বেড়েছে। যেহেতু বরগুনা উপকূলীয় জেলা প্রতি বছর ঝড় বন্যা হয়েই থাকে তাই সরকার থেকে যদি কিছু সার ঔষধের ব্যাবস্থা করে দিতো তাহলে ভালো হতো ।
সর্বোপরি মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবি আলাওল যেমন লিখেছিলেন তাম্বূল রাতুল হইলো অধর পরশে, অর্থাৎ ঠোঁটের স্পর্শে পান যেমন লাল হলো আর এদিকে পানের স্পর্শে উপকূলীয় চাষীদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দরুণ জীবনমান রঙিন হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা এর উপ পরিচালক ড.আবু সৈয়দ মোঃ জোবায়দুল আলম বলেন — উপকূলের মাটি ও পানি পান চাষের অনুকূলে হওয়ায় বরগুনায় বর্তমানে পান চাষীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় পান চাষ শুরু করেছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পান চাষীদের নিয়মিত দেখভাল আর পরামর্শ প্রদান করায় চাষিরা সাফল্যেও মুখ দেখছে। পানের চাহিদা থাকায় আমরা পান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। পান চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছে।
এইবাংলা /নাদিরা শিমু/Ns